ঢাকা ০৯:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
“ এফ-কমার্স এন্ড ডিজিটাল মার্কেটিং ” শীর্ষক প্রশিক্ষণের সনদ বিতরণ সম্পন্ন কক্সবাজারে দুর্যোগ প্রস্তুতি মহড়া ও র‍্যালী অনুষ্ঠিত উখিয়ায় ঢালুতে আটকে আছে মালবাহী লরি! দীর্ঘ যানজট হলেও জানেন না হাইওয়ে ওসি মাগুরার শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে কক্সবাজার এসে পর্যটকদের আর চিন্তা নেই এসে গেছে ‘ভ্রমণিকা’ অ্যাপ শুক্রবার কক্সবাজার আসছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব জামালপুরের ‘যৌনপল্লী’ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প – মাদকের এডি দিদারুলের যত অপকর্ম! সাংবাদিককে ফাঁসাতে কক্সবাজার মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের লাইভ নাটক! “আমার বোনের কান্না, আর না-আর না” পেকুয়ার বানৌজা শেখ হাসিনা নৌঘাঁটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে বানৌজা পেকুয়া পেকুয়ার নৌঘাঁটি সহ সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা-স্থাপনার নাম পরিবর্তন ধর্ম উপদেষ্টা কক্সবাজার আসছেন সোমবার: জেলা মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন চকরিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান: ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা মব ভায়োল্যান্স সৃষ্টিকারী সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: মাহফুজ আলম ব্যারিস্টার সাফফাত ফারদিন চৌধুরী – মরিচ্যাপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন সভাপতি

রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের সর্বোত্তম সময়

শবেবরাত তথা নিফসে শাবানের রাত (শাবান মাসের মধ্য রজনী) গত হয়েছে। মহিমান্বিত মাস রমজান সমাগত। এখন থেকেই প্রয়োজন তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। যেন রমজানের যাবতীয় কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের দুই মাস আগ থেকেই রমজান লাভের দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৩৬৯)
নিঃসন্দেহে এই দোয়া ছিল রমজানের জন্য নবীজি (সা.)-এর মানসিক প্রস্তুতি। উল্লিখিত হাদিসের আলোকে বুজুর্গ আলেমরা বলেন, রজব হলো বীজ রোপণের মাস, শাবান পানি সিঞ্চনের মাস আর রমজান ফসল ঘরে তোলার মাস।’

নিম্নে রমজানের প্রস্তুতিমূলক কিছু কাজের বিবরণ তুলে ধরা হলো।

প্রস্তুতি গ্রহণের সর্বোত্তম সময় : হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী মুমিন রজব মাস থেকে রজমানের প্রস্তুতি শুরু করবে। তবে যারা রজব থেকে শুরু করতে পারেনি, তাদের জন্য সর্বোত্তম সময় শাবান মাস। মহানবী (সা.) শাবান মাসের ব্যাপারে যারা উদাসীন তাদের সতর্ক করেছেন। উসামা বিন জায়িদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘…রাসুল (সা.) বলেন, রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে।

এটা এমন মাস, যে মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭)
বেশি বেশি রোজা রাখা : শাবান মাসে মহানবী (সা.) অধিক পরিমাণ রোজা রাখতেন। সুতরাং মুমিন ব্যক্তি রোজা রেখে রমজানের প্রস্তুতি নিতে পারেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা পালন করতে দেখিনি।

’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮)
বিশেষ করে কারো যদি বিগত রমজানে কোনো রোজা কাজা হয়ে থাকে তা আদায় করে নেওয়া উত্তম। তবে মনে রাখতে হবে, নবীজি (সা.) রমজানের এক বা দুদিন আগে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮১৫)

কাজ গুছিয়ে রাখা : রমজান ইবাদতের মাস। তাই রমজানের আগেই যদি পারিবারিক, ব্যাবসায়িক ও পেশাগত কাজগুলো গুছিয়ে রাখা যায়, তবে রমজানে অধিক সময় ইবাদতে মগ্ন থাকা যাবে। বিশেষত নারীরা সাংসারিক কাজ গুছিয়ে রাখলে তারা ইবাদতে বেশি সময় দিতে পারবেন।

জাকাত ও দানের প্রস্তুতি : মহানবী (সা.) রমজানে বেশি বেশি দান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬)

তাই রমজানে দানের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। যদিও জাকাত প্রদানের নির্ধারিত কোনো মাস নেই। তবু আলেমরা বলেন, রমজানে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তি অধিক সাওয়াবের অধিকারী হতে পারে।

কোরআন পাঠ ও তাহাজ্জুদ : রমজানে মহানবী (সা.)-এর দুটি প্রিয় আমল ছিল কোরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। রমজানে নবীজি (সা.) তাঁর পরিবারকে তাহাজ্জুদের জন্য ডেকে দিতেন। আর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রজমানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তারা পরস্পরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬)

