ঢাকা ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নিহত ইউনুস মেম্বার স্মরণে টেকনাফ পৌরসভার আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ক্রীড়া সংসদের দোয়া মাহফিল উখিয়ায় রোহিঙ্গা তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার দেড় লাখ ইয়াবার মালিক শীর্ষ মাদক কারবারি আব্দুর রহিমকে খুঁজছে বিজিবি বিহারের সবচেয়ে কম বয়সী বিধায়ক সংগীতশিল্পী মৈথিলী ‘ইয়াবা রাখতে সীমান্তবর্তী ঘর চুক্তিতে ভাড়া নেয় মাদক কারবারিরা’ অস্ত্র-কার্তুজ উদ্ধারঃ পলাতক ডাকাতকে ধরতে চলছে অভিযান- র‌্যাব বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে – শাহজাহান চৌধুরী পুলিশ নামছে নতুন পোশাকে ক্ষমতায় গেলে গঙ্গা ব্যারেজ তৈরি করে পদ্মার পানি সংরক্ষণ করা হবে: বিএনপি মহাসচিব নির্বাচনের আগে পরে ৯ দিন মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা টেকনাফে বহু মামলার পলাতক ২ আসামি আটক সাবেক স্ত্রীর মামলায় হিরো আলম গ্রেপ্তার সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল করা হবে আওয়ামী লীগ ফেসবুকভিত্তিক প্রতিবাদী দলে পরিণত হয়েছে : শফিকুল আলম কুতুবদিয়ায় পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

মেলিসার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড ক্যারিবীয় অঞ্চল, নিহত অন্তত ২৫

প্রবল শক্তিশালী হারিকেন মেলিসা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জজুড়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়েছে, অনেক স্থানে পুরো পাড়া-মহল্লা প্লাবিত হয়েছে এবং এতে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া জ্যামাইকা, হাইতি ও কিউবায় ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও সড়ক ধ্বংস হয়ে গেছে। দ্বীপ দেশগুলোর অনেক এলাকাই এখনো বিদ্যুৎবিহীন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু ছিল জ্যামাইকা। ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি গতির বাতাস নিয়ে আঘাত হানা ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার এই ঝড়ে দেশটিতে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস জানান, “পুরো দেশটাই যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাসপাতাল, লাইব্রেরি, পুলিশ স্টেশন, বন্দরঘরসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনা।”

এদিকে হাইতিতে ভয়াবহ বন্যায় আরও অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১০ জনই শিশু। মেলিসা এখন দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি–১ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও, তা এখনো তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।

ঝড়ের কারণে জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকায় হাজারো মানুষ ঘরছাড়া হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। দেশটির স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছেন, তিনজন পুরুষ ও এক নারী বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছিলেন এবং পরে তাদেরকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মন্টেগো বে শহরের মেয়র রিচার্ড ভারনন বলেন, “শহরের অর্ধেকটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য— সবাই বেঁচে আছে কি না তা নিশ্চিত করা।”

গর্ডন সোয়াবি নামে কিংস্টনের এক ব্যবসায়ী জানান, তার কাজিনের পুরো বাড়িটাই ধসে গেছে। তিনি বলেন, “সে সমুদ্রের ধারে নিজের স্বপ্নের বাড়ি বানিয়েছিল। এখন বাড়িটা আর নেই, কিছুই নেই।”

পিয়া শেভালিয়ে নামে এক বিদেশি পর্যটক বলেন, “রাতভর জানালাগুলো কাঁপছিল। ভয়ে অসুস্থ লাগছিল।”

জ্যামাইকার পর মেলিসা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে কিউবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। ঘণ্টায় প্রায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়টি সেখানেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াস–কানেল জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছেন এবং জানিয়েছেন, দেশটি ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির’ জন্য আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিল। আর এটিই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করেছে।

এছাড়া হাইতিতে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন। খ্রিস্টান সংগঠন ওয়ার্ল্ড রিলিফ-এর কর্মকর্তা পাসকাল বিমেনিইয়ামানা বলেন, “অনেক বাড়ি উপকূলে ভেসে গেছে, অনেকেই খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন।”

