ঢাকা ০১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফে মানব পাচারে ‘জিরো টলারেন্স’ বলছে বিজিবি পালংখালী জামায়াতের কর্মী সমাবেশে জেলা আমীর আনোয়ারী-ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দাঁড়ি পাল্লার বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন টেকনাফে ১৪ মামলার পলাতক আসামী মুন্না র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার বিএফইউজে’র নির্বাহী পরিষদের সভায় সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার’র কমিটি অনুমোদন কক্সবাজার সৈকতে ‘লোক সমুদ্র’ ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ বাস্তবায়নে কক্সবাজারে ৫টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন নৌবাহিনীর নারী নেতৃত্বকে জাতির গৌরব বললেন লুৎফুর রহমান কাজল কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সভায় বক্তারা: ‎কুতুবদিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটনের বিকল্প নেই ‎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আস্থা গড়ার বদলে চাপ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ চৌফলদন্ডীর আমজাদ হত্যার আসামী ছৈয়দ নুর গ্রেফতার সমুদ্রবন্দর থেকে নামল সতর্ক সংকেত রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘের দ্বৈত ন্যারেটিভ: কেন এই দ্বন্দ্ব? উখিয়া হাসপাতালের ২ টন ময়লা অপসারণ করলো বিডি ক্লিন টিম মাতারবাড়িতে শ্রমিক দলের সভাপতি মামুনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন মধ্যরাতে ইডেন গার্ডেনের ‘ছাদ থেকে পড়ে’ যুবকের মৃত্যু!

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: অর্জন ও অগ্রগতি

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনের পথ ধরে অভূতপূর্ব এক ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার এক বছর পূর্ণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে সামনে রেখে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফেরানোর যাত্রায় শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করেছে।
জুলা গণঅভ্যুত্থান দিবসে রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতাকে পাশে রেখে সেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

সেদিনই মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছেন। আর রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এগিয়ে চলছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নের বিচারের কাজও।

এক বছরের পথ চলায় রাজনৈতিক পরিসরে সবচেয়ে আলোচিত এসব বিষয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারে তরফে ১২টি ‘অর্জনের’ কথা তুলে ধরা হয়েছে ইতোমধ্যে।

কিন্তু রাজনৈতিক পরিমণ্ডল ও জনপরিসরে সরকারের এক বছরের কাজের যে মূল্যায়ন আসছে সেখানে ব্যর্থতার খতিয়ানও কম নয়।

ভঙ্গুর অর্থনীতি কতটা দিশা পেল? দেশে বিনিয়োগ বাড়ল? তরুণদের কর্মসংস্থানে নতুন নতুন সুযোগ কি তৈরি হল? এমন প্রশ্নে বিশ্লেষকরা নেতিবাচক কথাই বলছেন। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমল কি না, মানুষ কতটা নির্ভয়ে জীবনযাপন করতে পারছে, ‘কর্তৃত্ববাদী’ সরকারকে হটানোর পর রাজনৈতিক হিংসা কি দূর হল–এমন সব প্রশ্ন সাধারণে ঘুরছে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশ ও আনসারদের আন্দোলনের পর একের এক ছাত্র-শ্রমিক-পেশাজীবী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাবি মেনে, আবার কিছু ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আন্দোলন সামাল দিতে হয়েছে।

জ্বালানি খাতে দায়মুক্তির আইন বাতিল হলেও এ আইনের আওতায় করা চুক্তি বাতিল হয়নি। গ্যাস অনুসন্ধানে অগ্রগতি না থাকায় আমদানি নির্ভরতা আগের মতই রয়ে গেছে। ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধির কিছু ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। কিছুটা সংশোধন করা হলেও বিতর্কিত ৫৪ ধারা রয়েই গেছে।

কূটনীতির ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন আর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ আলোচনায় ছিল গত এক বছর। এ সময়ে বড় ধরনের বিরোধিতার মুখে না পড়লেও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদের মুখে রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে পিছু হটে সরকার।