চাঁদের হিসাব রাখা : রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রাখতেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মাসের এত হিসাব করতেন না। এরপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘলা থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)

প্রস্তুতি কেন নেব? : রমজান মাসকে অধিক ফলপ্রসূ করতে রমজানের আগে প্রস্তুতি নেওয়ার কারণ হলো—নিজেকে ইবাদত, বন্দেগি ও সাধনার জন্য প্রস্তুত করা। যেন রমজানের আগেই আলস্য দূর হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য আল্লাহর তাওফিক লাভ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে চেষ্টা-সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

আল্লাহ সবাইকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দিন। আমিন।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

“ এফ-কমার্স এন্ড ডিজিটাল মার্কেটিং ” শীর্ষক প্রশিক্ষণের সনদ বিতরণ সম্পন্ন

This will close in 6 seconds

রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের সর্বোত্তম সময়

আপডেট সময় : ০৬:১৩:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শবেবরাত তথা নিফসে শাবানের রাত (শাবান মাসের মধ্য রজনী) গত হয়েছে। মহিমান্বিত মাস রমজান সমাগত। এখন থেকেই প্রয়োজন তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। যেন রমজানের যাবতীয় কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের দুই মাস আগ থেকেই রমজান লাভের দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৩৬৯)
নিঃসন্দেহে এই দোয়া ছিল রমজানের জন্য নবীজি (সা.)-এর মানসিক প্রস্তুতি। উল্লিখিত হাদিসের আলোকে বুজুর্গ আলেমরা বলেন, রজব হলো বীজ রোপণের মাস, শাবান পানি সিঞ্চনের মাস আর রমজান ফসল ঘরে তোলার মাস।’

নিম্নে রমজানের প্রস্তুতিমূলক কিছু কাজের বিবরণ তুলে ধরা হলো।

প্রস্তুতি গ্রহণের সর্বোত্তম সময় : হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী মুমিন রজব মাস থেকে রজমানের প্রস্তুতি শুরু করবে। তবে যারা রজব থেকে শুরু করতে পারেনি, তাদের জন্য সর্বোত্তম সময় শাবান মাস। মহানবী (সা.) শাবান মাসের ব্যাপারে যারা উদাসীন তাদের সতর্ক করেছেন। উসামা বিন জায়িদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘…রাসুল (সা.) বলেন, রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে।

এটা এমন মাস, যে মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭)
বেশি বেশি রোজা রাখা : শাবান মাসে মহানবী (সা.) অধিক পরিমাণ রোজা রাখতেন। সুতরাং মুমিন ব্যক্তি রোজা রেখে রমজানের প্রস্তুতি নিতে পারেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা পালন করতে দেখিনি।

’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮)
বিশেষ করে কারো যদি বিগত রমজানে কোনো রোজা কাজা হয়ে থাকে তা আদায় করে নেওয়া উত্তম। তবে মনে রাখতে হবে, নবীজি (সা.) রমজানের এক বা দুদিন আগে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮১৫)

কাজ গুছিয়ে রাখা : রমজান ইবাদতের মাস। তাই রমজানের আগেই যদি পারিবারিক, ব্যাবসায়িক ও পেশাগত কাজগুলো গুছিয়ে রাখা যায়, তবে রমজানে অধিক সময় ইবাদতে মগ্ন থাকা যাবে। বিশেষত নারীরা সাংসারিক কাজ গুছিয়ে রাখলে তারা ইবাদতে বেশি সময় দিতে পারবেন।

জাকাত ও দানের প্রস্তুতি : মহানবী (সা.) রমজানে বেশি বেশি দান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬)

তাই রমজানে দানের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। যদিও জাকাত প্রদানের নির্ধারিত কোনো মাস নেই। তবু আলেমরা বলেন, রমজানে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তি অধিক সাওয়াবের অধিকারী হতে পারে।

কোরআন পাঠ ও তাহাজ্জুদ : রমজানে মহানবী (সা.)-এর দুটি প্রিয় আমল ছিল কোরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। রমজানে নবীজি (সা.) তাঁর পরিবারকে তাহাজ্জুদের জন্য ডেকে দিতেন। আর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রজমানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তারা পরস্পরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬)

চাঁদের হিসাব রাখা : রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রাখতেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মাসের এত হিসাব করতেন না। এরপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘলা থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)

প্রস্তুতি কেন নেব? : রমজান মাসকে অধিক ফলপ্রসূ করতে রমজানের আগে প্রস্তুতি নেওয়ার কারণ হলো—নিজেকে ইবাদত, বন্দেগি ও সাধনার জন্য প্রস্তুত করা। যেন রমজানের আগেই আলস্য দূর হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য আল্লাহর তাওফিক লাভ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে চেষ্টা-সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

আল্লাহ সবাইকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দিন। আমিন।