“একজন মানুষের জন্ম মৃত্যু আমাদের হাতে, তাহলে আমরাই কেন নির্যাতনের শিকার হবো? আমরা মানুষের শরীর থেকে রক্ত মোছার কাজ করি, কিন্তু এখন আমাদের রক্ত কে মুছবে? ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।”
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমাকে ডিগ্রি সমমান করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
সোমবার সকালে কক্সবাজার হাসপাতাল সড়কে এক প্রতিবাদী কর্মসূচী আয়োজন করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীরা।
ডিপ্লোমাকে ডিগ্রী সমমান মর্যাদা দেওয়া এবং সহপাঠীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এসময় এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের আন্দোলন এবং দাবিসমূহের বিষয়ে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (বি.এন.এম.সি) কে অবগত করেছি। তবে তাদের পক্ষ থেকে কোন উত্তর না আসায় আমাদের কিছু শিক্ষার্থী বি.এন.এম.সি কার্যালয়ের সামনে গেলে তাদের ওপর পুলিশি হামলা করা হয়।আমরা এ হামলার বিচার চাই।”
দাবি আদায় ও হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার হুঁশিয়ারি দিয়ে এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, “আমাদের দাবিগুলো কোন অযৌক্তিক দাবি নয়। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাবি আদায় করেই আমরা শিক্ষাঙ্গনে ফিরবো। অন্যথায় আরো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।”
ডিপ্লোমাকে ডিগ্রী সমমান করা দাবি নয় অধিকার জানিয়ে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা এইচএসসি সম্পন্ন করার পর তিন বছর সম্পূর্ণ ইংরেজি ভার্সনে ডিপ্লোমার পড়ালেখা সম্পন্ন করেছি। পাশাপাশি ছয় মাসের ইন্টার্ণশিপও করেছি। তবুও আমাদেরকে কেন এইচএসসি সমমান স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে?”
প্রশাসনের কাছে জবাব চেয়ে এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ডিপ্লোমাকে ডিগ্রি সমমান মর্যাদা দেওয়া একটি যৌক্তিক দাবি। এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (বি.এন.এম.সি) এর সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর কেন হামলা করা হলো?এই হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।
বাংলাদেশের নার্সদের উপর বৈষম্য হচ্ছে জানিয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের দেশে শুধুমাত্র বিএসসি সম্পন্নকারীদের অনার্স সমমান মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে আমরা তো অনার্স সম্মানের মর্যাদা চাইছি না, চাইছি ডিগ্রি সমমানের মর্যাদা।”
বৈষম্যের কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, অন্যান্য দেশের নার্সরা তাদের অধিকারগুলো আদায় করে নেয়। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকার আদায়ের জন্য আওয়াজ তুললে হতে হয় নির্যাতনের শিকার।
এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “ডিগ্রী সম্পন্ন করতে যেমন সময় লাগে তিন বছর ঠিক তেমনি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করতেও তিন বছর সময় লাগে। এর বাইরে ইন্টার্ণশিপ তো আছেই।তাহলে আমাদের এই আন্দোলন অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।”
এই প্রাসঙ্গিক আন্দোলনে হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই সহপাঠী বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নিলে আমরা আরো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।
২১ এপ্রিল থেকে চলমান এই আন্দোলনে কর্তৃপক্ষের দায়সারা মনোভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে রবিবার নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীরা বি.এন.এম.সি কার্যালয়ের সামনে গেলে তাদের উপর হামলা চালায় পুলিশ। সেই হামলার প্রতিবাদে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে।