ঢাকা ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম- উদীচী রাজধানীর ভালোবাসা নিয়ে এলো পেনোয়া টাকার নকশায় বাদ যাচ্ছে শেখ মুজিবের ছবি কচ্ছপিয়ার সাহাব উদ্দিন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম নিষেধাজ্ঞার মাঝেও সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিক যাচ্ছে দেদারসে! রামুর বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম চৌধুরীর মৃত্যু, জানাযা কাল অপরিকল্পিত স্থাপনা-দূষণে বাস অনুপযোগী হয়ে উঠছে কক্সবাজার সিবিআইইউ জার্নালিস্ট সোসাইটি গঠিত, সভাপতি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের তাহজীবুল-সম্পাদক টিটিএনের সাজিন টেকনাফে কিশোরকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো: রাষ্ট্রপক্ষকে খোঁজ নিতে বললেন হাইকোর্ট আইএলও-আইএসইসি পর্যটন সেক্টর সাপোর্ট ইমপ্লিমেন্টেশন পার্টনারশিপ ও এমবোলডেন বাংলাদেশের মধ্যে টেকসই পর্যটন উন্নয়নে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ঈদগাহ মানবিক ফাউন্ডেশনের জার্সি উন্মোচন রামুতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব উদযাপন পরিষদ গঠিত কক্সবাজারে পর্যটন ও আথিতেয়তা খাতে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত কক্সবাজারে ‘লিংরোড বাজার কমিটির’ নেতাকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ পরিবারের কথা বলতে পারেন না-শুনেনও না, জাবেদ পড়েন অনার্সে

‘পুরো এলাকা হারিয়েছে সাহসী এক তরুণকে’

  • টিটিএন ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১১:০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • 14

চট্টগ্রামের মুরাদপুর মোড়। বিকেল গড়াচ্ছে সন্ধ্যার দিকে। সেদিন ছিল ১৬ জুলাই। একবুক আশা আর বুকভরা সাহস নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে দাঁড়িয়ে ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের তরুণ ছাত্রনেতা ওয়াসিম আকরাম। একদল বিপ্লবী তরুণের সঙ্গে তিনিও যেন স্বপ্ন দেখছিলেন একটি বৈষম্যহীন সমাজের। কিন্তু ওই বিকেলেই পুলিশের গুলি এবং সাদা পোশাকধারীদের হামলায় নিভে যায় সেই স্বপ্ন। ২২ বছর বয়সী ওয়াসিম হয়ে গেলেন চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ। সেই সাথে পুরো এলাকা হারায় একজন সাহসী তরুণকে।

ওয়াসিমের চাচা মাওলানা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি, ওয়াসিম এভাবে চলে যাবে। সে ছিল পরিবারের ভবিষ্যৎ। তার মৃত্যুতে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে আমাদের জীবনে। ওয়াসিমকে হারিয়ে আমরা শুধু স্বজন নয়, পুরো এলাকা হারালো একজন সাহসী তরুণকে।’

একজন সাহসী সৈনিক ওয়াসিম: চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ওয়াসিম ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির একজন নিবেদিত সদস্য। চট্টগ্রামের প্রতিটি আন্দোলনে তার সক্রিয় উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সহপাঠীরা জানান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি কখনো পিছু হটেননি। প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সহযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতেন।

মৃত্যুর একদিন আগে ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে ওয়াসিম লিখেছিলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে আছে আমার প্রাণের সংগঠন। আমি এই পরিচয়েই শহীদ হবো।” এই কথাগুলো ছিল তার জীবনের শেষ বার্তা। পরদিন বিকেলেই পুলিশের বুলেটে থেমে যায় তার হৃৎস্পন্দন।

সেদিনের ভয়াবহতা: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৬ জুলাই দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকে। বিকেল ৩টার দিকে মুরাদপুর মোড় এবং আশপাশের এলাকায় শুরু হয় সহিংস সংঘর্ষ। প্রথমে লাঠিপেটা, পরে গুলি চালায় পুলিশ। সাদা পোশাকের কয়েকজন অস্ত্রধারীকেও গুলি চালাতে দেখা যায়।

ওয়াসিমের সহপাঠী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের গুলির শব্দ আর ককটেলের বিস্ফোরণে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা জীবন বাঁচাতে ছুটতে থাকে। কিন্তু ওয়াসিম দাঁড়িয়ে ছিল সাহসের প্রতীক হয়ে। সেই সাহসই তাকে লক্ষ্য বানিয়ে দেয়। গুলিতে লুটিয়ে পড়ে ওয়াসিম।’

এদিকে ওয়াসিমের মৃত্যুর খবরে যখন তার কক্সবাজারের পেকুয়া গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়, তখন শোকস্তব্ধ হয়ে যায় পুরো পরিবার। বাবা শফিউল আলম মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে কর্মরত। পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ওয়াসিম ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। মৃত্যুর পরদিন সকাল ১১টায় পারিবারিক কবরস্থানে জানাজার পর তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বিনয়ী এবং সবার সঙ্গে আন্তরিক মিশে যাওয়ার কারণে ওয়াসিম এলাকায় সবার প্রিয় ছিলেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার এই মেধাবী তরুণের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে এবং তার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।

ওয়াসিম আকরাম আজ আর নেই। কিন্তু তার রক্ত যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে যাবে। তার স্বপ্ন হয়তো থেমে গেছে, কিন্তু তার আত্মত্যাগ আন্দোলনের ইতিহাসে চিরজ্বলন্ত বাতিঘর হয়ে থাকবে। এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম- উদীচী

This will close in 6 seconds

‘পুরো এলাকা হারিয়েছে সাহসী এক তরুণকে’

আপডেট সময় : ১১:০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামের মুরাদপুর মোড়। বিকেল গড়াচ্ছে সন্ধ্যার দিকে। সেদিন ছিল ১৬ জুলাই। একবুক আশা আর বুকভরা সাহস নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে দাঁড়িয়ে ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের তরুণ ছাত্রনেতা ওয়াসিম আকরাম। একদল বিপ্লবী তরুণের সঙ্গে তিনিও যেন স্বপ্ন দেখছিলেন একটি বৈষম্যহীন সমাজের। কিন্তু ওই বিকেলেই পুলিশের গুলি এবং সাদা পোশাকধারীদের হামলায় নিভে যায় সেই স্বপ্ন। ২২ বছর বয়সী ওয়াসিম হয়ে গেলেন চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ। সেই সাথে পুরো এলাকা হারায় একজন সাহসী তরুণকে।

ওয়াসিমের চাচা মাওলানা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি, ওয়াসিম এভাবে চলে যাবে। সে ছিল পরিবারের ভবিষ্যৎ। তার মৃত্যুতে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে আমাদের জীবনে। ওয়াসিমকে হারিয়ে আমরা শুধু স্বজন নয়, পুরো এলাকা হারালো একজন সাহসী তরুণকে।’

একজন সাহসী সৈনিক ওয়াসিম: চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ওয়াসিম ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির একজন নিবেদিত সদস্য। চট্টগ্রামের প্রতিটি আন্দোলনে তার সক্রিয় উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সহপাঠীরা জানান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি কখনো পিছু হটেননি। প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সহযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতেন।

মৃত্যুর একদিন আগে ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে ওয়াসিম লিখেছিলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে আছে আমার প্রাণের সংগঠন। আমি এই পরিচয়েই শহীদ হবো।” এই কথাগুলো ছিল তার জীবনের শেষ বার্তা। পরদিন বিকেলেই পুলিশের বুলেটে থেমে যায় তার হৃৎস্পন্দন।

সেদিনের ভয়াবহতা: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৬ জুলাই দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকে। বিকেল ৩টার দিকে মুরাদপুর মোড় এবং আশপাশের এলাকায় শুরু হয় সহিংস সংঘর্ষ। প্রথমে লাঠিপেটা, পরে গুলি চালায় পুলিশ। সাদা পোশাকের কয়েকজন অস্ত্রধারীকেও গুলি চালাতে দেখা যায়।

ওয়াসিমের সহপাঠী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের গুলির শব্দ আর ককটেলের বিস্ফোরণে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা জীবন বাঁচাতে ছুটতে থাকে। কিন্তু ওয়াসিম দাঁড়িয়ে ছিল সাহসের প্রতীক হয়ে। সেই সাহসই তাকে লক্ষ্য বানিয়ে দেয়। গুলিতে লুটিয়ে পড়ে ওয়াসিম।’

এদিকে ওয়াসিমের মৃত্যুর খবরে যখন তার কক্সবাজারের পেকুয়া গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়, তখন শোকস্তব্ধ হয়ে যায় পুরো পরিবার। বাবা শফিউল আলম মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে কর্মরত। পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ওয়াসিম ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। মৃত্যুর পরদিন সকাল ১১টায় পারিবারিক কবরস্থানে জানাজার পর তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বিনয়ী এবং সবার সঙ্গে আন্তরিক মিশে যাওয়ার কারণে ওয়াসিম এলাকায় সবার প্রিয় ছিলেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার এই মেধাবী তরুণের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে এবং তার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।

ওয়াসিম আকরাম আজ আর নেই। কিন্তু তার রক্ত যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে যাবে। তার স্বপ্ন হয়তো থেমে গেছে, কিন্তু তার আত্মত্যাগ আন্দোলনের ইতিহাসে চিরজ্বলন্ত বাতিঘর হয়ে থাকবে। এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।