মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া। ওপারে নিত্যপণ্য পাঠিয়ে এপারে আনা হয় গরু আর অবৈধ মাদক ইয়াবা, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে চোরাকারবারিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠা এই এলাকায় চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
গর্জনিয়া সীমান্তের কুখ্যাত ডাকাত সশস্ত্র পাহারা বসিয়ে সীমান্ত থেকে শুরু করে গরু দেশের অভ্যন্তরের গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে দিতে কাজ করতেন গর্জনিয়ার আলোচিত শাহীন ডাকাত। কিন্তু যৌথ বাহিনীর অভিযানে শেষ রক্ষা হয়নি শাহীন ডাকাতের।
বর্তমানে শাহীন কারাগারে থাকলেও গর্জনিয়ায় বন্ধ হয়নি চোরাচালান বরং অভিযোগ উঠেছে খোদ এক পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজশে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে চোরাকারবারিরা।
গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) শাহজাহান মনির প্রতিনিয়ত অবৈধ অর্থ আদায়ের মাধ্যমে সরাসরি চোরাচালানে সহায়তা করছেন এমন গুরুতর অভিযোগ সহ বেশ কয়েকটি অনিয়ম উল্লেখ করে জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন রামুর শিক্ষার্থীরা।
গত ৫ অক্টোবর দায়েরকৃত ঐ অভিযোগপত্রে
অনুলিপি দেওয়া হয়েছে ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ, আইজিপি এবং রামু থানার ওসির কাছে।
অভিযোগে বলা হয়, ‘সীমান্তপথে প্রতিদিন প্রকাশ্যে অবৈধ পণ্য পরিবহন হলেও গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির কোনো তৎপরতা নেই। বরং নিয়মিত মাসোহারা গ্রহণের মাধ্যমে ফাঁড়ির সদস্যরা চোরাকারবারিদের নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছেন আইসি শাহজাহান মনির।’
এছাড়াও উল্লেখ করা হয়,’ পুলিশের প্রত্যক্ষ কারসাজিতে গর্জনিয়া বাজার ও আশপাশের সড়কে প্রতি মোটরসাইকেল থেকে ১ হাজার টাকা, টমটম থেকে ২ হাজার, আর জিপ বা পিকআপ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আনা প্রতিটি গরুর জন্য গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির নামে ২ হাজার টাকা নেয়া হয়। ‘
এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করা হলে শাহজাহান মনির উলটো শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হুমকি দেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
অভিযোগের শেষে অনতিবিলম্বে গর্জনিয়া থেকে প্রত্যাহার সহ শাহজাহান মনিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানানো হয়েছে।
রামুর ছাত্র প্রতিনিধি এস. এম. নজরুল ইসলাম জানান, ‘বর্তমান ইনচার্জ শাহাজাহান মনির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সীমান্তপথে চোরাচালান নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, চোরাচালান সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষকতা অসদাচরণের একাধিক অভিযোগ উঠেছে।’
স্থানীয় সূত্রের দাবী, শাহীনের অবর্তমানে শাহজাহান মনিরের সহযোগিতায় গর্জনিয়া সীমান্তের অপরাধজগত বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত আরেক আলোচিত ডাকাত আব্দুর রহিম।
স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ শাহীনের কারণে আব্দুর রহিম এক সময় এলাকা ছাড়া হলেও এখন পুরো এলাকা তার নিয়ন্ত্রণে এবং যার ৫০-৬০ জনের সক্রিয় গ্রুপ আছে। পুলিশের আশকারায় এরা সহজেই আধিপত্য কায়েম করেছে, আমরা নিরাপত্তা চাই।’
অভিযোগ অস্বীকার করে শাহজাহান মনির বলেন, ‘ এই বিষয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জবাব দিবে, আমি কোনভাবে কোন অনিয়মে জড়িত নই একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে।’
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে পুলিশ সুপার সাইফউদ্দীন শাহীনের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার মন্তব্য মেলেনি। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিয়তই শাহজাহান মনির জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে মোটা অংকের অর্থ পাঠান তবে এবিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, শাহজাহান মনিরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলো তদন্ত করা হচ্ছে যার সাপেক্ষে করণীয় পদক্ষেপ দ্রুতই নেওয়া হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক : 
























