ঢাকা ১২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
পাবনায় ট্রাকচাপায় বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩ কি হতে পারে: নির্বাচন, না নতুন অন্তর্বর্তী সরকার? ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সড়ক ছাড়লো বাসটার্মিনাল এলাকার বাসিন্দারা টেকনাফ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক: দলীয় লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন উখিয়ায় পুলিশের পৃথক অভিযানে মিলল ১০ হাজার ইয়াবা ওপার থেকে ছোড়া গুলি পায়ে বিঁধলো নারীর খুনিয়া পালংয়ে চলন্তগাড়িতে ফিল্মি কায়দায় ডা’কা’তি, মোবাইলও টাকা ছিনতাই চকরিয়ায় ফের ২ মোটরসাইকেল আরোহীর মৃ’ত্যু সেন্ট মার্টিন দখলকারীদের বিরুদ্ধে জোরালো বার্তা দিয়েছি: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উখিয়ায় ৮ খুদে হাফেজার কোরআন সবিনা খতম উপলক্ষে নানান আয়োজন বাবার সাথে মাছ ধরতে গিয়ে রেজুখালে স্কুল শিক্ষার্থী নিখোঁজ মহেশখালীর যুবদল নেতা রিয়াদ মোহাম্মদ আরফাতের অকাল মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদের শোক রামু বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রে কঠিন চীবর দান সম্পন্ন বসতি বে রিসোর্টের সাথে লুৎফর রহমান কাজলের সম্পৃক্ততা নেই – কর্তৃপক্ষ নির্বাচনি জোট নিয়ে কোনো দলের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: আখতার

রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ যৌন নিপীড়ন, বলছে গবেষণা

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের জন্য যৌন হয়রানিই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এনজিও অ্যাকশনএইডের রোববার প্রকাশিত এক গবেষণা এই তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের ভয়াবহ সংকটের চিত্র উঠে এসেছে।

২০১৭ সালের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর রক্ত অভিযানের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে পালিয়ে আসেন। বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে প্রায় দশ লাখ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করছেন। এসব জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরের ৬৬ রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীর বিস্তারিত স্বাক্ষাৎকার ভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার পর ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যাকশনএইড।

অ্যাকশনএইডের নীতি, গবেষণা বিষয়ক ব্যবস্থাপক তামাজের আহমেদ বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যৌন হয়রানিই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।’’ তিনি বলেন, শরণার্থী শিবিরগুলোতে বাল্য বিবাহ ও বহুবিবাহ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া ৯৩ শতাংশ নারী ও কিশোরী কোনও ধরনের আইনি সহায়তার আওতায় নেই।

অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, শুধু পরিবারের পরিচিত পুরুষদের কাছ থেকেই নয়, বরং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছেও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন নারী ও কিশোরীরা।

তামাজের আহমেদ বলেন, শরণার্থী শিবিরের নারীরা বলেছেন, প্রথম দিকে মূলত মৌলিক চাহিদা পূরণের অভাব ছিল বড় সমস্যা, কিন্তু এখন তা রূপ নিয়েছে কাঠামোগত নির্যাতনে। বর্তমানে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীরা প্রায়ই শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, পাচার, দারিদ্র্য, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এমনকি মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন।

শরণার্থী শিবিরে ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের সঙ্গে যৌন হয়রানির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে শৌচাগার ও গোসলখানার আশপাশে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের বিতরণ কেন্দ্র, হাসপাতাল, স্কুল-মাদরাসা, সীমান্ত অঞ্চলের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের বাসা-বাড়িতেও রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীরা নিরাপদ নয়। রোহিঙ্গা সমাজে গভীরভাবে জেঁকে বসা পিতৃতন্ত্র বিরাজ করছে।

অ্যাকশনএইডের নির্বাহী পরিচালক ফারাহ কবির বলেন, ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারীদের মতামতই এই গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

জরিপে অংশ নেওয়া নারীরা কর্তৃপক্ষকে শরণার্থী শিবিরের জনসমাগমস্থলে আলো বৃদ্ধি, এপিবিএন সদস্যদের পরিবর্তে সেনাসদস্য মোতায়েন, পুরুষদের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা ও শিক্ষা এবং জীবিকায় প্রবেশাধিকারের সুযোগ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ধর্মীয় নেতাদের প্রতি আস্থা কম বলে জরিপে অংশ নেওয়া অনেক নারী ও কিশোরী জানিয়েছেন। তারা বলছেন, নির্যাতনের শিকার হলে তাদের কার্যত কোথাও যাওয়ার উপায় থাকে না।

তবে এপিবিএনের কমান্ডিং অফিসার কাউসার শিকদার বলেছেন, বাহিনীর বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনও অভিযোগের বিষয়ে তাদের জানা নেই। ২০২৪ সালের শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে মিয়ানমার থেকে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে পালিয়ে এসেছেন।

সূত্র: এএফপি।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

পাবনায় ট্রাকচাপায় বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩

This will close in 6 seconds

রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ যৌন নিপীড়ন, বলছে গবেষণা

আপডেট সময় : ০৬:৩৯:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের জন্য যৌন হয়রানিই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এনজিও অ্যাকশনএইডের রোববার প্রকাশিত এক গবেষণা এই তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের ভয়াবহ সংকটের চিত্র উঠে এসেছে।

২০১৭ সালের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর রক্ত অভিযানের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে পালিয়ে আসেন। বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে প্রায় দশ লাখ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করছেন। এসব জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরের ৬৬ রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীর বিস্তারিত স্বাক্ষাৎকার ভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার পর ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যাকশনএইড।

অ্যাকশনএইডের নীতি, গবেষণা বিষয়ক ব্যবস্থাপক তামাজের আহমেদ বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যৌন হয়রানিই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।’’ তিনি বলেন, শরণার্থী শিবিরগুলোতে বাল্য বিবাহ ও বহুবিবাহ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া ৯৩ শতাংশ নারী ও কিশোরী কোনও ধরনের আইনি সহায়তার আওতায় নেই।

অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, শুধু পরিবারের পরিচিত পুরুষদের কাছ থেকেই নয়, বরং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছেও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন নারী ও কিশোরীরা।

তামাজের আহমেদ বলেন, শরণার্থী শিবিরের নারীরা বলেছেন, প্রথম দিকে মূলত মৌলিক চাহিদা পূরণের অভাব ছিল বড় সমস্যা, কিন্তু এখন তা রূপ নিয়েছে কাঠামোগত নির্যাতনে। বর্তমানে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীরা প্রায়ই শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, পাচার, দারিদ্র্য, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এমনকি মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন।

শরণার্থী শিবিরে ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের সঙ্গে যৌন হয়রানির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে শৌচাগার ও গোসলখানার আশপাশে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের বিতরণ কেন্দ্র, হাসপাতাল, স্কুল-মাদরাসা, সীমান্ত অঞ্চলের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের বাসা-বাড়িতেও রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীরা নিরাপদ নয়। রোহিঙ্গা সমাজে গভীরভাবে জেঁকে বসা পিতৃতন্ত্র বিরাজ করছে।

অ্যাকশনএইডের নির্বাহী পরিচালক ফারাহ কবির বলেন, ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারীদের মতামতই এই গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

জরিপে অংশ নেওয়া নারীরা কর্তৃপক্ষকে শরণার্থী শিবিরের জনসমাগমস্থলে আলো বৃদ্ধি, এপিবিএন সদস্যদের পরিবর্তে সেনাসদস্য মোতায়েন, পুরুষদের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা ও শিক্ষা এবং জীবিকায় প্রবেশাধিকারের সুযোগ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ধর্মীয় নেতাদের প্রতি আস্থা কম বলে জরিপে অংশ নেওয়া অনেক নারী ও কিশোরী জানিয়েছেন। তারা বলছেন, নির্যাতনের শিকার হলে তাদের কার্যত কোথাও যাওয়ার উপায় থাকে না।

তবে এপিবিএনের কমান্ডিং অফিসার কাউসার শিকদার বলেছেন, বাহিনীর বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনও অভিযোগের বিষয়ে তাদের জানা নেই। ২০২৪ সালের শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে মিয়ানমার থেকে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে পালিয়ে এসেছেন।

সূত্র: এএফপি।