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে জ্যামাইকায় সহায়তা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। হাইতি ও বাহামাসও আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া দল জ্যামাইকার ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করবে।

অন্যদিকে স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যার পর ঝড়টি বাহামাসের দিকে অগ্রসর হয়েছে। সেখানে বিপজ্জনক জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরপর এটি আরও উত্তরে বারমুডা হয়ে শুক্রবার রাতে কানাডার সেন্ট জনস শহরের কাছে গিয়ে প্রবল এক্সট্রা-ট্রপিকাল সাইক্লোনে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

নিহত ইউনুস মেম্বার স্মরণে টেকনাফ পৌরসভার আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ক্রীড়া সংসদের দোয়া মাহফিল

This will close in 6 seconds

মেলিসার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড ক্যারিবীয় অঞ্চল, নিহত অন্তত ২৫

আপডেট সময় : ০১:৩৭:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

প্রবল শক্তিশালী হারিকেন মেলিসা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জজুড়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়েছে, অনেক স্থানে পুরো পাড়া-মহল্লা প্লাবিত হয়েছে এবং এতে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া জ্যামাইকা, হাইতি ও কিউবায় ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও সড়ক ধ্বংস হয়ে গেছে। দ্বীপ দেশগুলোর অনেক এলাকাই এখনো বিদ্যুৎবিহীন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু ছিল জ্যামাইকা। ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি গতির বাতাস নিয়ে আঘাত হানা ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার এই ঝড়ে দেশটিতে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস জানান, “পুরো দেশটাই যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাসপাতাল, লাইব্রেরি, পুলিশ স্টেশন, বন্দরঘরসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনা।”

এদিকে হাইতিতে ভয়াবহ বন্যায় আরও অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১০ জনই শিশু। মেলিসা এখন দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি–১ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও, তা এখনো তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।

ঝড়ের কারণে জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকায় হাজারো মানুষ ঘরছাড়া হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। দেশটির স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছেন, তিনজন পুরুষ ও এক নারী বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছিলেন এবং পরে তাদেরকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মন্টেগো বে শহরের মেয়র রিচার্ড ভারনন বলেন, “শহরের অর্ধেকটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য— সবাই বেঁচে আছে কি না তা নিশ্চিত করা।”

গর্ডন সোয়াবি নামে কিংস্টনের এক ব্যবসায়ী জানান, তার কাজিনের পুরো বাড়িটাই ধসে গেছে। তিনি বলেন, “সে সমুদ্রের ধারে নিজের স্বপ্নের বাড়ি বানিয়েছিল। এখন বাড়িটা আর নেই, কিছুই নেই।”

পিয়া শেভালিয়ে নামে এক বিদেশি পর্যটক বলেন, “রাতভর জানালাগুলো কাঁপছিল। ভয়ে অসুস্থ লাগছিল।”

জ্যামাইকার পর মেলিসা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে কিউবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। ঘণ্টায় প্রায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়টি সেখানেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াস–কানেল জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছেন এবং জানিয়েছেন, দেশটি ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির’ জন্য আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিল। আর এটিই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করেছে।

এছাড়া হাইতিতে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন। খ্রিস্টান সংগঠন ওয়ার্ল্ড রিলিফ-এর কর্মকর্তা পাসকাল বিমেনিইয়ামানা বলেন, “অনেক বাড়ি উপকূলে ভেসে গেছে, অনেকেই খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন।”

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে জ্যামাইকায় সহায়তা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। হাইতি ও বাহামাসও আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া দল জ্যামাইকার ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করবে।

অন্যদিকে স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যার পর ঝড়টি বাহামাসের দিকে অগ্রসর হয়েছে। সেখানে বিপজ্জনক জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরপর এটি আরও উত্তরে বারমুডা হয়ে শুক্রবার রাতে কানাডার সেন্ট জনস শহরের কাছে গিয়ে প্রবল এক্সট্রা-ট্রপিকাল সাইক্লোনে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট