ঢাকা ০৮:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
কানের দুলের জন্যে প্রাণ কেড়ে নিলো কন্যা শি’শুর! শিক্ষকের মর্যাদা, শিক্ষার মান- দুটোই হোক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার সব প্রস্তুতি নিয়েও যেকারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে দেরি কক্সবাজার বিমানবন্দর ‘কুকুর’ ধরলো রাজমিস্ত্রীর ইয়াবা টেকনাফে মানব পাচারে ‘জিরো টলারেন্স’ বলছে বিজিবি পালংখালী জামায়াতের কর্মী সমাবেশে জেলা আমীর আনোয়ারী-ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দাঁড়ি পাল্লার বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন টেকনাফে ১৪ মামলার পলাতক আসামী মুন্না র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার বিএফইউজে’র নির্বাহী পরিষদের সভায় সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার’র কমিটি অনুমোদন কক্সবাজার সৈকতে ‘লোক সমুদ্র’ ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ বাস্তবায়নে কক্সবাজারে ৫টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন নৌবাহিনীর নারী নেতৃত্বকে জাতির গৌরব বললেন লুৎফুর রহমান কাজল কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সভায় বক্তারা: ‎কুতুবদিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটনের বিকল্প নেই ‎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আস্থা গড়ার বদলে চাপ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ চৌফলদন্ডীর আমজাদ হত্যার আসামী ছৈয়দ নুর গ্রেফতার সমুদ্রবন্দর থেকে নামল সতর্ক সংকেত
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি:

শিক্ষকের মর্যাদা, শিক্ষার মান- দুটোই হোক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে শিক্ষকের অবদান কেবল পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নয়; তাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্মের চিন্তা, চরিত্র ও মানবিকতার ভিত গড়ে দেন।

আমরা যারা কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের (কসউবি) প্রাক্তন ছাত্র, আমাদের কাছে এ দিনটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, গভীর কৃতজ্ঞতারও মুহূর্ত।

কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (কসউবি) ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি এতদিনে কেবল এক প্রজন্ম নয়, অসংখ্য প্রজন্মের আত্মপ্রত্যয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান, প্রতিটি ঐতিহাসিক বাঁকে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রেখেছেন বীরত্বের দৃষ্টান্ত। আজ দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা কসউবি অ্যালামনাইরা কর্ম ও মেধার আলো ছড়িয়ে চলেছেন। যার উৎস সেই শ্রেণিকক্ষে বসা, কালো বোর্ডের সামনে দাঁড়ানো আমাদের শিক্ষকেরা।

সেই শিক্ষকদের-শ্রদ্ধার টানে আজ আমরা, কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের কয়েকজন, আলাপ করেছি প্রিয় কিছু শিক্ষকের সাথে। এক আন্তরিক আলাপচারিতায় উঠে এসেছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও স্বপ্ন।

বর্তমান চালচিত্র

প্রধান শিক্ষক রাম মোহন সেন প্রথমেই হেসে বললেন,
“আপনারা যখন পড়তেন, তখনকার কসউবি আর এখনকার কসউবির মধ্যে অনেক ফারাক। ভর্তি নিয়ে এখন লটারির ঝামেলা, মোবাইল ফোন নিয়ে দুশ্চিন্তা, আর ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকের সম্পর্কটাও ধরে রাখা কঠিন হয়ে গেছে।”

তিনি থেমে আবার বললেন, “কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সম্পর্কটা ফেরাতে হলে আমাদের শ্রেণিকক্ষকেই আরও মানবিক করতে হবে। প্রযুক্তি ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে হবে, তবে সন্তানসুলভ স্নেহ দিয়ে ছাত্রদের কাছে টানাটাই সবচেয়ে জরুরি।”

তিনি যোগ করলেন, “প্রাক্তন ছাত্রদের সহযোগিতা এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবকাঠামো, আধুনিক পাঠদান, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এসব একা সরকারের পক্ষে করা কঠিন। আপনারা পাশে থাকলে শিক্ষকদের নৈতিকতা, দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব আরও শক্ত ভিত্তি পাবে।”

শিক্ষকতা: পেশা নয়, নেশা

প্রাক্তন শিক্ষক ও সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন নিজের অভিজ্ঞতা শোনালেন, “শিক্ষকতা আমার কাছে কখনো চাকরি ছিল না। এটা ছিল নেশা। ক্লাসে ঢুকলেই মনে হতো, এরা আমার সন্তান।”

তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বললেন, “কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমরা অনেক সময় শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করি না। প্রশিক্ষণের অভাব, পদোন্নতির ঝামেলা, বারবার শিক্ষাক্রম পাল্টানো, এসব শিক্ষকের মর্যাদাকে খাটো করেছে। ফলে দায়িত্ববোধও দুর্বল হয়।”

আমরা তাঁর কণ্ঠে সেই অস্থিরতা দেখলাম। কিন্তু ভেতরে শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসাই যেন বেশি ঝলমল করছিল।

মর্যাদা ও প্রাপ্য সম্মান

বর্তমান জেলা শিক্ষা অফিসার ও আমাদের প্রাক্তন শিক্ষক গোলাম মোস্তফা আক্ষেপ করে বললেন, “আজকের শিক্ষকেরা দারুণ চাপে থাকেন। বেতনের সাথে জীবনযাত্রার খরচের ফারাক দিন দিন বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই শুধু টিকে থাকার জন্য লড়াই করেন। অথচ শিক্ষকের প্রধান প্রাপ্য হলো সমাজ থেকে সম্মান। সেটাই এখন কমে গেছে।”

তিনি একটু থেমে বললেন, “আপনারা যদি প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে শিক্ষকদের পাশে থাকেন, তাদের সাফল্যকে তুলে ধরেন, তবে সমাজও আবার শিক্ষকদের সম্মান করতে শিখবে।”

সম্পর্কের রূপান্তর

আমরা আলাপ করেছি প্রাক্তন শিক্ষক আবু তৈয়ব দিদার এর সাথেও। তিনি স্মৃতিচারণা করলেন এভাবেই-
“আগে শিক্ষক আর ছাত্রের সম্পর্ক ছিল অনেকটা বাবা-মায়ের মতো। এখন ইন্টারনেট, কোচিং, সোশ্যাল মিডিয়া আসায় সম্পর্কটা দূরে সরে গেছে।”

তিনি বললেন, “আমার বিশ্বাস, শিক্ষককে হতে হবে একদিকে শাসক, অন্যদিকে মমতাময় অভিভাবক। যে শাসন করবে, আবার দরকার হলে সন্তানের জন্য ব্যথিতও হবে। তখনই ছাত্রদের মনে আলাদা জায়গা তৈরি হবে।”

সংকট ও করণীয়

আলোচনা গড়াল শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যায়। সবাই একসুরে বললেন—
বারবার পাঠ্যপুস্তক সংশোধন শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে।
পরীক্ষাকেন্দ্রিক মুখস্থ সংস্কৃতি সৃজনশীলতাকে হত্যা করছে।
কোচিং নির্ভরতা বেড়ে শিক্ষা এখন বাজারপণ্য হয়ে যাচ্ছে।
গ্রামীণ বিদ্যালয়ে ডিজিটাল সুযোগ সীমিত, আর শিক্ষক প্রশিক্ষণেও ঘাটতি।

আমরা প্রাক্তন ছাত্ররা একমত হলাম, এ সংকট কাটাতে হলে শিক্ষাকে শুধু চাকরির প্রস্তুতি নয়, চিন্তার প্রস্তুতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে এআই, রোবোটিক্স, প্রযুক্তি জ্ঞান জরুরি, তবে তার সাথে মানবিকতা ও মূল্যবোধও অপরিহার্য।

আমাদের প্রত্যাশা

আলাপচারিতার শেষ মুহূর্তে আমরা প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সবাই একই প্রতিজ্ঞায় পৌঁছালাম- আমাদের এই বিদ্যালয় যেমন অতীতে মানবতাবোধে সমৃদ্ধ নাগরিক গড়ে তুলেছে, ভবিষ্যতেও তাই করবে। তবে এজন্য শিক্ষকের মর্যাদা ও শিক্ষার মান, দুটোই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হতে হবে।

আমরা চাই সরকার শিক্ষানীতিকে টেকসই করুক, শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন কাঠামো নিশ্চিত করুক, আর বিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা বাস্তবায়ন হোক। আর আমরা, প্রাক্তন ছাত্ররা, প্রতিজ্ঞা করছি, শিক্ষক–শিক্ষার্থীর সেই আলোকশিখা জ্বালিয়ে রাখার জন্য সবসময় পাশে থাকব।

কারণ শিক্ষক যদি আত্মবিশ্বাসী ও মর্যাদাবান হন, তবে শিক্ষার্থীরাও অনুপ্রাণিত হবে। আর অনুপ্রাণিত শিক্ষার্থীরাই গড়ে তুলবে আলোকিত বাংলাদেশ।

কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে নিবন্ধটি লিখেছেন –
এম এম সিরাজুল ইসলাম (প্রধান নির্বাহী সংগঠক), মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম (সাংগঠনিক সমন্বয়ক), সাঈদ বিন জেবর (সাংগঠনিক সচিব), শেখ আশিকুজ্জামান (অর্থ–পরিকল্পনা সমন্বয়ক), শাহজানুল হক চৌধুরী (দফতর ও যোগাযোগ সমন্বয়ক), ইয়াসির আরাফাত (সংস্কৃতি, গবেষণা ও ঐতিহ্য সমন্বয়ক), সৌরভ দেব (গণমাধ্যম সমন্বয়ক)।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

কানের দুলের জন্যে প্রাণ কেড়ে নিলো কন্যা শি’শুর!

This will close in 6 seconds

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি:

শিক্ষকের মর্যাদা, শিক্ষার মান- দুটোই হোক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

আপডেট সময় : ০৫:২৫:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে শিক্ষকের অবদান কেবল পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নয়; তাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্মের চিন্তা, চরিত্র ও মানবিকতার ভিত গড়ে দেন।

আমরা যারা কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের (কসউবি) প্রাক্তন ছাত্র, আমাদের কাছে এ দিনটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, গভীর কৃতজ্ঞতারও মুহূর্ত।

কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (কসউবি) ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি এতদিনে কেবল এক প্রজন্ম নয়, অসংখ্য প্রজন্মের আত্মপ্রত্যয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান, প্রতিটি ঐতিহাসিক বাঁকে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রেখেছেন বীরত্বের দৃষ্টান্ত। আজ দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা কসউবি অ্যালামনাইরা কর্ম ও মেধার আলো ছড়িয়ে চলেছেন। যার উৎস সেই শ্রেণিকক্ষে বসা, কালো বোর্ডের সামনে দাঁড়ানো আমাদের শিক্ষকেরা।

সেই শিক্ষকদের-শ্রদ্ধার টানে আজ আমরা, কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের কয়েকজন, আলাপ করেছি প্রিয় কিছু শিক্ষকের সাথে। এক আন্তরিক আলাপচারিতায় উঠে এসেছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও স্বপ্ন।

বর্তমান চালচিত্র

প্রধান শিক্ষক রাম মোহন সেন প্রথমেই হেসে বললেন,
“আপনারা যখন পড়তেন, তখনকার কসউবি আর এখনকার কসউবির মধ্যে অনেক ফারাক। ভর্তি নিয়ে এখন লটারির ঝামেলা, মোবাইল ফোন নিয়ে দুশ্চিন্তা, আর ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকের সম্পর্কটাও ধরে রাখা কঠিন হয়ে গেছে।”

তিনি থেমে আবার বললেন, “কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সম্পর্কটা ফেরাতে হলে আমাদের শ্রেণিকক্ষকেই আরও মানবিক করতে হবে। প্রযুক্তি ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে হবে, তবে সন্তানসুলভ স্নেহ দিয়ে ছাত্রদের কাছে টানাটাই সবচেয়ে জরুরি।”

তিনি যোগ করলেন, “প্রাক্তন ছাত্রদের সহযোগিতা এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবকাঠামো, আধুনিক পাঠদান, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এসব একা সরকারের পক্ষে করা কঠিন। আপনারা পাশে থাকলে শিক্ষকদের নৈতিকতা, দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব আরও শক্ত ভিত্তি পাবে।”

শিক্ষকতা: পেশা নয়, নেশা

প্রাক্তন শিক্ষক ও সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন নিজের অভিজ্ঞতা শোনালেন, “শিক্ষকতা আমার কাছে কখনো চাকরি ছিল না। এটা ছিল নেশা। ক্লাসে ঢুকলেই মনে হতো, এরা আমার সন্তান।”

তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বললেন, “কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমরা অনেক সময় শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করি না। প্রশিক্ষণের অভাব, পদোন্নতির ঝামেলা, বারবার শিক্ষাক্রম পাল্টানো, এসব শিক্ষকের মর্যাদাকে খাটো করেছে। ফলে দায়িত্ববোধও দুর্বল হয়।”

আমরা তাঁর কণ্ঠে সেই অস্থিরতা দেখলাম। কিন্তু ভেতরে শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসাই যেন বেশি ঝলমল করছিল।

মর্যাদা ও প্রাপ্য সম্মান

বর্তমান জেলা শিক্ষা অফিসার ও আমাদের প্রাক্তন শিক্ষক গোলাম মোস্তফা আক্ষেপ করে বললেন, “আজকের শিক্ষকেরা দারুণ চাপে থাকেন। বেতনের সাথে জীবনযাত্রার খরচের ফারাক দিন দিন বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই শুধু টিকে থাকার জন্য লড়াই করেন। অথচ শিক্ষকের প্রধান প্রাপ্য হলো সমাজ থেকে সম্মান। সেটাই এখন কমে গেছে।”

তিনি একটু থেমে বললেন, “আপনারা যদি প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে শিক্ষকদের পাশে থাকেন, তাদের সাফল্যকে তুলে ধরেন, তবে সমাজও আবার শিক্ষকদের সম্মান করতে শিখবে।”

সম্পর্কের রূপান্তর

আমরা আলাপ করেছি প্রাক্তন শিক্ষক আবু তৈয়ব দিদার এর সাথেও। তিনি স্মৃতিচারণা করলেন এভাবেই-
“আগে শিক্ষক আর ছাত্রের সম্পর্ক ছিল অনেকটা বাবা-মায়ের মতো। এখন ইন্টারনেট, কোচিং, সোশ্যাল মিডিয়া আসায় সম্পর্কটা দূরে সরে গেছে।”

তিনি বললেন, “আমার বিশ্বাস, শিক্ষককে হতে হবে একদিকে শাসক, অন্যদিকে মমতাময় অভিভাবক। যে শাসন করবে, আবার দরকার হলে সন্তানের জন্য ব্যথিতও হবে। তখনই ছাত্রদের মনে আলাদা জায়গা তৈরি হবে।”

সংকট ও করণীয়

আলোচনা গড়াল শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যায়। সবাই একসুরে বললেন—
বারবার পাঠ্যপুস্তক সংশোধন শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে।
পরীক্ষাকেন্দ্রিক মুখস্থ সংস্কৃতি সৃজনশীলতাকে হত্যা করছে।
কোচিং নির্ভরতা বেড়ে শিক্ষা এখন বাজারপণ্য হয়ে যাচ্ছে।
গ্রামীণ বিদ্যালয়ে ডিজিটাল সুযোগ সীমিত, আর শিক্ষক প্রশিক্ষণেও ঘাটতি।

আমরা প্রাক্তন ছাত্ররা একমত হলাম, এ সংকট কাটাতে হলে শিক্ষাকে শুধু চাকরির প্রস্তুতি নয়, চিন্তার প্রস্তুতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে এআই, রোবোটিক্স, প্রযুক্তি জ্ঞান জরুরি, তবে তার সাথে মানবিকতা ও মূল্যবোধও অপরিহার্য।

আমাদের প্রত্যাশা

আলাপচারিতার শেষ মুহূর্তে আমরা প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সবাই একই প্রতিজ্ঞায় পৌঁছালাম- আমাদের এই বিদ্যালয় যেমন অতীতে মানবতাবোধে সমৃদ্ধ নাগরিক গড়ে তুলেছে, ভবিষ্যতেও তাই করবে। তবে এজন্য শিক্ষকের মর্যাদা ও শিক্ষার মান, দুটোই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হতে হবে।

আমরা চাই সরকার শিক্ষানীতিকে টেকসই করুক, শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন কাঠামো নিশ্চিত করুক, আর বিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা বাস্তবায়ন হোক। আর আমরা, প্রাক্তন ছাত্ররা, প্রতিজ্ঞা করছি, শিক্ষক–শিক্ষার্থীর সেই আলোকশিখা জ্বালিয়ে রাখার জন্য সবসময় পাশে থাকব।

কারণ শিক্ষক যদি আত্মবিশ্বাসী ও মর্যাদাবান হন, তবে শিক্ষার্থীরাও অনুপ্রাণিত হবে। আর অনুপ্রাণিত শিক্ষার্থীরাই গড়ে তুলবে আলোকিত বাংলাদেশ।

কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে নিবন্ধটি লিখেছেন –
এম এম সিরাজুল ইসলাম (প্রধান নির্বাহী সংগঠক), মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম (সাংগঠনিক সমন্বয়ক), সাঈদ বিন জেবর (সাংগঠনিক সচিব), শেখ আশিকুজ্জামান (অর্থ–পরিকল্পনা সমন্বয়ক), শাহজানুল হক চৌধুরী (দফতর ও যোগাযোগ সমন্বয়ক), ইয়াসির আরাফাত (সংস্কৃতি, গবেষণা ও ঐতিহ্য সমন্বয়ক), সৌরভ দেব (গণমাধ্যম সমন্বয়ক)।