ঢাকা ০৫:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শীলখালীতে র‌্যাবের অভিযান: জিম্মিদশা থেকে ২৪ জনকে উদ্ধার চুরি হওয়া রামুর আল-আমিন স্টোরের ১২ লাখ টাকার মালামালসহ ৩ চোর আটক ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিএনপি হতাশ : সালাহউদ্দিন পিটি স্কুল থেকে অ’প’হৃ’ত ব্যবসায়ী আলমগীর সাবরাং থেকে উদ্ধার: আটক ১ বাংলাদেশের প্রথম ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ শিশু রুহাব ভারতের অন্ধ্র উপকূলে মোনথার আঘাত, ১ জনের মৃত্যু রাজনীতি চরিত্র বদলায়, কাহিনী বদলায় না ইসলামাবাদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক গ্রেফতার একলাফে সাড়ে ১০ হাজার টাকা কমলো স্বর্ণের দাম পল্টন ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল নিখোঁজের ২৫ ঘণ্টা পর বাঁকখালি নদী থেকে ইব্রাহিমের ম’র’দে’হ উদ্ধার কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক কোনো ফ্লাইট-জরুরি অবতরণও নিষেধ যে কারণে.. সাগরজলে নারী পর্যটকের গোসলের ভিডিও ধারণ, টিকটকার গ্রেফতার কালারমারছড়ায় পুলিশের অভিযান: অস্ত্রসহ আটক ৩ মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সৌজন্যে সাক্ষাৎ

ভিউ বাণিজ্যের জন্য নারীদের আপত্তিকর প্রশ্ন!

  • আফজারা রিয়া
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৭:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 4219

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে ‘মায়া শালিক’ নামের একটি ফেসবুক পেজ। এই পেজ থেকে নিয়মিত ভিডিও কনটেন্ট তৈরি ও প্রকাশ করা হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে এই ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’ নারীদেরকে ইঙ্গিতপূর্ণ ও আপত্তিকর অশালীন প্রশ্ন করে হেয় ও বিব্রত করার প্রবণতাই বেশি।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, পেজটির পরিচালনাকারী তরুণ এক তরুণীকে জিজ্ঞেস করছেন, “তার জনি সিন্স কোথায়। তরুণী বিব্রত হয়ে উত্তর দেন। এরপর ওই ব্যক্তি আবারও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে জানতে চান, তিনি কিভাবে জনি সিন্স চালান বা ব্যবহার করেন। এমন প্রশ্নে বিব্রত হয়ে তরুণী আর কোনো উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন।”

ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর অনলাইনে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে ভিডিওতে থাকা মেয়েটিকেও কটূক্তি করতে থাকে। পরে সমালোচনার মুখে ভিডিওটি পেজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তবে এটি একক কোনো ঘটনা নয়। ‘মায়া শালিক’ পেজের বেশিরভাগ ভিডিওতেই মেয়েদের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অশোভন প্রশ্ন ও মন্তব্য পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের ভাইরাল ফটোগ্রাফার কাজল থেকে শুরু করে বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তাও বাদ যাননি এসব কনটেন্টের শিকার হওয়া থেকে।

কারও কাছে জানতে চাওয়া হয় তার বয়ফ্রেন্ড কয়জন, কাউকে বলা হয়েছে তাকে বয়ফ্রেন্ড বানাবেন কিনা, আবার কাউকে গান গাইতে বা নাচ দেখাতে বাধ্য করা হয়েছে। সবকিছুই করা হয়েছে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের নামে।

এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা। সাংস্কৃতিক সংগঠক জাহেদুল হক সুমন বলেন, “কনটেন্টের নামে নারীদের হ্যারাসমেন্ট কোনোভাবেই বিনোদন নয়। বরং এটি সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি।”

“এভাবে নারীদেরকে বিব্রত করে বানানো ভিডিও শুধু অশ্লীলতাই ছড়াচ্ছে না, সামাজিক পরিবেশও নষ্ট করছে” – বলেন সুমন।

একটি ইংরেজি দৈনিকের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোকাম্মেল শুভ বলেন, কক্সবাজারে কনটেন্ট বানানোর অসংখ্য ইতিবাচক বিষয় রয়েছে। সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্থানীয় সংস্কৃতি ও অজানা অনেক বিষয়ই দর্শকের কাছে আগ্রহ জাগাতে পারে। অথচ সেসব উপেক্ষা করে এই ধরনের আপত্তিকর কনটেন্ট বানানো হচ্ছে জনপ্রিয়তার আশায়।

শুভ বলেন, “এই ধরণের কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া না হলে এটি তরুণ প্রজন্মের জন্য ভুল বার্তা বয়ে আনবে”।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, কেউ চাইলেই কাউকে ধরে এমন আপত্তিকর প্রশ্ন করতে পারেন কি না; কিংবা ‘ভিউ বাণিজ্যের’ চেষ্টায় আবার সেসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করাটাও কতটা আইনসিদ্ধ?

আইনজ্ঞরা বলছেন, সে ব্যক্তি যেই হোক, এভাবে কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করার অধিকার ‘কারো নেই’।

যারা এটা করছেন তাদের মূল লক্ষ্য ‘ভিউ বাণিজ্য’। ব্যক্তিগত বিষয়ে যেনোতেনো প্রশ্ন করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগ আসলে এ বিষয়ে ‘ব্যবস্থা নেওয়ার’ কথা বলা হচ্ছে। তবে এখনও এমন কোনো বিষয়ে অভিযোগ আসেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে নেটিজেনদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মায়া শালিক পেইজের এডমিন রিদওয়ানুল হক মাহিন জানান, তিনি নারীদের সাথে এমন প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক কনটেন্ট না বানিয়ে ভিন্নধারার কনটেন্ট বানানোর চেষ্টা করছেন। যা কক্সবাজারের মানুষেরা পছন্দ করবে।

সম্প্রতি ডিলিটকৃত ভিডিওটির বিষয়ে তিনি বলেন, ভিডিওটি আপলোড করার পর আমি বুঝতে পারিনি নেটিজেনরা এটিকে নেতিবাচকভাবে দেখবে। আমি আমার ভুল বোঝা মাত্র ভিডিওটি সরিয়ে ফেলেছি।

এছাড়া ফটোগ্রাফার কাজলকে নিয়ে বানানো ভিডিওটির বিষয়ে তিনি বলেন, কাজল বয়সে ছোট হওয়ায় ইতিবাচক প্রশ্নটি নেতিবাচকভাবে নিয়েছে। যার কারনে আমি পরে ফেসবুকে এসে ক্ষমা ও চেয়েছি।

মায়া শালিকের এডমিন সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল। আমিও ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তবে আমি আমার ভুলগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করছি। কক্সবাজার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করার চিন্তাভাবনাও করছি। আমি আশা করব সবাই আমার পুরনো ভুলগুলো ভুলে গিয়ে আমাকে দ্বিতীয় একটি সুযোগ দেবেন।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

This will close in 6 seconds

ভিউ বাণিজ্যের জন্য নারীদের আপত্তিকর প্রশ্ন!

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে ‘মায়া শালিক’ নামের একটি ফেসবুক পেজ। এই পেজ থেকে নিয়মিত ভিডিও কনটেন্ট তৈরি ও প্রকাশ করা হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে এই ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’ নারীদেরকে ইঙ্গিতপূর্ণ ও আপত্তিকর অশালীন প্রশ্ন করে হেয় ও বিব্রত করার প্রবণতাই বেশি।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, পেজটির পরিচালনাকারী তরুণ এক তরুণীকে জিজ্ঞেস করছেন, “তার জনি সিন্স কোথায়। তরুণী বিব্রত হয়ে উত্তর দেন। এরপর ওই ব্যক্তি আবারও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে জানতে চান, তিনি কিভাবে জনি সিন্স চালান বা ব্যবহার করেন। এমন প্রশ্নে বিব্রত হয়ে তরুণী আর কোনো উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন।”

ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর অনলাইনে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে ভিডিওতে থাকা মেয়েটিকেও কটূক্তি করতে থাকে। পরে সমালোচনার মুখে ভিডিওটি পেজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তবে এটি একক কোনো ঘটনা নয়। ‘মায়া শালিক’ পেজের বেশিরভাগ ভিডিওতেই মেয়েদের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অশোভন প্রশ্ন ও মন্তব্য পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের ভাইরাল ফটোগ্রাফার কাজল থেকে শুরু করে বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তাও বাদ যাননি এসব কনটেন্টের শিকার হওয়া থেকে।

কারও কাছে জানতে চাওয়া হয় তার বয়ফ্রেন্ড কয়জন, কাউকে বলা হয়েছে তাকে বয়ফ্রেন্ড বানাবেন কিনা, আবার কাউকে গান গাইতে বা নাচ দেখাতে বাধ্য করা হয়েছে। সবকিছুই করা হয়েছে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের নামে।

এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা। সাংস্কৃতিক সংগঠক জাহেদুল হক সুমন বলেন, “কনটেন্টের নামে নারীদের হ্যারাসমেন্ট কোনোভাবেই বিনোদন নয়। বরং এটি সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি।”

“এভাবে নারীদেরকে বিব্রত করে বানানো ভিডিও শুধু অশ্লীলতাই ছড়াচ্ছে না, সামাজিক পরিবেশও নষ্ট করছে” – বলেন সুমন।

একটি ইংরেজি দৈনিকের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোকাম্মেল শুভ বলেন, কক্সবাজারে কনটেন্ট বানানোর অসংখ্য ইতিবাচক বিষয় রয়েছে। সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্থানীয় সংস্কৃতি ও অজানা অনেক বিষয়ই দর্শকের কাছে আগ্রহ জাগাতে পারে। অথচ সেসব উপেক্ষা করে এই ধরনের আপত্তিকর কনটেন্ট বানানো হচ্ছে জনপ্রিয়তার আশায়।

শুভ বলেন, “এই ধরণের কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া না হলে এটি তরুণ প্রজন্মের জন্য ভুল বার্তা বয়ে আনবে”।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, কেউ চাইলেই কাউকে ধরে এমন আপত্তিকর প্রশ্ন করতে পারেন কি না; কিংবা ‘ভিউ বাণিজ্যের’ চেষ্টায় আবার সেসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করাটাও কতটা আইনসিদ্ধ?

আইনজ্ঞরা বলছেন, সে ব্যক্তি যেই হোক, এভাবে কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করার অধিকার ‘কারো নেই’।

যারা এটা করছেন তাদের মূল লক্ষ্য ‘ভিউ বাণিজ্য’। ব্যক্তিগত বিষয়ে যেনোতেনো প্রশ্ন করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগ আসলে এ বিষয়ে ‘ব্যবস্থা নেওয়ার’ কথা বলা হচ্ছে। তবে এখনও এমন কোনো বিষয়ে অভিযোগ আসেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে নেটিজেনদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মায়া শালিক পেইজের এডমিন রিদওয়ানুল হক মাহিন জানান, তিনি নারীদের সাথে এমন প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক কনটেন্ট না বানিয়ে ভিন্নধারার কনটেন্ট বানানোর চেষ্টা করছেন। যা কক্সবাজারের মানুষেরা পছন্দ করবে।

সম্প্রতি ডিলিটকৃত ভিডিওটির বিষয়ে তিনি বলেন, ভিডিওটি আপলোড করার পর আমি বুঝতে পারিনি নেটিজেনরা এটিকে নেতিবাচকভাবে দেখবে। আমি আমার ভুল বোঝা মাত্র ভিডিওটি সরিয়ে ফেলেছি।

এছাড়া ফটোগ্রাফার কাজলকে নিয়ে বানানো ভিডিওটির বিষয়ে তিনি বলেন, কাজল বয়সে ছোট হওয়ায় ইতিবাচক প্রশ্নটি নেতিবাচকভাবে নিয়েছে। যার কারনে আমি পরে ফেসবুকে এসে ক্ষমা ও চেয়েছি।

মায়া শালিকের এডমিন সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল। আমিও ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তবে আমি আমার ভুলগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করছি। কক্সবাজার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করার চিন্তাভাবনাও করছি। আমি আশা করব সবাই আমার পুরনো ভুলগুলো ভুলে গিয়ে আমাকে দ্বিতীয় একটি সুযোগ দেবেন।