পুতিনের সাম্প্রতিক ভারত সফরকে অনেকেই শুধুই এনার্জি বাণিজ্য বা তেল বিক্রির উদ্যোগ মনে করছেন। কিন্তু বাস্তবে এই সফর তার চেয়ে অনেক গভীর রাজনৈতিক ও কৌশলগত বার্তা বহন করে। ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে এসে যে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেন, তা আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্যে ভারতের বিশেষ অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই “স্বাধীন কূটনীতি” বজায় রাখছে। পশ্চিমা চাপ বা নিষেধাজ্ঞার পরিবেশেও দিল্লি রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি; আবার একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দশ বছরের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি নবায়ন করেছে। এই দুই বৈপরীত্যকে একসাথে ধরে রাখাই ভারতের কূটনীতির বিশেষ শক্তি। তাই পুতিনের সফরকে আমেরিকার সঙ্গে কোন গোপন বিরোধের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা ঠিক হবে না; বরং এটি ভারতের বহুমুখী ভারসাম্য রক্ষার কৌশলেরই ধারাবাহিকতা।
চীন এ মুহূর্তে এশিয়ার শক্তির কেন্দ্রবিন্দু, তার একদিকে ভারত সীমান্তে চাপ, অন্যদিকে জাপানের সঙ্গে উত্তেজনা। এই জটিল পরিবেশে রাশিয়া–ভারত ঘনিষ্ঠতা চীনকেও সতর্ক রাখে, আবার প্রয়োজন হলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধাও দেয়। চীন যখন প্রকাশ্যে “চীন–ভারত–রাশিয়া জোট” কে বৈশ্বিক ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলছে, তখন এটি শুধু সৌজন্য মূলক বিবৃতি নয়, বরং প্রমাণ করে যে এশিয়ায় শক্তির নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ভিন্ন। ইউরোপ যদি রাশিয়া ও চীনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তবে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি বাড়ে, এটাই বাস্তব। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সহযোগিতা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। তাই ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে দিল্লি–মস্কো উষ্ণতা সবসময় উদ্বেগের, কিন্তু সরাসরি বাধা দেওয়ার মতো অবস্থান নেই।
সব মিলিয়ে পুতিনের ভারত সফর কেবল দুই দেশের বাণিজ্য নয়, বরং রাশিয়া, ভারত, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি ও শক্তির রেখা পুনর্গঠনের ইঙ্গিত। এটি প্রমাণ করে, আগামী দিনের এশিয়া শুধু অর্থনৈতিক কেন্দ্র নয়, বরং বৈশ্বিক কৌশল এবং শক্তির সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রও হবে।
লেখক-শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক, চিন্তক ও গবেষক।
শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক 























