চীনা ঋণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের পর প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের কাছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, এ বছরের মধ্যেই আর্থিক চুক্তি (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট) সই করতে পারে দুই দেশ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে, ইতিমধ্যে চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংস্থা প্রকল্পের সমীক্ষা করেছে।
প্রকল্পটির পুরো নাম ‘কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’ বা তিস্তা নদীর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প। এটি তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামেও পরিচিত। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন ও ভারত—দুই দেশই বিভিন্ন সময়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। ২০২৪ সালের মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়েত্রা তিস্তা প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারও চেয়েছিল, প্রকল্পটিতে যেন ভারত অর্থায়ন করে।
চীন সফর নিয়ে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘চীন তো রেডি, কিন্তু আমি চাচ্ছি যে এটা ইন্ডিয়া করে দিক, এই প্রজেক্টটা করলে এই প্রজেক্টটার জন্য যা দরকার, ইন্ডিয়া দিতেই থাকবে। ঠিক আছে? যা সাফ সাফ কথা, রাখঢাক নাই।’
সংবাদ সম্মেলনের ২২ দিন পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমান সরকার চাইছে, চীনের ঋণে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়িত হোক।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় গত ২৬ মে একটি চিঠি পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। চিঠিতে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের ঋণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। পরে গত জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গত ৫ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তা প্রকল্প চীনের ঋণে বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের আগ্রহ রয়েছে। চীনও প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করতে চায়। দুই পক্ষের সম্মতিতেই বিষয়টি অগ্রসর হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের নকশা এখনো ঠিক হয়নি। এখন মূল কাজ হবে নকশা ঠিক করা। এটি করতে পারলে প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি ও আর্থিক চুক্তির প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে।
প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, তিস্তা প্রকল্পের প্রথম পর্যায় (ফার্স্ট ফেজ) বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ (ডলারপ্রতি ১২২ টাকা ধরে)। এর মধ্যে চীনের কাছ থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে ৫৫ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা)। বাকি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালে। শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৯ সাল।
প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে উল্লেখ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আরও বলা হয়, এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের চিঠির সঙ্গে সমীক্ষা প্রতিবেদনটিও পাঠিয়েছে। সমীক্ষা করেছে পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না (পাওয়ার চায়না)। চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত এ সংস্থা মূলত কোনো প্রকল্পের পরিকল্পনা, নির্মাণ, অর্থায়ন ও বিনিয়োগ করে থাকে।
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও সমীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গত ১ জুলাই ইআরডিতে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। চিঠিতে কমিশন বলেছে, প্রকল্পের প্রাথমিক যে ব্যয় ধরা হয়েছে, তা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের শর্তে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অনুমোদন করেছেন। প্রকল্পে চীনের কাছে ঋণ চাওয়া যেতে পারে বলে কমিশন ইআরডিকে জানিয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ইআরডি মধ্যস্থতা করে থাকে।
ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী জুলাইয়ের শুরুতে প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তা প্রকল্পে চীনের কাছে ঋণ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প প্রণয়নের কাজও চলছে।
ইআরডির একটি সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে ঋণের প্রস্তাব পাওয়ার পর চীন সরকার চুক্তির একটি খসড়া তৈরি করে পাঠাবে। এ সময়ের মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে। কাজ দুটি সমান্তরালভাবে চলবে।
তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত ২৯ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তা প্রকল্পে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ তখনো তাঁরা পাননি।
গ্রীষ্মে পানিহীনতা, বর্ষায় ভাঙন
তিস্তা বাংলাদেশ-ভারতের অভিন্ন নদী। এটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। ভারত তার অংশে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করে। একদিকে ভারতের পানি প্রত্যাহার, অন্যদিকে ভাঙন—এ দুই কারণে বাংলাদেশ অংশে নদীটির তীরবর্তী মানুষদের জীবন-জীবিকা ও বসতি হুমকিতে পড়েছে।
তিস্তায় প্রয়োজনের সময় পানি না পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরের দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের। গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দারিদ্র্যের যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে, তাতে উত্তরাঞ্চলের এসব জেলার দারিদ্র্যের হার তুলনামূলক বেশি বলে উঠে আসে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ। বিশেষ করে প্রায় ২০ কিলোমিটারে পরিস্থিতি ভয়াবহ। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলা অংশে টানা ভাঙন হয়। ভাঙন আছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধায়ও। ভাঙন প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত ৩০ জুলাই প্রথম আলোকে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। ভাটির দেশ হিসেবে এবং দীর্ঘদিন ধরে চুক্তি না হওয়ায় এই নদীর প্রবাহের ওপর বাংলাদেশের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যাও পাচ্ছে না। অন্যদিকে প্রতিবছর নদীভাঙন, বন্যার আতঙ্ক আর একই সঙ্গে সেচের পানির অভাবে থাকা এই নদীনির্ভর জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি করছে, যা নদীটিতে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করবে, আর আকস্মিক বন্যা ও তীব্র ভাঙন থেকে মানুষকে বাঁচাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তিস্তাপাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চীনের সাহায্যে সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’
কী থাকছে প্রকল্পে
২০১৬ সালে সমীক্ষা শুরুর মধ্য দিয়ে তিস্তা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রকল্পের আওতায় নদীর ১০২ কিলোমিটারে খনন (ড্রেজিং) করা হবে। এতে নদীর গভীরতা প্রায় ১০ মিটার বাড়বে। ফলে বন্যার পানিতে নদী-তীরবর্তী বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হবে না। ভূমি উদ্ধার ও উন্নয়ন করা হবে ১৭১ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। বাঁধ নির্মিত হবে ২০৩ কিলোমিটার। এ ছাড়া চর খনন, নদীর দুই পাড়ে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ, বালু সরিয়ে কৃষিজমি উদ্ধার করা হবে।
পাউবো বলছে, প্রকল্পের আওতায় গ্রোয়েন (বাঁধ) নির্মাণ ও তীর প্রতিরক্ষার কাজের মাধ্যমে নদীভাঙন রোধ হবে। বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতকাজের মাধ্যমে বন্যার ঝুঁকি কমবে। ড্রেজিংয়ের (খনন) মাধ্যমে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও নদী পুনরুদ্ধার হবে এবং শাখানদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নদীর দুই পাড়ে থানা, কোস্টগার্ড ও সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকবে। এ ছাড়া বাঁধের দুই পাশে সমুদ্রসৈকতের মতো মেরিন ড্রাইভ, হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ ও পর্যটন নগরী, পরিকল্পিত শহর, নগর ও বন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো।
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত গত ২৮ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, তিন কারণে বাংলাদেশে তিস্তা প্রকল্পটি খুবই দরকার। এক. বর্ষার সময় তিস্তা অববাহিকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা। দুই. বর্ষার আগে-পরে নদীর ভাঙন কমানো। তিন. শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ বাড়ানো। তিনি বলেন, ‘কারিগরি দিক দিয়ে জটিল এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শক সভা করার কথা ছিল। তবে সেটা হয়েছে বলে শুনিনি। অন্তত আমাকে কেউ ডাকেনি। হয়তো আমাকে উপযুক্ত মনে করেনি।’
আইনুন নিশাত বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রচুর টাকা দরকার। যারা এগিয়ে আসবে, সরকার সব দিক বিবেচনায় তাদের কাছ থেকেই ঋণ নেবে। চীন শুধু অর্থ নয়, প্রযুক্তি নিয়ে আসবে। তবে তিনি মনে করেন, তিস্তা প্রকল্পে চীন যেকোনো ধরনের কারিগরি কাজ করুক না কেন, ভারত না দিলে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানিপ্রবাহ বাড়বে না। ভারতের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে।
তিস্তা চুক্তি আর হলো না
তিস্তার পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ পুরোনো। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি অস্থায়ী পানি বণ্টন চুক্তি হয়েছিল, যেখানে তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারতের এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে বলে ঠিক হয়। তবে স্থায়ী চুক্তি কখনোই হয়নি।
২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। একটি খসড়াও তৈরি হয়েছিল। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে শেষ সময়ে তা আটকে যায়। বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় বিষয়টি ভারতের কাছে তুললেও চুক্তির বিষয়টি আর এগোয়নি।
তিস্তা ভূরাজনৈতিক দিক দিয়ে একটি সংবেদনশীল প্রকল্প। যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ আরও ১২টি দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কে (আইপিইএফ) বাংলাদেশকে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে চীন চায় বাংলাদেশ যেন তাদের সঙ্গে থাকে। চীন এখন পাকিস্তানের সঙ্গে একটি ফোরামে বাংলাদেশকে চাইছে। এ পরিস্থিতিতে তিস্তার মতো ‘কৌশলগত’ প্রকল্পে কে বিনিয়োগ করবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তিস্তা প্রকল্পে চীনা ঋণ চাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা একটু ‘ধীরে চলো নীতি’র পক্ষপাতী। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের ঋণ চাওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য নেই। সাধারণত বিদেশের কাছে প্রকল্পের আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে ইআরডি সরাসরি বিষয়টি দেখভাল করে। কোনো প্রকল্পে আর্থিক সহায়তার ব্যাপারে চুক্তি বা সমঝোতা হলে তাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে একজন সাবেক কূটনীতিক ও একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষকের অভিমত নিয়েছে প্রথম আলো। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ২০১১ সালে ভারতের পানি বণ্টন চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। ফলে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য আর বিকল্প কোনো পথ নেই। সে কারণে সরকার তিস্তা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের দিকে ঝুঁকছে। তবে এ বিষয়ে দেশের স্বার্থের দিকটি মাথায় রাখতে হবে।
হুমায়ূন কবির আরও বলেন, এ অঞ্চলে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটা বৃহত্তর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, ভারত একদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। আবার চীন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করছে। তাই পানিপ্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পারস্পরিক সহযোগিতার জায়গা তৈরি করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাইলে এ অঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন পানি ব্যবস্থাপনার জন্য একটা উদ্যোগ নিতে পারে।
অন্যদিকে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তা প্রকল্পটি বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। তিস্তা অববাহিকায় পানিপ্রবাহ না থাকায় মরুকরণ হচ্ছে। তবে শিলিগুড়ি করিডরে হওয়ায় ওই এলাকাটি খুবই স্পর্শকাতর। ভারত ওই অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি চায় না। চীনের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গেলে ভারতের পক্ষ থেকে বিরোধিতা আসবে। তিনি বলেন, এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত না নেওয়াটাই ভালো। নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে এসব প্রকল্পে হাত দেওয়া উচিত।
সূত্র: প্রথম আলো