বাংলাদেশের রাজনীতি যেন এক দীর্ঘ অভিনয়; চরিত্র বদলায়, কিন্তু কাহিনি বদলায় না। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামীর পুনঃ উত্থান সেই নাটকের নতুন অঙ্ক। এটি শুধু একটি দলের ফেরা নয়, বরং রাজনীতির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ। শেখ হাসিনার পতনের পর যেন এক নতুন ‘ম্যাটিকুলাস ডিজাইন’-এর সূচনা হয়েছে, যেখানে সবকিছু পুরোনো কাঠামো থেকে ছিন্ন হলেও ক্ষমতার খেলাটা রয়ে গেছে আগের মতোই।
জামায়াত এখন যেভাবে প্রশিক্ষিত, সংযত ও কৌশলী রূপে নিজেদের উপস্থাপন করছে, তা অনেকের চোখে “ভালত্বের রাজনীতি” কিন্তু বাস্তবে এটি সূর্যাস্তের গোধূলি লগ্নের মতো সৌন্দর্য। যে আলোর স্থায়ীত্ব কাল প্রলম্বিত নয়। তাদের এই পুনর্বাসন প্রয়াস আসলে টিকে থাকার কৌশল, যেখানে নীতির চেয়ে বুদ্ধি ও সহনশীলতাই প্রধান।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এখন দমনের চাপে থাকলেও, এটি চূড়ান্ত নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো শক্তিই স্থায়ীভাবে পরাজিত থাকে না। সময় এলে আওয়ামী লীগও ফিরবে, যেমন জামায়াত ফিরেছে। তবে এবার হয়তো নতুন রূপে, নতুন মুখে, ভিন্ন বার্তায়। রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে; দল নয়, বরং ব্যক্তি ও প্রতীকের রাজনীতি সামনে আসছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জুলাই চেতনা, পাকিস্তানপন্থী বা ভারতপন্থী বিভাজন গুলো আজ নীতির নয়, বরং বাজারের পণ্যে পরিণত হয়েছে। এই মতাদর্শিক দুর্ভিক্ষই বর্তমান রাজনীতির সবচেয়ে বড় সংকট। রাজনীতি এখন আর বিশ্বাসের মঞ্চ নয় বরং প্রভাব আর প্রতীকের প্রতিযোগিতা।
এনসিপি হয়তো বিলীন হবে, বিএনপি ভাঙবে, আর জামায়াত নতুন কৌশলে রাজনীতির মঞ্চে বাঁশি বাজাবে, যেমন নেহরু বাজিয়েছিলেন ভারতের বিভাজনের পর একত্রীকরণের সুর। এটাই সম্ভবত নতুন ‘ডিজাইনের রাজনীতি’, যেখানে সব পক্ষই পুরোনো গল্পের নতুন মুখপাত্র।
বাংলাদেশের রাজনীতি অনেকটা সুন্দরবনের মতো, বাঘ আছে জেনেও মৌয়ালরা মধু সংগ্রহে যায়। আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও জানে ঝুঁকি আছে, তবু একদিন তারা ফিরবে। মৃত্যু কাছ থেকে দেখবে, কিন্তু থামবে না। কারণ এই দেশে রাজনীতি মানে জীবন, আর জীবন কখনো থেমে থাকে না।
অনিরাপদ সড়কেও যেমন যানবাহন চলে, তেমনি অস্থিতিশীল রাজনীতিতেও সমাজের গতি থেমে থাকে না। মানুষ এখনো বাঁচতে চায়, জিততে চায়, কারণ জীবন কোনো শৃঙ্খলা বাহিনী নয়, তাকে বন্দী রাখা যায় না।
আজ যে লাল-সবুজ পতাকাটি মাথার উপর নেই, কাল আবার বাতাসে উড়বে। তবে সেটি কি আগের সেই জুলাইয়ের পতাকা হবে, নাকি নতুন ডিজাইনের, এই প্রশ্নই এখন আমাদের রাজনৈতিক প্রভাতের অপেক্ষা।
লেখক-শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক, গবেষক ও চিন্তক
শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক 





















