ঢাকা ০৩:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সীমান্তে ফের মাইন বিস্ফোরণ, মিয়ানমার নাগরিক নিহত- বাংলাদেশি আহত চকরিয়া হারবাং ইউনিয়ন ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠিত তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে সাঁতার প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন ৬ বছরে ২৫ হত্যাকান্ড: বদরখালীতে পুলিশ ফাঁড়ি পুনঃস্থাপনের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন উখিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্র ও মাদক কারবারি এনায়েত উল্লাহ আটক চার পিস ইয়াবা ধরতে উখিয়ার ওসির ‘আলোচিত অভিযান’ দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের আজীবন সদস্য পদ থেকে মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর পদত্যাগ টিটিএন পরিবারের শোক: সাংবাদিক আনসার হোসেনের সহধর্মিণী আর নেই একনজরে চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দোকান মালিক সমিতির সদস্য জিল্লু ও জাহেদের পদ বাতিল ঈদগাঁওতে দেশীয় অস্ত্রসহ সিএনজি চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ অনলাইনে জামিননামা গ্রহণ শুরু হচ্ছে কাল, এক ক্লিকে পৌঁছে যাবে জেলখানায়: আইন উপদেষ্টা মেক্সিকোয় ভারি বৃষ্টি, বন্যায় ৬৪ মৃত্যু; নিখোঁজ ৬৫ হঠাৎ মার্কিন দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার ঈদগাঁওয়ের ইউএনও বিমল চাকমার বিরুদ্ধে মামলা, ২ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ

ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম: ইংরেজি সাহিত্যের এক অভিভাবকের বিদায়

বাংলা সাহিত্য জগৎ আজ নিস্তব্ধ, যেন হেমন্তের প্রভাতে এক মহীরুহ নিঃশব্দে ঝরে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক, সাহিত্য সমালোচক, অনুবাদক, ঔপন্যাসিক, দার্শনিক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম আর নেই। ২০২৫ সালের অক্টোবরে তাঁর প্রয়াণে স্তব্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন ও সাহিত্য জগত। রেখে গেছেন এক গভীর শূন্যতা; যা সহজে পূরণ হবার নয়।

১৯৫১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলা ও ইংরেজি; দুই সাহিত্য ধারারই এক সেতুবন্ধন ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যান কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে। দীর্ঘদিন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ছিলেন এক আলোকবর্তিকা; জ্ঞান, মানবতা ও নান্দনিকতার এক অনবদ্য সংমিশ্রণ।

সাহিত্যচর্চায় সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ছিলেন এক নিরন্তর অনুসন্ধানী মন। তাঁর ইংরেজি গল্প সংকলন “The Merman’s Prayer and Other Stories”, “Clay Faces, Painted Eyes” আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের আধুনিক ইংরেজি গল্প চর্চাকে নতুন পরিচিতি এনে দিয়েছে। বাংলা সাহিত্যেও তাঁর অবদান অনন্য; “গল্পগুচ্ছ”, “ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি: উত্তরাধিকার ও উত্তরাধিকারী” প্রবন্ধ গ্রন্থ গুলো তাঁর গভীর চিন্তা ও দার্শনিক দৃষ্টির সাক্ষ্য বহন করে। সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন তিনি দেখেছেন মানবিকতার দৃষ্টিতে; যেখানে সাহিত্য হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের আর আশার ভাষা।

অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম ছিলেন The Daily Star পত্রিকার নিয়মিত কলাম লেখক। তাঁর লেখায় প্রতিফলিত হতো এক সহৃদয় বুদ্ধিজীবীর কণ্ঠ; যিনি বিশ্বাস করতেন, “সাহিত্য কেবল নন্দনের অনুশীলন নয়, এটি সমাজের আত্মপরিচয়ের আয়না।” তিনি পাঠককে শিখিয়েছেন কীভাবে সাহিত্য জীবনের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে, এবং মানবতার সঙ্গে যুক্ত হয়।

তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তিনি ছিলেন শিক্ষক নন, বরং এক আলোকিত পথ প্রদর্শক। ক্লাসরুমে কিংবা করিডোরে, তিনি শুধু পাঠদান করতেন না; চিন্তা করতে শেখাতেন। তাঁর মৃত্যুতে শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পুরো দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডল হারিয়েছে এক নৈতিক অভিভাবককে।

অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমাণ করেছেন; “শিক্ষা কোনো পেশা নয়, এটি এক আজীবন সাধনা।” তাঁর জীবন ছিল এক দীর্ঘ সৃজন যাত্রা; যেখানে মানুষ, ভাষা ও চিন্তা মিলেমিশে গড়ে তুলেছিল এক মানবিক মহাকাব্য।

আজ আমরা কেবল একজন মানুষকে নয়, হারিয়েছি ইংরেজি সাহিত্যের এক অভিভাবককে; যার প্রজ্ঞা, সৌম্যতা ও সৃষ্টিশীলতার ছায়া আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার আকাশে চিরকাল জ্বলজ্বল করবে।

লেখক:
শেখ জাহাঙ্গীর হাসান মানিক
অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর শিক্ষায় ও প্রেরণায় বেড়ে ওঠা এক সাহিত্য চিন্তার অনুসারী।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

সীমান্তে ফের মাইন বিস্ফোরণ, মিয়ানমার নাগরিক নিহত- বাংলাদেশি আহত

This will close in 6 seconds

ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম: ইংরেজি সাহিত্যের এক অভিভাবকের বিদায়

আপডেট সময় : ০১:৩৩:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

বাংলা সাহিত্য জগৎ আজ নিস্তব্ধ, যেন হেমন্তের প্রভাতে এক মহীরুহ নিঃশব্দে ঝরে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক, সাহিত্য সমালোচক, অনুবাদক, ঔপন্যাসিক, দার্শনিক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম আর নেই। ২০২৫ সালের অক্টোবরে তাঁর প্রয়াণে স্তব্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন ও সাহিত্য জগত। রেখে গেছেন এক গভীর শূন্যতা; যা সহজে পূরণ হবার নয়।

১৯৫১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলা ও ইংরেজি; দুই সাহিত্য ধারারই এক সেতুবন্ধন ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যান কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে। দীর্ঘদিন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ছিলেন এক আলোকবর্তিকা; জ্ঞান, মানবতা ও নান্দনিকতার এক অনবদ্য সংমিশ্রণ।

সাহিত্যচর্চায় সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ছিলেন এক নিরন্তর অনুসন্ধানী মন। তাঁর ইংরেজি গল্প সংকলন “The Merman’s Prayer and Other Stories”, “Clay Faces, Painted Eyes” আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের আধুনিক ইংরেজি গল্প চর্চাকে নতুন পরিচিতি এনে দিয়েছে। বাংলা সাহিত্যেও তাঁর অবদান অনন্য; “গল্পগুচ্ছ”, “ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি: উত্তরাধিকার ও উত্তরাধিকারী” প্রবন্ধ গ্রন্থ গুলো তাঁর গভীর চিন্তা ও দার্শনিক দৃষ্টির সাক্ষ্য বহন করে। সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন তিনি দেখেছেন মানবিকতার দৃষ্টিতে; যেখানে সাহিত্য হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের আর আশার ভাষা।

অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম ছিলেন The Daily Star পত্রিকার নিয়মিত কলাম লেখক। তাঁর লেখায় প্রতিফলিত হতো এক সহৃদয় বুদ্ধিজীবীর কণ্ঠ; যিনি বিশ্বাস করতেন, “সাহিত্য কেবল নন্দনের অনুশীলন নয়, এটি সমাজের আত্মপরিচয়ের আয়না।” তিনি পাঠককে শিখিয়েছেন কীভাবে সাহিত্য জীবনের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে, এবং মানবতার সঙ্গে যুক্ত হয়।

তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তিনি ছিলেন শিক্ষক নন, বরং এক আলোকিত পথ প্রদর্শক। ক্লাসরুমে কিংবা করিডোরে, তিনি শুধু পাঠদান করতেন না; চিন্তা করতে শেখাতেন। তাঁর মৃত্যুতে শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পুরো দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডল হারিয়েছে এক নৈতিক অভিভাবককে।

অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমাণ করেছেন; “শিক্ষা কোনো পেশা নয়, এটি এক আজীবন সাধনা।” তাঁর জীবন ছিল এক দীর্ঘ সৃজন যাত্রা; যেখানে মানুষ, ভাষা ও চিন্তা মিলেমিশে গড়ে তুলেছিল এক মানবিক মহাকাব্য।

আজ আমরা কেবল একজন মানুষকে নয়, হারিয়েছি ইংরেজি সাহিত্যের এক অভিভাবককে; যার প্রজ্ঞা, সৌম্যতা ও সৃষ্টিশীলতার ছায়া আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার আকাশে চিরকাল জ্বলজ্বল করবে।

লেখক:
শেখ জাহাঙ্গীর হাসান মানিক
অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর শিক্ষায় ও প্রেরণায় বেড়ে ওঠা এক সাহিত্য চিন্তার অনুসারী।