ঢাকা ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
দ্বৈত বার্তা: বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসংঘের কূটনৈতিক রহস্য মহেশখালীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হামলায় আহত ফোরকান চমেকে মারা গেছেন সড়ক অবরোধ, ১ ঘন্টা পর স্বাভাবিক যান চলাচল কানের দুলের জন্যে প্রাণ কেড়ে নিলো কন্যা শি’শুর! শিক্ষকের মর্যাদা, শিক্ষার মান- দুটোই হোক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার সব প্রস্তুতি নিয়েও যেকারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে দেরি কক্সবাজার বিমানবন্দর ‘কুকুর’ ধরলো রাজমিস্ত্রীর ইয়াবা টেকনাফে মানব পাচারে ‘জিরো টলারেন্স’ বলছে বিজিবি পালংখালী জামায়াতের কর্মী সমাবেশে জেলা আমীর আনোয়ারী-ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দাঁড়ি পাল্লার বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন টেকনাফে ১৪ মামলার পলাতক আসামী মুন্না র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার বিএফইউজে’র নির্বাহী পরিষদের সভায় সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার’র কমিটি অনুমোদন কক্সবাজার সৈকতে ‘লোক সমুদ্র’ ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ বাস্তবায়নে কক্সবাজারে ৫টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন নৌবাহিনীর নারী নেতৃত্বকে জাতির গৌরব বললেন লুৎফুর রহমান কাজল কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সভায় বক্তারা: ‎কুতুবদিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটনের বিকল্প নেই ‎

দ্বৈত বার্তা: বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসংঘের কূটনৈতিক রহস্য

জাতিসংঘের বাংলাদেশে আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস ৪ জুন বলেছেন, “আওয়ামী লীগ না থাকলেও নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে।” কিন্তু ৫ অক্টোবর তিনি বলেন, “সব দল নির্বাচনে যুক্ত হবে, আশা করি।” একই ব্যক্তির এই বিপরীতমুখী বার্তা অনেককে বিভ্রান্ত করেছে। এটি কি কেবল কূটনৈতিক ভদ্রতা, নাকি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দ্বিধার সৃষ্টি করার এক নিখুঁত উদাহরণ?

জাতিসংঘ চাইছে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে, যাতে তাদের মানবিক কার্যক্রমে বাধা না আসে। বড় দাতা দেশগুলোর চাপও এখানে কাজ করছে। নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য তারা মাঝে মাঝে ‘আশা করি সব দল অংশ নেবে’ ধরনের নরম বার্তা দেয়। কিন্তু এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলো mixed signal নিয়ে বিভ্রান্ত হয়, সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যায়, এবং সংলাপের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশেও একই ঘটনা দেখা গেছে। লিবিয়ায় ২০১১ সালে কঠোর নীতি এবং পরে সমন্বয়মূলক বার্তা দেশকে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। রুয়ান্ডায় ১৯৯৪ সালে গণহত্যা প্রতিরোধে বিলম্বিত পদক্ষেপ এবং দ্বৈত বার্তা ফাটল তৈরি করেছে। সিরিয়ায় নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো এবং রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে সংঘাত দীর্ঘায়িত হয়েছে। এই উদাহরণ গুলো স্পষ্ট করে দেখায়, দ্বৈত নীতি শুধু কথার সীমায় নেই, এটি দেশের স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে ফেলতে পারে।

গোয়েন লুইসের দুটি বক্তব্য প্রমাণ করে, জাতিসংঘের দ্বৈত নীতি কেবল নৈতিক দৃষ্টিকোণ নয়, এটি বাস্তব ও কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতারও প্রতিফলন। তবে বারবার mixed messaging দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, জনগণের আস্থা এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে পারে। প্রশ্ন হলো; আমরা কি কেবল কথায় বিশ্বাস রাখব, নাকি বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করব? স্বচ্ছ পদক্ষেপ, সর্বদলীয় সংলাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিই শেষ পর্যন্ত দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে। মন্তব্য নয়, বাস্তব কাজই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়, এটি কি আমরা উপলব্ধি করছি?

লেখক: শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক, চিন্তক ও গবেষক।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বৈত বার্তা: বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসংঘের কূটনৈতিক রহস্য

This will close in 6 seconds

দ্বৈত বার্তা: বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসংঘের কূটনৈতিক রহস্য

আপডেট সময় : ০২:৪৩:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

জাতিসংঘের বাংলাদেশে আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস ৪ জুন বলেছেন, “আওয়ামী লীগ না থাকলেও নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে।” কিন্তু ৫ অক্টোবর তিনি বলেন, “সব দল নির্বাচনে যুক্ত হবে, আশা করি।” একই ব্যক্তির এই বিপরীতমুখী বার্তা অনেককে বিভ্রান্ত করেছে। এটি কি কেবল কূটনৈতিক ভদ্রতা, নাকি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দ্বিধার সৃষ্টি করার এক নিখুঁত উদাহরণ?

জাতিসংঘ চাইছে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে, যাতে তাদের মানবিক কার্যক্রমে বাধা না আসে। বড় দাতা দেশগুলোর চাপও এখানে কাজ করছে। নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য তারা মাঝে মাঝে ‘আশা করি সব দল অংশ নেবে’ ধরনের নরম বার্তা দেয়। কিন্তু এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলো mixed signal নিয়ে বিভ্রান্ত হয়, সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যায়, এবং সংলাপের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশেও একই ঘটনা দেখা গেছে। লিবিয়ায় ২০১১ সালে কঠোর নীতি এবং পরে সমন্বয়মূলক বার্তা দেশকে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। রুয়ান্ডায় ১৯৯৪ সালে গণহত্যা প্রতিরোধে বিলম্বিত পদক্ষেপ এবং দ্বৈত বার্তা ফাটল তৈরি করেছে। সিরিয়ায় নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো এবং রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে সংঘাত দীর্ঘায়িত হয়েছে। এই উদাহরণ গুলো স্পষ্ট করে দেখায়, দ্বৈত নীতি শুধু কথার সীমায় নেই, এটি দেশের স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে ফেলতে পারে।

গোয়েন লুইসের দুটি বক্তব্য প্রমাণ করে, জাতিসংঘের দ্বৈত নীতি কেবল নৈতিক দৃষ্টিকোণ নয়, এটি বাস্তব ও কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতারও প্রতিফলন। তবে বারবার mixed messaging দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, জনগণের আস্থা এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে পারে। প্রশ্ন হলো; আমরা কি কেবল কথায় বিশ্বাস রাখব, নাকি বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করব? স্বচ্ছ পদক্ষেপ, সর্বদলীয় সংলাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিই শেষ পর্যন্ত দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে। মন্তব্য নয়, বাস্তব কাজই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়, এটি কি আমরা উপলব্ধি করছি?

লেখক: শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক, চিন্তক ও গবেষক।