কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করতে চলছে ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান। দিনভর নদীর তীরে ভাঙনের শব্দে কেঁপে উঠছে এলাকা। বহু বছরের গড়ে ওঠা ঘরবাড়ি মুহূর্তেই পরিণত হচ্ছে ধ্বংসস্তূপে। ভাঙা দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ শোকে অশ্রু ফেলছে, কেউ আবার চিৎকার করে বলছে—“আমরা তো খতিয়ানভুক্ত জমির মালিক, ঘর না ভেঙে আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন।”
এদিকে ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়দের প্রবল প্রতিরোধও চোখে পড়েছে। কেউ সড়ক অবরোধ করেছে, কেউ ঠেলাগাড়ি ফেলে পথ রুদ্ধ করেছে, আবার কেউ খননযন্ত্র ঘিরে দাঁড়িয়ে দিয়েছে প্রতিবাদের দেয়াল। অনেকের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে হতাশা—“রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেন, অথচ আমরা যারা এখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আছি, আমাদেরই উচ্ছেদ করছেন। পুনর্বাসন ছাড়া ঘর হারানো মানে মৃত্যু।”
অভিযানের এ অস্থির মুহূর্তে অন্য প্রান্তে দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। নদীর ধারে শরতের আগমনী বার্তায় ফুটে থাকা কাশবনে জড়ো হয়েছে তরুণ-তরুণী, পরিবার ও পর্যটকরা। কারো হাতে ক্যামেরা, কারো হাতে মোবাইল। কাশফুলের সাদা সমুদ্রকে পেছনে রেখে চলছে হাসি-আনন্দে ভরা ছবি তোলা। কেউ প্রেমময় ভঙ্গিতে পোজ দিচ্ছে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠেছে নিছক আনন্দে।
একই জায়গায় এ দুই ছবি যেন জীবনের নির্মম বৈপরীত্য। একদিকে ঘর হারানোর বেদনায় বুকভাঙা কান্না, অন্যদিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে কয়েক গজ দূরেই হাসি-খুশির উল্লাসে ছবি তোলার ভিড়। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মানব জীবনের বেদনা একই নদীর তীরে একসাথে মিলেমিশে গেছে।
এ যেন মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। বাঁকখালীর বুকে একসাথে দাঁড়িয়ে আছে কান্না আর হাসি, ধ্বংস আর সৃষ্টির ছবি—সময়ের নির্মম অথচ বাস্তব প্রতিচ্ছবি।