২০২৪ এর ৪ আগস্ট, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নতুন একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
ঘটনার ৭ মাস ১৭ দিন পর গত ২১ মার্চ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি এনামুল হক মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান কক্সবাজার মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান।
এনামুল হক চট্টগ্রামের বাঁশখালীর স্থায়ী বাসিন্দা হলেও তিনি বর্তমানে থাকেন কক্সবাজারে।
মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে অপরাধের শিরোনাম উল্লেখ করা হয় ‘রাজনৈতিক মামলা’, যেখানে ৫২০ জনের নাম উল্লেখসহ আসামী করা হয় সর্বমোট ৭৭০ জনকে।
মামলা দায়েরের পর থেকেই এর নানান অসংগতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
আমাদের হাতে এসেছে মামলার এজাহারের একটি সংখ্যা। এতে ৫২০ নং আসামী জাফর আলম মাঝি ২০২৪ সালে মৃত্যু বরণ করেছেন, ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া যার মৃত্যু সনদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়েছে।
জাফরের ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৬ জুন তার অপারেশন হয়। এরপর গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেলে তিনি মারা যান। অথচ তার নাম মামলার আসামির তালিকায় দেখে আমরা হতবাক।’
অন্যদিকে মামলার ৪২৭ নং আসামী আইয়ুব আলী নিজের ফেসবুক একাউন্টে মামলার একটি অংশের ছবি পোস্ট করে জানিয়েছেন তিনি গত ২ বছর ধরে আরব আমিরাতে আছেন।
প্রবাসী এই ব্যক্তি অনেকটা ব্যঙ্গ করে তার পোস্টে লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমিই সফল! আমি ২বছর যাবত সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকার পরেও আমি মামলার আসামি। ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা মামলার মহামান্য বাদী।’
২৫৭ নং আসামী উখিয়ার পালংখালী ইউপি’র চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অর্থ সহায়তা দেওয়ার পরও চাঁদাবাজ লুঠতরাজ জবর দখলকারীর বিরুদ্ধে কথা বলাতে আজ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রের দেওয়া মামলার আসামী।’
এছাড়াও জহিরুল কাদের ভুট্টু, তামজিদ পাশা ও আসিফুল করিম এর নাম আসামীর তালিকায় এসেছে একাধিকবার।
এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কক্সবাজারের দুই পরিচিত মুখ শহিদুল ওয়াহিদ শাহেদ ও জিনিয়া শারমিন রিয়া এই মামলা নিয়ে তারা অবগত নন বলে ফেসবুকে দাবী করেছেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক এসএস সাগর টিটিএনকে বলেন, “বাদি আমাকে বলেছে ভুলবশত কিছু অসংগতি হয়েছে। ভুল হলে সংশোধনের সুযোগ আছে। কিন্তু বাণিজ্য কিংবা উদ্দ্যশ্যে হাসিলের জন্য নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হলে তা কোনোভাবে মেনে নেয়া হবেনা।”
মামলার অন্যতম আসামীরা হলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা (৫৫), কক্সবাজার ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল (৫০), কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী (৬০), সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান (৫৫), সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলম (৫০), সাবেক সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক (৫০), সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি (৫৫), জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহিনুল হক মার্শাল (৪৮) সহ ৫২০ জন আসামীর নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে ঘটনার বিবরণে বলা হয়, গত ৪ আগস্ট বিকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে জনমনে আতংক ও ত্রাস সৃষ্টি, ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর, প্রাণনাশের হুমকি প্রদান এবং বিস্ফোরক উপাদান দ্বারা জনমনে ভীতি সঞ্চার করেছেন আসামীরা।