ঢাকা ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মহেশখালী উপজেলা যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত কক্সবাজারে সম্পন্ন হয়েছে ‘জেন্ডার এটিকেট’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ অস্ত্রসহ গ্রেফতার মুবিনুল যুবদলের কেউ নয় দাবী মহেশখালীতে যৌথ অভিযানে অস্ত্রসহ আটক এক ২৪ ঘন্টায় ৬০ জন ‘শয়তান শিকার’ কক্সবাজার পুলিশের! কক্সবাজারে জাতীয় ফলমেলা ২০২৫ এর উদ্বোধন আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’ সংসদ নির্বাচন থেকে উঠে যাচ্ছে পোস্টার : ইসি অপারেশন ডেভিল হান্ট: মহেশখালীতে আঃলীগের ৬ নেতাকর্মী আটক গুমের জন্য কারা দায়ী, শনাক্ত করেছে কমিশন আদালত অবমাননা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানি আজ বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ ও বায়ুদূষণ মোকাবিলায় ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক বিক্ষুব্ধ সাগর: ট্রলার ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে জেলেরা পরিবেশের ক্ষতি করে কোনও উন্নয়ন নয়: প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা অনেকের পছন্দ হয়নি: মির্জা ফখরুল

গুমের জন্য কারা দায়ী, শনাক্ত করেছে কমিশন

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে গুম কমিশনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আর গুমের জন্য দায়ীদের প্রাথমিকভাবে শনাক্তও করতে পেরেছে কমিশন।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এই কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘১৮৫০টি অভিযোগ বিশ্লেষণের মধ্যে থেকে ২৫৩ জন গুমের শিকার ব্যক্তির তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে স্পষ্ট হয় যে বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন এবং শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। যার ভুক্তভোগী ছিল মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি পেশাজীবী। এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করেছে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে, এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে। ব্যাপারটা মোটেও এমন নয় যে একটি জঙ্গিবাদ দমন অভিযানে দু-একজন অসাবধানী কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক কিছু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বরং এটি ছিল একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমনযন্ত্র, যা জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।’

গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘কমিশনে দাখিলকৃত ৮১% অভিযোগ জীবিত ভিক্টিমদের হলেও, ১৯% অভিযোগ ফেরত না আসা ভিক্টিমদের। গুম থেকে ফিরে না আসা ১২ জনের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে এবং তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী তা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

ফিরে না আসা ভিকটিমদের আরও অনেকের বিষয়েই কমিশনের কাজের অগ্রগতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু একেকজন ভিকটিমের বিষয়ে অনুসন্ধান সম্পন্ন করার আগে তথ্য প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী এবং গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’

সন্ত্রাসবাদ সারা বিশ্বে একটি বাস্তব হুমকি-বাংলাদেশও এর বাইরে নয় উল্লেখ করে গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘২০১৬ সালের হলি আর্টিজানে হামলার মতো ঘটনা এর প্রমাণ। তবে, এই হুমকি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের সততা, মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং আইনসম্মত প্রক্রিয়ায় অটল থাকা জরুরি। সরকার সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণাকে যখন রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, তখন তা আইনের শাসন, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয়।’

গুমের সঙ্গে র‌্যাব সবচেয়ে বেশি জড়িত উল্লেখ করে মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘গুমের সঙ্গে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের পাশাপাশি ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীরাও জড়িত। বাংলাদেশে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভারতীয় যারা জড়িত তাদের বিষয়ে আমরা কিছু করতে পারবো না।’

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সদস্য নুর খান লিটন বলেন, ‘গুমের বিষয়ে ডিজিএফআইয়ের কর্মকাণ্ডে সরাসরি সেনাবাহিনীর দায় নেই। তবে তারা জানতো না এটা বলা যাবে না।’

আরেক সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ভারতে বন্দি থাকা বাংলাদেশিদের তথ্য চেয়েছি। এদের মধ্যে গুমের কেউ আছে কি না খতিয়ে দেখছি। পুশ ইন যাদের করা হচ্ছে এদের মধ্যে কেউ গুমের শিকার কি না খতিয়ে দেখছি।’

সূত্র: সময়

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

This will close in 6 seconds

গুমের জন্য কারা দায়ী, শনাক্ত করেছে কমিশন

আপডেট সময় : ০১:৪৩:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে গুম কমিশনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আর গুমের জন্য দায়ীদের প্রাথমিকভাবে শনাক্তও করতে পেরেছে কমিশন।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এই কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘১৮৫০টি অভিযোগ বিশ্লেষণের মধ্যে থেকে ২৫৩ জন গুমের শিকার ব্যক্তির তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে স্পষ্ট হয় যে বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন এবং শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। যার ভুক্তভোগী ছিল মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি পেশাজীবী। এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করেছে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে, এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে। ব্যাপারটা মোটেও এমন নয় যে একটি জঙ্গিবাদ দমন অভিযানে দু-একজন অসাবধানী কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক কিছু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বরং এটি ছিল একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমনযন্ত্র, যা জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।’

গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘কমিশনে দাখিলকৃত ৮১% অভিযোগ জীবিত ভিক্টিমদের হলেও, ১৯% অভিযোগ ফেরত না আসা ভিক্টিমদের। গুম থেকে ফিরে না আসা ১২ জনের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে এবং তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী তা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

ফিরে না আসা ভিকটিমদের আরও অনেকের বিষয়েই কমিশনের কাজের অগ্রগতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু একেকজন ভিকটিমের বিষয়ে অনুসন্ধান সম্পন্ন করার আগে তথ্য প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী এবং গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’

সন্ত্রাসবাদ সারা বিশ্বে একটি বাস্তব হুমকি-বাংলাদেশও এর বাইরে নয় উল্লেখ করে গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘২০১৬ সালের হলি আর্টিজানে হামলার মতো ঘটনা এর প্রমাণ। তবে, এই হুমকি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের সততা, মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং আইনসম্মত প্রক্রিয়ায় অটল থাকা জরুরি। সরকার সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণাকে যখন রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, তখন তা আইনের শাসন, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয়।’

গুমের সঙ্গে র‌্যাব সবচেয়ে বেশি জড়িত উল্লেখ করে মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘গুমের সঙ্গে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের পাশাপাশি ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীরাও জড়িত। বাংলাদেশে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভারতীয় যারা জড়িত তাদের বিষয়ে আমরা কিছু করতে পারবো না।’

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সদস্য নুর খান লিটন বলেন, ‘গুমের বিষয়ে ডিজিএফআইয়ের কর্মকাণ্ডে সরাসরি সেনাবাহিনীর দায় নেই। তবে তারা জানতো না এটা বলা যাবে না।’

আরেক সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ভারতে বন্দি থাকা বাংলাদেশিদের তথ্য চেয়েছি। এদের মধ্যে গুমের কেউ আছে কি না খতিয়ে দেখছি। পুশ ইন যাদের করা হচ্ছে এদের মধ্যে কেউ গুমের শিকার কি না খতিয়ে দেখছি।’

সূত্র: সময়