কক্সবাজার যাওয়ার কারণে দলের পক্ষ থেকে যে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে এবার তার জবাব দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার দিকে নিজের ফেসবুক পাতায় দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের কাছে পাঠানো শোকজের ব্যাখ্যা জনসম্মুখে পোস্ট করেন তিনি।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, “ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়। কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।”
পোস্টের শুরুর দিকে তিনি লেখেন, গত পাঁচই অগাস্ট তার কোনও পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না এবং দল থেকেও তাকে এ সংক্রান্ত কোনও দায়িত্ব বা কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়নি।
এরপর তিনি বলেন যে গত চৌঠা অগাস্ট রাতে “দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ তার কোচিং অফিসের সহকর্মীর ফোন ব্যবহার করে আমাকে জানায় যে সে তার স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ঘুরতে যাবে। আমি তাকে আহ্বায়ক (নাহিদ ইসলাম) মহোদয়কে অবহিত করতে বলি এবং সে জানায় যে বিষয়টি জানাবে এবং আমাকেও জানাতে বলে, যেহেতু তার নিজস্ব ফোন পদযাত্রায় চুরি হয়ে গিয়েছিলো।”
পাটওয়ারীর দাবি, ওই রাতেই তিনি নাহিদ ইসলামের সাথে দেখা করে বিষয়টি জানান।
“একই রাতে আমি সদস্য সচিব (আখতার হোসেন) মহোদয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি এবং জানতে পারি যে, রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে দল থেকে তিনজন প্রতিনিধি যাচ্ছেন এবং সেখানে আমার কোনও কাজ নাই। কোনও দায়িত্বে না থাকায় এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমি ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।”
তার সফরসঙ্গী হিসেবে সস্ত্রীক এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহও যুক্ত হন।
পাটওয়ারী তার ঘুরতে যাওয়ার কারণ হিসেবে লিখেন, “এই ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করা। সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে।”
ওই ব্যাখ্যায় তিনি আরো বলেন, “কক্সবাজার পৌঁছানোর পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আমরা নাকি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাই যে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার।”
“হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে জানায়, সেখানে পিটার হাস নামে কেউ নেই। পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন। এই গুজব একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা। অতীতেও আমি এই হোটেলে থেকেছি এবং কখনও কোনও বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি।”
“অতীতেও আমি বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি। কিন্তু ঘুরতে আসলে দলের বিধিমালা লঙ্ঘন হয়, এমন কোন বার্তা আমাকে কখনও দল থেকে দেয়া হয়নি,” যোগ করেন তিনি।
পাটোয়ারী মনে করেন, “শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয়।”
শোকজের ব্যাখ্যায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী লেখেন, “আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র। তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব প্রদান করছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদের্শন হিসেবে,”
উল্লেখ্য, গতকাল সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ– প্রত্যেককে শোকজ করেছে এনসিপি। এনসিপি’র ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় তাদেরকে কয়রা আলাদা শোকজ নোটিশের কপিও প্রকাশ করা হয়েছে।
যদিও শোকজ নোটিশে তাদের ঢাকায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখা (বিকেল ৫টা ২০) পর্যন্ত এনসিপির এই শীর্ষ নেতারা কক্সবাজার ছেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে খবর রটেছে সার্জিস আলম সস্ত্রীক সকালে কক্সবাজার ছেড়েছেন, কিন্তু এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনো।