মহেশখালীর কালারমারছড়া ভূমি অফিসের অস্থায়ী কম্পিউটার অপারেটর ফয়সালের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, কালারমারছড়া ভূমি অফিসের অস্থায়ী কম্পিউটার অপারেটর ফয়সালকে ঘুষ না দিলে দাখিলা নিতে যাওয়া সেবাপ্রার্থীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। সরকারি করমূল্যের বাইরে বিপুল অংকের ঘুষ না দিলে দাখিলা, নামজারি, খাজনা বা ভূমি অফিসে সরকারি ফি সংক্রান্ত কোনো কাজ করা যায় না।
ফয়সাল নিজের নিয়ন্ত্রণে গড়ে তুলেছে একটি দালাল চক্র। কখনও নিজে সরাসরি টেবিলেই দর কষাকষি করেন। কখনো বা তার অধীনস্থ দালাল পাঠিয়ে ঘুষ আদায় করেন। সরকারি করমূল্যের চেয়ে অধিক টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়সাল প্রায়শই সেবাপ্রার্থীদের বলেন, “উপরে দিতে হয়, তাই বেশি লাগবে।” সেই উপরের লোক কারা জানতে চাইলে ফয়সাল এড়িয়ে যান।
ভুক্তভোগীদের একজন আমির হোসেন জানান, সরকারি ৪২০ ও ৩৮’শ টাকার কর পরিশোধ করে দাখিলা নেওয়ার জন্য কালারমারছড়া ভূমি অফিসের ফয়সাল কে সাড়ে ৩০ হাজার, ১১ হাজার ও সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে তিন দফা ঘুষ দিতে হয়েছে। এসব টাকা সে নিজ হাতে নিয়েছে বলে জানান এই ভুক্তভোগী।
অপর এক ভুক্তভোগী জানান, মাত্র ২৭’শ টাকার সরকারি কর পরিশোধ করলেও তার কাছ থেকে আদায় করা হয় ৩০,৫০০ টাকা। অর্থ লেনদেনের পরেও তাকে একাধিকবার অফিসে ঘুরতে হয়েছে বিভিন্ন অজুহাতে। অভিযোগকারীদের মতে, তহসিলদারসহ অফিসের কয়েকজন কর্মচারীকে নিয়ে একটি স্থায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না দিলে কোনো আবেদনই এগোয় না।
ভুক্তভোগীরা জানান, এসব অনিয়ম নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের কাজে বিলম্ব, ভুল দাখিলা বা নতুন জটিলতা সৃষ্টি করে হয়রানি করা হয়।
এই বিষয়ে জানতে কালারমারছড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি কর্মকর্তা (তহসিলদার) মো. রিদুয়ানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার বিষয়ে আনা এসব অভিযোগ সত্য নয়। তার অফিসের কম্পিউটার অপারেটর ফয়সালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন “তার ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না”।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কালারমারছড়া ভূমি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর ফয়সালের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আবু জাফর মজুমদার জানান, এই বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে এবং কালারমারছড়া ভূমি অফিসের তহসিলদারকে শোকজ করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছর আগে কালারমারছড়া ভূমি অধিগ্রহণে সেবাপ্রার্থীদের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য ফয়সালকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়েছিল কালারমারছড়া ভূমি অফিস। সেখান থেকে কিভাবে কম্পিউটার অপারেটর বনে গেলো তা বোধগম্য নয়। সে কম্পিউটার অপারেটর হয়ে এই অনৈতিক কর্মকান্ডের সম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। একজন কম্পিউটার অপারেটরের হাতে ভূমি অফিসের পুরো সিস্টেম জিম্মি হয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।
ভূমি সেবাপ্রার্থী ও ভুক্তভোগীরা জানান, তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং এই ঘুষ লেনদেনের সিন্ডিকেটে আরও কারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।
নিজস্ব প্রতিবেদক 























