ঢাকা ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৬, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বার্মিজ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা বকুল আর নেই: জানাজা বৃহস্পতিবার ভালো কিছু শুরুর আশা পঁচিশের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে আসা পর্যটকদের স্বামীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত খালেদা জিয়া জনজোয়ারে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত ঢাকায় পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ঢাকায় পাকিস্তানের স্পিকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জনতার ঢল সংসদ ভবনের পথে খালেদা জিয়ার মরদেহ কক্সবাজারে খালেদা জিয়ার শেষ সফর ছিলো ২০১৭ সালে থার্টি ফার্স্টে লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হবে: মানতে হবে পুলিশী নির্দেশনা, বার বন্ধ থাকবে শোক পালন: সাগরতীরের তারকা হোটেলগুলোতে থার্টি-ফার্স্টের আয়োজন বাতিল চকরিয়ায় যুবদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা রুমিন ফারহানা-নীরবসহ ৮ জনকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার থার্টি ফার্স্ট নাইট:জেলা পুলিশের কঠোর বিধি-নিষেধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার

‘ রাখাইনে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের উপর ‘যুদ্ধাপরাধ’ করছে ‘ – ফোর্টিফাই রাইটস

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটস মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও গলা কেটে হত্যার মতো যুদ্ধাপরাধের তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

বুধবার (২৩ জুলাই) প্রকাশিত সংস্থাটির এক নতুন তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, রাখাইন রাজ্যের বড় একটি অংশ বর্তমানে নিয়ন্ত্রণকারী এএ তাদের নিয়ন্ত্রিত গ্রাম ও অস্থায়ী বন্দিশিবিরগুলোতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধ আইনের গুরুতর লঙ্ঘন ঘটিয়েছে।

ফোর্টিফাই রাইটসের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ইজাজ মিন খান্ট বলেন, “আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ব্যাপকভাবে অপহরণ, বর্বর নির্যাতন ও হত্যার জন্য দায়ী—এমনকি কিছু ভুক্তভোগীর মরদেহ গলা কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আইসিসির এখতিয়ার রয়েছে, এবং তাদের উচিত এ সকল অপরাধ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা।”

২০২৩ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, যারা ২০১৭ সালের গণহত্যা-পরবর্তী দফায় পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

বর্তমানে রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে এএ, এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায় বলছে—তারা এখন আরাকান আর্মির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগেই মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলা চলছে। ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি আইসিজে মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়।

তদন্তে যা পাওয়া গেলো

২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ফোর্টিফাই রাইটস ৩৯ জন রোহিঙ্গা ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেয়, যাদের মধ্যে ৮ জন নারী ছিলেন। তারা ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এএ’র হাতে সংঘটিত সহিংসতার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী।

তদন্তে সংগৃহীত ছবি ও ভিডিও প্রমাণাদিও বিশ্লেষণ করে এসব অভিযোগের ভিত্তি শক্ত হয়েছে বলে জানায় ফোর্টিফাই রাইটস।

প্রতিবেদনে অন্তত পাঁচটি গলা কেটে হত্যার ঘটনা, গ্রামে ও বন্দিশিবিরে একাধিক হত্যাকাণ্ড, এবং আটকের পর নির্যাতন ও হত্যার একটি পদ্ধতিগত ধারা তুলে ধরা হয়।

বেঁচে ফেরা অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের ভুয়া অভিযোগে – যেমন রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক বা এএ-তে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানো এবং এইসব কারণে আটক করে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে।

ফোর্টিফাই রাইটস আরও জানায়, এর আগেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট মংডুর নাফ নদী এলাকায় এক গণহত্যা এবং মে মাসে রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

যদিও আরাকান আর্মি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তারা স্বীকার করে যে, তাদের সদস্যরা দুই যুদ্ধবন্দিকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে—যা আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

২০১৮ সালে আইসিসি’র প্রধান কৌঁসুলি রোহিঙ্গা গণহত্যা সংক্রান্ত অপরাধ তদন্তে অনুমতি পান।

ফোর্টিফাই রাইটস আহবান জানিয়েছে, চলমান সেই তদন্তে যেন আরাকান আর্মির মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ইজাজ মিন খান্ট বলেন, “আরাকান আর্মির নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। যদি তারা নিজেদের একটি বৈধ বিপ্লবী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তবে তাদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া এবং নিজেদের অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।”

ট্যাগ :

This will close in 6 seconds

‘ রাখাইনে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের উপর ‘যুদ্ধাপরাধ’ করছে ‘ – ফোর্টিফাই রাইটস

আপডেট সময় : ০৯:০৪:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটস মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও গলা কেটে হত্যার মতো যুদ্ধাপরাধের তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

বুধবার (২৩ জুলাই) প্রকাশিত সংস্থাটির এক নতুন তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, রাখাইন রাজ্যের বড় একটি অংশ বর্তমানে নিয়ন্ত্রণকারী এএ তাদের নিয়ন্ত্রিত গ্রাম ও অস্থায়ী বন্দিশিবিরগুলোতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধ আইনের গুরুতর লঙ্ঘন ঘটিয়েছে।

ফোর্টিফাই রাইটসের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ইজাজ মিন খান্ট বলেন, “আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ব্যাপকভাবে অপহরণ, বর্বর নির্যাতন ও হত্যার জন্য দায়ী—এমনকি কিছু ভুক্তভোগীর মরদেহ গলা কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আইসিসির এখতিয়ার রয়েছে, এবং তাদের উচিত এ সকল অপরাধ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা।”

২০২৩ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, যারা ২০১৭ সালের গণহত্যা-পরবর্তী দফায় পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

বর্তমানে রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে এএ, এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায় বলছে—তারা এখন আরাকান আর্মির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগেই মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলা চলছে। ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি আইসিজে মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়।

তদন্তে যা পাওয়া গেলো

২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ফোর্টিফাই রাইটস ৩৯ জন রোহিঙ্গা ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেয়, যাদের মধ্যে ৮ জন নারী ছিলেন। তারা ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এএ’র হাতে সংঘটিত সহিংসতার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী।

তদন্তে সংগৃহীত ছবি ও ভিডিও প্রমাণাদিও বিশ্লেষণ করে এসব অভিযোগের ভিত্তি শক্ত হয়েছে বলে জানায় ফোর্টিফাই রাইটস।

প্রতিবেদনে অন্তত পাঁচটি গলা কেটে হত্যার ঘটনা, গ্রামে ও বন্দিশিবিরে একাধিক হত্যাকাণ্ড, এবং আটকের পর নির্যাতন ও হত্যার একটি পদ্ধতিগত ধারা তুলে ধরা হয়।

বেঁচে ফেরা অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের ভুয়া অভিযোগে – যেমন রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক বা এএ-তে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানো এবং এইসব কারণে আটক করে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে।

ফোর্টিফাই রাইটস আরও জানায়, এর আগেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট মংডুর নাফ নদী এলাকায় এক গণহত্যা এবং মে মাসে রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

যদিও আরাকান আর্মি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তারা স্বীকার করে যে, তাদের সদস্যরা দুই যুদ্ধবন্দিকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে—যা আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

২০১৮ সালে আইসিসি’র প্রধান কৌঁসুলি রোহিঙ্গা গণহত্যা সংক্রান্ত অপরাধ তদন্তে অনুমতি পান।

ফোর্টিফাই রাইটস আহবান জানিয়েছে, চলমান সেই তদন্তে যেন আরাকান আর্মির মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ইজাজ মিন খান্ট বলেন, “আরাকান আর্মির নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। যদি তারা নিজেদের একটি বৈধ বিপ্লবী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তবে তাদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া এবং নিজেদের অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।”