প্রতিদিন জোয়ার আসে ভাটা হয়। উপকূলের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে অসংখ্য লোকের সাথে কথা বলছেন সাকিব হাসান। তার একমাত্র প্রিয় সন্তান অরিত্রের খোঁজ নেই আজ ১০ দিন।
গেলো সপ্তাহের মঙ্গলবার (৭ জুলাই) কক্সবাজার সৈকতের হিমছড়িতে গোসেলে নেমে ভেসে যায় অরিত্রসহ তিন বন্ধু। দুই বন্ধুর লাশ ভেসে এলেও এখনো সন্ধান নেই অরিত্রের।
অরিত্রের বাবা সাকিব হাসান ১০ দিন ধরে সন্তানের খোঁজে আছেন কক্সবাজার। তিনি বলেন, “প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সাথে কথা বলছি, তারা বলছিলেন, সাগর যা নিয়ে যায় তা ফিরিয়ে দেয়। আমি সে আশা নিয়েই ঘুরছি। যেকোন অবস্থায় আমি আমার ছেলেটাকে চাই। ”
নিখোঁজ অরিত্রের মা-বাবাসহ চাচা-চাচিরাও এসেছেন প্রিয়জনকে নিয়ে যেতে। সবার দৃষ্টি সমুদ্রের অথৈ জলে। স্বজনদের চোখের নোনা জল শুকিয়ে এসেছে তবুও যেনো অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না।
পৃথিবীতে অপেক্ষা বলে শব্দটা যে কতটা দীর্ঘ হতে পারে তা হয়তো অরিত্রের পরিবারের চেয়ে কেউ বুঝতে পারছে না।
অরিত্রের বাবা করুণ কন্ঠে বারংবার বলছিলেন, “ওকে(অরিত্র) পেলে বলবো- বাবা আজকে থেকে চিরকাল আমি তোমার সাথে থাকবো। আমাকে তুমি কিন্তু ফিরাই দিয়ো না আমার কাছে থাকো। তোমার হাতটা ধরবো, তোমার ইউনিভার্সিটির পাশে একটা বাসা নিয়ে সাথে থাকবো।”
পিতার এ আকুতি অরিত্রের কানে কী পোঁছাবে?
অরিত্র নিখোঁজের চতুর্থ দিন তার মা জেসমিন আক্তারের সাথে কথা হয়েছিলো আমাদের। তিনি বারবার বলছিলেন- “এই অথৈ সমুদ্রে তো আমি আমার ছেলেকে রেখে যেতে পারবো না। ছেলেকে রেখে বাসায় আমি একটা মুহুর্তও থাকতে পারবো না। যে কোন অবস্থাতে হোক আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।”
“আমার ছেলে রেখে যেতে পারব আমি? আমার ছেলেটা আমার বুকে ফিরে আসুক এটাই আমি চাই।”
অরিত্রের মায়ের বুক তাকে ডাকছে।
পরিবারের সবার কাছে অরিত্র ছিলো প্রিয়জন। তার চাচাতো বোনও চেয়ে আছে সাগরের দিকে। বলছিলেন- “ভাইয়ের শেষ চিহ্নটুকু হলেও নিয়ে যেতে চাই। আমরা আট ভাইবোন তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে হলেও একসাথে থাকতে চাই।”
সি-সেইফ লাইফ গার্ডের জ্যেষ্ঠ কর্মী মোহাম্মদ ওসমান টিটিএনকে জানান, দশম দিনের মতো তারা আজকেও অরিত্রে খোঁজে সন্ধান অভিযান চালিয়েছেন।
মোহাম্মদ ওসমান বলেন, “আমরা খুঁজছি। বিভিন্ন জায়গায় জেলেদের বলে এসেছি। তারাও যেনো সন্ধান পেলে খবর দেন।”
গেলো সপ্তাহের সোমবার (৬জুলাই) পাঁচ বন্ধুসহ অরিত্র কক্সবাজার আসেন। ৭ জুলাই সকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে গোসলে নেমে ভেসে যায় তিন বন্ধু। সেখান থেকে সাবাব ও আসিফ নামের অন্য দুজনের লাশ ভেসে আসলেই এখনো সন্ধান নেই অরিত্র হাসানের।
তারা প্রত্যেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষে বেড়াতে আসেন কক্সবাজার।