ঢাকা ০৭:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ নিষিদ্ধের দাবী ফিশিং বোট মালিক সমিতির আড়ালে করতেন ইয়াবা কারবার, ৫০ হাজার ইয়াবাসহ আটক সভাপতি চকরিয়ার বিএমচরে অ’স্ত্রে’র কারখানা! সরঞ্জাম সহ আটক একজন শেখ মুজিব-তাজউদ্দীনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের খবরটি ভুয়া: ফারুকী অধ্যাদেশ জারি: শেখ মুজিবসহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাজুস,কক্সবাজারের বিবৃতি- ঈদুল আজহায় ৭-১৩ জুন অবধি স্বর্ণের দোকান বন্ধ কক্সবাজারে। মহেশখালীতে জলোচ্ছ্বাসে নিহত দানু মিয়ার পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের অর্থ সহায়তা রামুতে কোরবানির গরু আনতে গিয়ে খুন, অভিযুক্ত দুইজন গ্রেপ্তার হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ‘গুমের’ অভিযোগ বিএনপির সালাহউদ্দিনের ফিটনেসবিহীন কোনো গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কক্সবাজার জেলগেট এলাকায় পাহাড় কেটে সাবাড় : প্রশাসনের অভিযান কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘জেন্ডার এটিকেট’ ৮ম ব্যাচের প্রশিক্ষণ টেকনাফে বন্যা দুর্গতদের পাশে এনসিপি, ২০০ পরিবারে ত্রাণ বিতরণ সিগারেটের প্রতি শলাকায় ২ টাকা বৃদ্ধি “বলতেও পারিনা সইতেও পারিনা” সরকার চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে পারে: সালাহ উদ্দিন আহমেদ

বিশ্ব নার্স দিবস আজ

আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নার্স দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের নার্সরা আমাদের ভবিষ্যৎ : নার্সদের যত্ন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে’।

দেশে নিবন্ধিত নার্স আছেন এক লাখ তিন হাজার ১৫১ জন। অথচ জনসংখ্যা অনুপাতে প্রয়োজন তিন লাখের বেশি নার্স।

ফলে প্রয়োজনের মাত্র ৩৪ শতাংশ নার্স দিয়ে চলছে দেশের স্বাস্থ্যসেবা, যা সেবার মানে চরম সংকট তৈরি করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে শুধু রোগীরাই সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না, একেকজন নার্সকে গড়ে দ্বিগুণের বেশি কাজ করতে হচ্ছে। তাতে চাপ বাড়ছে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও।

উল্টো চিত্র : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকা আদর্শ।

কিন্তু বাংলাদেশে চিত্রটা প্রায় উল্টো—একজন নার্সকে কাজ করতে হয় তিনজন চিকিৎসকের সঙ্গে। আবার প্রতি পাঁচজন রোগীর জন্য একজন নার্স থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে একজন নার্সকে সামলাতে হয় শতাধিক রোগী। এতে কাজের চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি স্বাস্থ্যসেবার মানও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সংকটের গভীরে অবহেলা : সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের (এসএনএসআর) মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, চিকিৎসকদের তুলনায় নার্সদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো বৈষম্যমূলক।

তাঁর ভাষায়, ‘পেশাটি অবহেলিত। বেতন কাঠামো নিম্নমানের, পদোন্নতি নেই, অবসরে যাচ্ছেন অনেকে চাকরির শুরুর পদেই। ৯০ শতাংশ নার্সের জন্য নেই আবাসনব্যবস্থা। ঝুঁকি ভাতা এখনো চালু হয়নি। ধোলাই ভাতা মাত্র ২১৯ টাকা!’

সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোতেও ঘাটতি।

অনেক প্রতিষ্ঠান সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দিয়েই চলছে, যাঁরা অধ্যাপক বা প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করছেন সংযুক্তি হিসেবে। যদিও গত বছর কিছু প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সংকটের পরিসংখ্যান : এসএনএসআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে চিকিৎসক আছেন প্রায় এক লাখ ৩৪ হাজার। সে অনুযায়ী নার্স দরকার চার লাখ দুই হাজার। তবে নিবন্ধিত নার্স আছেন মাত্র এক লাখ ১০ হাজার, ঘাটতি প্রায় দুই লাখ ৯২ হাজার। প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও গড়ে মাত্র ১২ হাজার পেশায় যুক্ত হন।

‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই’

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খান মো. গোলাম মোরশেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রের কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই। নার্স তৈরি হচ্ছে, কিন্তু কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ২০২১ সালের পর থেকে সরকারি চাকরিতে নার্স নিয়োগ বন্ধ। বিদেশে নার্সের চাহিদা থাকলেও উপযুক্ত নীতিমালা ও আইনি কাঠামোর অভাবে পাঠানো যাচ্ছে না।

গোলাম মোরশেদ আরো বলেন, ‘যথাযথ বেতন কাঠামো, মানসম্মত শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে নার্স সংকট নিরসন সম্ভব নয়।’

ধীরগতির উদ্যোগ

বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের (বিএনএমসি) রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার বলেন, ‘নার্স সংকট দীর্ঘদিনের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও কাউন্সিল একসঙ্গে কাজ করছে। তবে চাহিদার তুলনায় নার্স তৈরির হার অনেক কম। বিদেশে চাহিদা বাড়ায় সংকট আরো প্রকট হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন এই সংকট নিরসনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, গ্লোবাল কম্পিটেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণ, নিয়মিত অ্যাক্রেডিটেশন ও মূল্যায়ন, নীতিমালাবহির্ভূত প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের জন্য নিরীক্ষা ও অডিট কার্যক্রম চালু।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতের মূল ভিত্তি হিসেবে নার্সদের উপযুক্ত স্বীকৃতি ও মর্যাদা না দিলে শুধু সেবার মান নয়, পুরো ব্যবস্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে।

ট্যাগ :

সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ নিষিদ্ধের দাবী

This will close in 6 seconds

বিশ্ব নার্স দিবস আজ

আপডেট সময় : ১২:৪৭:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নার্স দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের নার্সরা আমাদের ভবিষ্যৎ : নার্সদের যত্ন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে’।

দেশে নিবন্ধিত নার্স আছেন এক লাখ তিন হাজার ১৫১ জন। অথচ জনসংখ্যা অনুপাতে প্রয়োজন তিন লাখের বেশি নার্স।

ফলে প্রয়োজনের মাত্র ৩৪ শতাংশ নার্স দিয়ে চলছে দেশের স্বাস্থ্যসেবা, যা সেবার মানে চরম সংকট তৈরি করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে শুধু রোগীরাই সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না, একেকজন নার্সকে গড়ে দ্বিগুণের বেশি কাজ করতে হচ্ছে। তাতে চাপ বাড়ছে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও।

উল্টো চিত্র : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকা আদর্শ।

কিন্তু বাংলাদেশে চিত্রটা প্রায় উল্টো—একজন নার্সকে কাজ করতে হয় তিনজন চিকিৎসকের সঙ্গে। আবার প্রতি পাঁচজন রোগীর জন্য একজন নার্স থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে একজন নার্সকে সামলাতে হয় শতাধিক রোগী। এতে কাজের চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি স্বাস্থ্যসেবার মানও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সংকটের গভীরে অবহেলা : সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের (এসএনএসআর) মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, চিকিৎসকদের তুলনায় নার্সদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো বৈষম্যমূলক।

তাঁর ভাষায়, ‘পেশাটি অবহেলিত। বেতন কাঠামো নিম্নমানের, পদোন্নতি নেই, অবসরে যাচ্ছেন অনেকে চাকরির শুরুর পদেই। ৯০ শতাংশ নার্সের জন্য নেই আবাসনব্যবস্থা। ঝুঁকি ভাতা এখনো চালু হয়নি। ধোলাই ভাতা মাত্র ২১৯ টাকা!’

সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোতেও ঘাটতি।

অনেক প্রতিষ্ঠান সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দিয়েই চলছে, যাঁরা অধ্যাপক বা প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করছেন সংযুক্তি হিসেবে। যদিও গত বছর কিছু প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সংকটের পরিসংখ্যান : এসএনএসআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে চিকিৎসক আছেন প্রায় এক লাখ ৩৪ হাজার। সে অনুযায়ী নার্স দরকার চার লাখ দুই হাজার। তবে নিবন্ধিত নার্স আছেন মাত্র এক লাখ ১০ হাজার, ঘাটতি প্রায় দুই লাখ ৯২ হাজার। প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও গড়ে মাত্র ১২ হাজার পেশায় যুক্ত হন।

‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই’

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খান মো. গোলাম মোরশেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রের কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই। নার্স তৈরি হচ্ছে, কিন্তু কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ২০২১ সালের পর থেকে সরকারি চাকরিতে নার্স নিয়োগ বন্ধ। বিদেশে নার্সের চাহিদা থাকলেও উপযুক্ত নীতিমালা ও আইনি কাঠামোর অভাবে পাঠানো যাচ্ছে না।

গোলাম মোরশেদ আরো বলেন, ‘যথাযথ বেতন কাঠামো, মানসম্মত শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে নার্স সংকট নিরসন সম্ভব নয়।’

ধীরগতির উদ্যোগ

বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের (বিএনএমসি) রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার বলেন, ‘নার্স সংকট দীর্ঘদিনের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও কাউন্সিল একসঙ্গে কাজ করছে। তবে চাহিদার তুলনায় নার্স তৈরির হার অনেক কম। বিদেশে চাহিদা বাড়ায় সংকট আরো প্রকট হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন এই সংকট নিরসনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, গ্লোবাল কম্পিটেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণ, নিয়মিত অ্যাক্রেডিটেশন ও মূল্যায়ন, নীতিমালাবহির্ভূত প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের জন্য নিরীক্ষা ও অডিট কার্যক্রম চালু।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতের মূল ভিত্তি হিসেবে নার্সদের উপযুক্ত স্বীকৃতি ও মর্যাদা না দিলে শুধু সেবার মান নয়, পুরো ব্যবস্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে।