কক্সবাজার শহরের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত ঐতিহাসিক কলাতলী মোড়কে ঘিরে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন চিন্তা ও স্বপ্নের পরিকাঠামো। এই কাঠামোর অংশ হিসেবে শহরের প্রবেশদ্বারে হাঙ্গরের ভাস্কর্যের পরিবর্তে একটি সময়োপযোগী, শিল্পসম্মত ও পরিবেশ-সচেতনতামূলক ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি জানিয়েছে ‘কক্সবাজার কমিউনিটি অ্যালায়েন্স’।
এটি ঢাকায় অবস্থানরত কক্সবাজারের বাসিন্দাদের একটি সংগঠন। এটির সংগঠক মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিমে স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এই দাবির কথা জানানো হয়।
সংগঠনটি বলছে, ‘ডলফিন মোড়’ নামের বিভ্রান্তি দূর করে পুনরায় ‘কলাতলী মোড়’ নাম অক্ষুণ্ণ রেখে, সেখানে নির্মাণ করা হোক একটি শক্তিশালী জলবায়ু-ইতিহাসভিত্তিক শিল্পকর্ম।
বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০ সালে কলাতলী মোড়ে নির্মিত হাঙরের একটি ভাস্কর্য কক্সবাজারের সামুদ্রিক ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হলেও, পরে সেটি ভুলভাবে ‘ডলফিন মোড়’ নামে পরিচিতি লাভ করে। সম্প্রতি এই ভাস্কর্যটির পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে একটি বেসরকারি দপ্তরের অর্থায়নে।
কক্সবাজারের পরিচয়কে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলা হয়, “শুধুমাত্র একটি প্রতিস্থাপন নয়—এখানে প্রয়োজন একটি সময়োপযোগী, শিল্পসম্মত ও পরিবেশবিষয়ক বার্তাবাহী শিল্পকর্ম, যা কক্সবাজারকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করতে সক্ষম হবে।”
তারা বলছে, বর্তমানে কক্সবাজার শুধু একটি পর্যটন নগরী নয়—এটির ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ফলে শহরের প্রবেশদ্বারে নির্মিত ভাস্কর্য হতে হবে তেমনি এক শিল্প, যা হবে সাগরের প্রাণ, জলবায়ু পরিবর্তন, ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পরিবেশ সচেতনতার প্রতীক।
“এটি হতে পারে এমন এক শিল্পবন্দনা, যেখানে ফুটে উঠবে উপকূলীয় জীবনের সংগ্রাম, পরিবেশের বার্তা এবং আগামী পৃথিবীর আশা।”
সংগঠক মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা চাই, এখানে এমন একটি অন্তর্দৃষ্টি-উদ্রেককারী ভাস্কর্য নির্মিত হোক যা মানুষকে ভাবাবে, উদ্বুদ্ধ করবে এবং পরিবেশ রক্ষায় অংশ নিতে উৎসাহিত করবে।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যেই এ ধরণের শিল্পকর্ম জলবায়ু সচেতনতার বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করছে। যেমন ইতালীয় ভাস্কর লরেঞ্জো কুইনের ‘সাপোর্ট’ যেখানে দুটি বিশাল হাত একটি ভবনকে ঠেস দিয়ে ধরে রেখেছে—উপকূলীয় শহরগুলোকে সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধির বিপদ থেকে রক্ষার প্রতীক। আবার অ্যান্টনি গোরমলির ‘এক্সপোজার’ ভাস্কর্যে দেখা যায় জলের নিচে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাওয়া এক মানবকঙ্কাল—যা জলবায়ু বিপর্যয়ের ভয়াল বাস্তবতাকে তুলে ধরে।
তেমনই একটি বার্তাবাহী ভাস্কর্য নির্মাণে বাংলাদেশের প্রথিতযশা ভাস্কর, স্থপতি ও শিল্প-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে কক্সবাজার কমিউনিটি অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে।
তাদের মতে, “প্রবেশদ্বারেই অঙ্কিত হোক নতুন কক্সবাজার—যেখানে শিল্প হয়ে উঠবে সাগরের ভাষা, পরিবেশের প্রহরী এবং আগামী প্রজন্মের জন্য এক চিরস্থায়ী বার্তাবাহী স্রষ্টা।”
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সৃজনশীল অংশগ্রহণ, পরিবেশবাদী ভাবনা ও স্থাপত্যশিল্পের সমন্বয়ে গড়ে উঠতে পারে কক্সবাজারের এই নতুন পরিচিতি—যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের উপকূল ও পরিবেশ সংরক্ষণের দায়বদ্ধতাকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরবে।