২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে নতুন করে ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় পায়। ৮ বছর অতিবাহিত হতে চললেও প্রত্যাবাসন দেখেনি আলোর মুখ, বরং সর্বশেষ ২০২৪ সালে নতুন অনুপ্রবেশসহ বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৩ লাখ।
শুরুর দিকে মানবিক সহায়তা এবং ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই জনগোষ্ঠীর অনেকেই শিবিরের সীমা ছাড়িয়ে স্থানীয় অর্থনীতির অংশ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে শ্রমবাজারে। ফলে ব্যাপক চাপে পড়েছে কক্সবাজারের স্থানীয় দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ।
প্রতিদিন ক্যাম্প প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শত শত রোহিঙ্গা নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক কিংবা খণ্ডকালীন কাজের জন্য বেরিয়ে পড়েন।
স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে দেখা গেছে- কমপক্ষে ১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়মিতভাবে কোনো না কোনোভাবে শ্রম বাজারে যুক্ত আছে। তাদের বেশিরভাগই ইটভাটা, নির্মাণ সাইট,কৃষিক্ষেত্র, ছোটখাটো দোকান সহ বিভিন্ন খাতে কম মজুরিতে কাজ করছে।
স্থানীয় শ্রমিকদের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা স্বাভাবিক মজুরির অর্ধেক বা তারও কমে কাজ করতে রাজি থাকায় তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
উখিয়ার কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, “গত মৌসুমে আমার বাগানে কাজ করত ৮ জন স্থানীয় শ্রমিক। এবার রোহিঙ্গারা ২৫০ টাকায় কাজ করতে চায়, ফলে স্থানীয়দের বাদ দিতে হয়েছে।”
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (BIDS)-এর ২০২৩ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, কক্সবাজারের স্থানীয় শ্রমজীবীদের মধ্যে বেকারত্বের হার গত পাঁচ বছরে ১৪% থেকে বেড়ে ২২%-এ দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে বড় একটি কারণ হিসেবে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের অনুপ্রবেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্থানীয় যুবকরা কর্মসংস্থান না পেয়ে মাদকের চালান, মানবপাচার ও চোরাচালানের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জড়িয়ে পড়ছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের একটি গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হোসাইন বলেন, “আমরা নিয়মিত ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের চলাচল নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাই। তবে জনবল ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতায় পুরোপুরি রোধ করা যাচ্ছে না।”
জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান , “রোহিঙ্গারা স্থানীয় সিম ব্যবহার করে বাইরে যোগাযোগ করছে, নকল জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করছে এমনকি কিছু রোহিঙ্গা বর্তমানে টমটম চালাতেও দেখা যাচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, রোহিঙ্গাদের মানবিক সুরক্ষা ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে গিয়ে বাংলাদেশের উপর বিশাল বোঝা পড়েছে। তবে সরকার এখনো রোহিঙ্গাদের শ্রমবাজারে বৈধ প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।
এদিকে কোনো নির্দিষ্ট আইন না থাকায় নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।