ঢাকা ১২:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছে ড. ইউনূস

বিচারের পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে : ড. ইউনূস

  • টিটিএন ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৪:১১:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
  • ১১ টাইম ভিউ

ড. ইউনূস

ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ যেসব হত্যাকাণ্ড এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে; সেগুলোর বিচার শেষে দলটিকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে, যখন (দলটির) যারা হত্যা ও ক্ষমতার অপব্যহারের সাথে জড়িত তাদের বিচার সম্পন্ন হবে। অন্যরা নির্বাচনে অংশ নিতে যতটা স্বাধীন তারাও ততটাই স্বাধীন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অঙ্গনে লড়াই করব।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়া এবং সেখান থেকে তার কথা বলার বিষয়টি নিয়েও নিজের অভিমত জানিয়েছেন প্রফেসর ইউনূস। তিনি বলেছেন, “তাকে শুধু ভারত আশ্রয়ই দেয়নি। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, তিনি সেখান থেকে কথা বলছেন। যা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছে। তার কণ্ঠ শুনলেই মানুষ অখুশি হয়। অর্থাৎ এই বিষয়টি আমাদের বন্ধ করতে হবে।”

ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর যখন তাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তখন প্রথমে তিনি দায়িত্ব নিতে চাননি। কিন্তু পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে নিহত মানুষ ও তাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নেন। তিনি বলেন, “প্রথমে, আমি দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি বলেছি, অন্য কাউকে খুঁজে বের করুন। কিন্তু পরবর্তীতে বলেছি, ঠিক আছে, আপনারা জীবন দিয়েছেন, আপনার বন্ধুরা জীবন দিয়েছে। তাহলে আমি আমার সেরাটা চেষ্টা করব।”

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের সম্পর্কের বিষয়টিও উঠে এসেছে টাইম ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রফেসর ইউনূসের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে শেখ হাসিনার পতনের পরও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছে।

কিন্তু ট্রাম্পের আবারও ক্ষমতায় আসার বিষয়টি গভীর চিন্তার উদ্রেক করেছে। এরমধ্যে আবার গত ৩১ অক্টোবর ট্রাম্প বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ এবং ভারতীয় আমেরিকানরা ট্রাম্পকে দিয়ে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে চাইছে; যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব আছে। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন ট্রাম্পের কাছে হেরে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূস বলেছিলেন তিনি কথাও বলতে পারছেন না।

তবে টাইমস ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস বলেছেন, তার বিশ্বাস ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে তিনি সহাবস্থান তৈরি করতে পারবেন।

“ট্রাম্প হলেন একজন ব্যবসায়ী। আমরাও একটি ব্যবসাতে আছি। আমরা তাদের বলছি না আমাদের অনুদান দিয়ে সহায়তা করে সমস্যা থেকে মুক্ত করুন। আমরা আসলে ব্যবসায়িক পার্টনার চাই।”

ড. ইউনূস বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে যেসব অর্থ পাচার হয়েছে সেগুলো তারা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। আর এক্ষত্রে ইউরোপিয়ান কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যেসব দেশকেই আমরা পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছি, তারা আমাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা এই বিষয়টি করেছিল।”

এছাড়া নির্বাচনের আগে সংস্কারের বিষয়টি অন্য যে কোনও কিছুর চেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ সেটি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ড. ইউনূস। তবে এই সংস্কারের জন্য মানুষের জীবনমান উন্নয়নের দরকার। যদি জীবনমান উন্নয়ন না হয় তাহলে মানুষ ধৈর্য্যহারা হয়ে যেতে পারেন; এমনকি বলতে পারেন আওয়ামী লীগের সময় ভালো ছিল।

এ বিষয়টি ড. ইউনূসের বেশ ভালো করেই জানা রয়েছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন তিনি। প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, “এই পুরো অভ্যুত্থানের মূল হলো সংস্কার। এ কারণেই আমরা এটিকে বলছি বাংলাদেশ ২.০।”

ট্যাগ :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

This will close in 6 seconds

মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছে ড. ইউনূস

বিচারের পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে : ড. ইউনূস

আপডেট সময় : ০৪:১১:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ যেসব হত্যাকাণ্ড এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে; সেগুলোর বিচার শেষে দলটিকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে, যখন (দলটির) যারা হত্যা ও ক্ষমতার অপব্যহারের সাথে জড়িত তাদের বিচার সম্পন্ন হবে। অন্যরা নির্বাচনে অংশ নিতে যতটা স্বাধীন তারাও ততটাই স্বাধীন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অঙ্গনে লড়াই করব।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়া এবং সেখান থেকে তার কথা বলার বিষয়টি নিয়েও নিজের অভিমত জানিয়েছেন প্রফেসর ইউনূস। তিনি বলেছেন, “তাকে শুধু ভারত আশ্রয়ই দেয়নি। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, তিনি সেখান থেকে কথা বলছেন। যা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছে। তার কণ্ঠ শুনলেই মানুষ অখুশি হয়। অর্থাৎ এই বিষয়টি আমাদের বন্ধ করতে হবে।”

ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর যখন তাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তখন প্রথমে তিনি দায়িত্ব নিতে চাননি। কিন্তু পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে নিহত মানুষ ও তাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নেন। তিনি বলেন, “প্রথমে, আমি দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি বলেছি, অন্য কাউকে খুঁজে বের করুন। কিন্তু পরবর্তীতে বলেছি, ঠিক আছে, আপনারা জীবন দিয়েছেন, আপনার বন্ধুরা জীবন দিয়েছে। তাহলে আমি আমার সেরাটা চেষ্টা করব।”

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের সম্পর্কের বিষয়টিও উঠে এসেছে টাইম ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রফেসর ইউনূসের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে শেখ হাসিনার পতনের পরও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছে।

কিন্তু ট্রাম্পের আবারও ক্ষমতায় আসার বিষয়টি গভীর চিন্তার উদ্রেক করেছে। এরমধ্যে আবার গত ৩১ অক্টোবর ট্রাম্প বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ এবং ভারতীয় আমেরিকানরা ট্রাম্পকে দিয়ে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে চাইছে; যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব আছে। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন ট্রাম্পের কাছে হেরে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূস বলেছিলেন তিনি কথাও বলতে পারছেন না।

তবে টাইমস ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস বলেছেন, তার বিশ্বাস ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে তিনি সহাবস্থান তৈরি করতে পারবেন।

“ট্রাম্প হলেন একজন ব্যবসায়ী। আমরাও একটি ব্যবসাতে আছি। আমরা তাদের বলছি না আমাদের অনুদান দিয়ে সহায়তা করে সমস্যা থেকে মুক্ত করুন। আমরা আসলে ব্যবসায়িক পার্টনার চাই।”

ড. ইউনূস বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে যেসব অর্থ পাচার হয়েছে সেগুলো তারা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। আর এক্ষত্রে ইউরোপিয়ান কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যেসব দেশকেই আমরা পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছি, তারা আমাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা এই বিষয়টি করেছিল।”

এছাড়া নির্বাচনের আগে সংস্কারের বিষয়টি অন্য যে কোনও কিছুর চেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ সেটি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ড. ইউনূস। তবে এই সংস্কারের জন্য মানুষের জীবনমান উন্নয়নের দরকার। যদি জীবনমান উন্নয়ন না হয় তাহলে মানুষ ধৈর্য্যহারা হয়ে যেতে পারেন; এমনকি বলতে পারেন আওয়ামী লীগের সময় ভালো ছিল।

এ বিষয়টি ড. ইউনূসের বেশ ভালো করেই জানা রয়েছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন তিনি। প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, “এই পুরো অভ্যুত্থানের মূল হলো সংস্কার। এ কারণেই আমরা এটিকে বলছি বাংলাদেশ ২.০।”