দীর্ঘ ৮ মাস পর ১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়ত। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জারি করা ১২ টি শর্তের বেড়াজালে নভেম্বর মাসে দ্বীপটিতে রাত্রিযাপনের সুযোগ না থাকায় পর্যটকদের দিনে গিয়ে দিনেই ফিরতে হবে। এ নিয়ে দীর্ঘ সময়ক্ষেপন করে সমুদ্রপথে যাত্রা দিয়ে অল্প সময়ের জন্য সেন্টমার্টিন যেতেআগ্রহী নন পর্যটকরা- এমনটাই বলছেন, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি পাওয়া মালিকপক্ষ। এতে নভেম্বর মাসে দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়ত নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আর সরকারের দেয়া ১২ টি শর্তে হতাশা প্রকাশ করে দ্বীপের বাসিন্দাদের দাবি, নভেম্বর মাসেও যেন পর্যটকদের রাত্রিযাপনের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতিমধ্যে সরকার পর্যটকবাহী ৬ টি জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সরকারি বিধি-নিষেধ মেনে পর্যটক যাতায়তের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সুনীল জলরাশির বঙ্গোপসাগরের বুকে সাড়ে ৮ বর্গকিলোমিটারের দেশের সর্বশেষ ভূখন্ড প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন; আর দ্বীপটির অপার সৌন্দর্য্য উপভোগে প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে যাতায়ত করে হাজারো পর্যটক। এতে অতিরিক্ত মানুষের আনাগোনায় হুমকিতে পড়ে দ্বীপটির পরিবেশ-প্রতিবেশ। এ নিয়ে গত ২০২১ সাল থেকে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়ত নিয়ন্ত্রণসহ নানা বিধি-নিষেধ আরোপ শুরু করে। সর্বশেষ গত বছর নভেম্বর মাসে দ্বীপটিতে রাত্রিযাপনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি পর্যটকদের যাতায়তও সীমিতকরণ করে বিধি-নিষেধ জারি।
এদিকে গত প্রায় ২ বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্টি আরাকান আর্মির সাথে সে দেশের সরকারের সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। এর মধ্যে এই সংঘাতে জড়িয়েছে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্টিগুলোও। এতে গত ২০২৩ সাল থেকে নিরাপত্তার কারনে নাফ নদীর টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট হতে সেন্টমার্টিনে যাতায়তকারি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বিকল্প পথ হিসেবে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়া আইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ রুটে সময়ক্ষেপন করে দীর্ঘ সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে অল্পসময়ের জন্য পর্যটকদের দ্বীপ ভ্রমণ এবং নভেম্বর মাসে রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিধি-নিষেধ আরোপের কারণে দেখা দেয় বিপত্তি। এতে দ্বীপ ভ্রমনে অধিকাংশ পর্যটকদের দেখা দেয় অনাগ্রহ।
এ নিয়ে সী ক্রুজ অপারেটর অনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ,স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে গিয়ে সময়ক্ষেপনের পাশাপাশি বাঁকখালী নদীর মোহনায় অনেক সময় ডুবোচরে জাহাজ আটকে যায়। এতে দুর্ভোগ ছাড়াও অল্পসময়ের জন্য দ্বীপ ভ্রমনে আগ্রহ হারিয়েছে পর্যটকরা। যদি নভেম্বর মাসে রাত্রিযাপনের জন্য সুযোগ থাকতো তাহলে কিছু সংখ্যক হলেও পর্যটক যেতে আগ্রহ দেখাতেন। এখন সেই সুযোগ না থাকায় নভেম্বর মাসে অনুমতি থাকা স্বত্তেও জাহাজ চলাচল নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার,টুয়াকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম সাদেক লাবু বলেন,সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ করে রক্ষা করে কিভাবে পর্যটক যাতায়তের ব্যবস্থা নেওয়া যায়- তার একটি সুব্যবস্থা করতে হবে। যাতে পরিবেশ ও পর্যটন দু’টিকেই বাঁচানো যায়।
সেন্টমার্টিনের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন,ট্রাভেল পাস, নভেম্বর রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ, ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ, প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে প্রবেশ করতে পারার যে নিয়ম জারি করা হয়েছে তাতে গোটা পর্যটন খাতটাই ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।তেমনি পর্যটন নির্ভর দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকাও পড়েছে গভীর সংকটে। ইতিমধ্যে অনেক দ্বীপবাসী জীবিকার তাগিদে দ্বীপান্তরও করছেন।
এ নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান বলছেন, সরকারের জারি বিধি-নিষেধ মেনে আগামী ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন পর্যটক যাতায়ত শুরু হবে। ইতিমধ্যে পর্যটকবাহী ৬ টি জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ট্যুরিজম বোর্ডের অ্যাপসের মাধ্যমে বুকিং দিয়ে পর্যটকদের ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। ইতিমধ্যে প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আর দ্বীপবাসীর জীবিকার সংকট নিরসন এবং পর্যটকদের ভ্রমন নির্বিঘ্ন করতে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে প্রশাসন তা আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়নে কাজ করবে।
অনুমতি পেলেও জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহের কারণে ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচলে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আবার পর্যটক না গেলে দ্বীপের মানুষের জীবিকার সংকট দেখা দিবে। অন্যদিকে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষাও জরুরি। এমন অবস্থায় পর্যটন ও পরিবেশ দুটো রক্ষায় নিতে হবে উদ্যোগ, এমনটাই দাবী সচেতন মহলের।
নিজস্ব প্রতিবেদক: 