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার বিরোধিতাকে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে সমালোচিত হন সরকারপ্রধান ইউনূস।

রাজনীতির বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জুলাই আন্দোলনের একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষভাবে সাজাতে হবে, কাজ করার তাগাদা তৈরি করতে হবে।

“কিন্তু আমরা দেখছি যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যক্তি বদল হয়েছে, ক্ষমতার একটা চর্চা এখনও আছে।”

নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা তুলে ধরে নৃবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, “সেটা কি আগের নির্বাচনগুলোর মত হবে, ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন হবে?

“কারণ, আমরা দেখছি দলগুলোর মধ্যে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নানা ধরনের সমঝোতা চলছে। কিন্তু মানুষের ভোটের যে অধিকার, নিরাপদভাবে সুন্দর পরিবেশে ভোট দেওয়ার অধিকার, সেটা হবে কি-না, বলা কঠিন।”

তা সত্বেও নির্বাচন আয়োজন যে গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে জোবাইদা নাসরীন বলেন, “নির্বাচন দিতেই হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। কারণ এখন যে পরিস্থিতি, সেখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে যদি ক্ষমতা হস্তান্তর না করে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে যাবে।”

আরেক বিশ্লেষক অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা, নাগরিকবান্ধব আইনশৃঙ্খলা, সেটাও নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিল। অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে, সবটা নিশ্চিত হয় নাই।

“তো, এটার জন্য সরকারের পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশি কার্যকর করার ব্যাপারে মনোনিবেশ করা দরকার এবং জুলাই আন্দোলনকে সফল করতে হলে সকল বেআইনি, অগণতান্ত্রিক পুলিশি আচরণ মুক্ত একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে।”

অভ্যুত্থানের পথ ধরে অন্তর্বর্তী সরকার

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, শেষমেশ তা গড়েছে সরকার উৎখাতের ইতিহাস।

সরকারি চাকরিতে বৈষম্য বিলোপের দাবির এই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ শাসনামলে গণতন্ত্রহীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, বেকারত্ব আর মূল্যস্ফীতি নিয়ে ক্ষোভের মিশেলে ঘটে জনবিস্ফোরণ।সরকারের তরফে জবাব ছিল- গুলি, টিয়ারশেল আর লাঠি; এককথায় কেবলই বলপ্রয়োগ। প্রথমে ফেইসবুক, পরে ইন্টারনেট বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় সরকার। তাতে হিতে বিপরীত হয়।আন্দোলনে রক্তপাত শুরু হওয়ার ২০ দিনের মধ্যেই লাশ আর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে ৫ অগাস্ট পতন হয় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের। ৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন সাড়ে ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালিয়ে আসা শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়েন তার অমাত্যরা। নজিরবিহীনভাবে দেশ তিন দিন সরকারবিহীন থাকার পর পর ৮ অগাস্ট সন্ধ্যায় শপথ নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।

বিচার কতদূর?

শপথ গ্রহণের পর জুলাই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের জন্য বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।জুলাই অভ্যুত্থানে ১৬ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সেই অভ্যুত্থানে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত এবং আরও কয়েক হাজার আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে।

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, গত বছরের জুলাই-অগাস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হত্যা-নিপীড়নের ঘটনায় এ বছরের জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৬০১টি। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৬৩৭টি।

এই দেড় সহস্রাধিক মামলার মধ্যে অন্তত ১৫টির অভিযোগপত্র দেওয়ার কথা জুলাই মাসের শেষে জানিয়েছে পুলিশ। ৭০ শতাংশ মামলার তদন্তে ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ হওয়ার কথা বলছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এসব মামলার মধ্যে তিন শতাধিক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলি করে মানুষ হতাহতের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে ১ হাজার ৫৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত পুলিশের ৪১ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিচার ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এখন চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ।

আসামিদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। বাকি দুজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম চলছে।আন্দোলন দমনে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়।

এর পক্ষে আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া সংক্রান্ত শেখ হাসিনার অডিও টেপ এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন।ট্রাইব্যুনালে আরেক মামলায় রাজধানীর চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিচার শুরু হয়েছে ১৪ জুলাই।

তাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুলকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলছে।

এছাড়া আন্দোলনের মধ্যে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৩০ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

সংস্কারের যজ্ঞ ঠেকল জুলাই সনদে

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলো নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়।গণতন্ত্রের পথে ক্ষমতায় এসে আবার যেন কেউ কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করতে না পারে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অবিচার, দুঃশাসন আর বৈষম্যের যেন অবসান হয়, সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির হাত থেকে যেন মানুষের মুক্তি মেলে, বাংলাদেশ যাতে সত্যিকার অর্থে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য সংবিধান আর শাসন পদ্ধতিতে বড় ধরনের সংস্কারের দাবি সামনে আসে।

সেই দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।

প্রধান প্রধান সংস্কার কমিশনগুলো যে সুপারিশ পেশ করেছে, সেগুলোর মধ্যে ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে আশু বাস্তবায়নযোগ্য বহু সংস্কার’ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “এই সংস্কারগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক খাত, বিচার ব্যবস্থা ও জনপ্রশাসনে গতিশীলতা আসবে; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানি হ্রাস পাবে।”

সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

১১ সংস্কার কমিশনের মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন-এ পাঁচটি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে ঐকমত্য কমিশন।

প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হয়, সেখানে ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার কথা সম্প্রতি ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে তালিকা দিয়ে জানানো হয়।

যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা ছিল, সেসব বিষয়ে নিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা। ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ২৩ দিন প্রায় ত্রিশটি দলকে নিয়ে একসঙ্গে বসে দশটি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ মোট ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে কমিশন।

ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে কিছু বিষয় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারবে। বাকি বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদে পাস করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার নেওয়া হবে জুলাই জাতীয় সনদের মাধ্যমে।

সংস্কার প্রস্তাবের আলোচনার মধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া প্রস্তুত করেছে ঐকমত্য কমিশন। যেসব প্রস্তাব বা সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, নির্বাচনের পর দুই বছরের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেখানে।

জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির পটভূমি, ঐকমত্য কমিশনের গঠন ও কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি ঐকমত্য হওয়া প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো যুক্ত করা হবে এই সনদে। খসড়া চূড়ান্ত করে তাতে রাজনৈতিক দলের নেতা বা প্রতিনিধিদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সদস্যদের সই নেওয়া হবে।

মঙ্গলবারের ভাষণে জুলাই সনদের বিষয়ে ইউনূস বলেন, “সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। ঐকমত্য কমিশনের পরিচালনায় দেশের সকল রাজনৈতিক দল মিলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে এসেছে।

“জুলাই সনদ একটি ঐতিহাসিক অর্জন। এটা শুধু আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে নয়, বৃহত্তর পরিমণ্ডলের রাজনৈতিক ইতিহাসেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দলিলতো স্মরণীয় হয়ে থাকবেই, এটা রচনার প্রক্রিয়াও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

সরকারের ১৯ মাস বয়সে ভোট

রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পর সময় যত গড়িয়েছে ততই সামনে আসতে থাকে জাতীয় নির্বাচনের দাবি।সরকারপ্রধানের তরফে ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ে আভাস দেওয়া হয়।

সরকারপ্রধান ইউনূসসহ উপদেষ্টাদের নানা বক্তব্যে আশ্বস্ত না হয়ে নির্বাচনের পথনকশা (রোডম্যাপ) চাওয়ার পাশাপাশি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের দাবি জানিয়েছিল বিএনপি।

ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়ার বিএনপির দাবির বিপরীতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবি আসে জামায়াতে ইসলামী ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির তরফে।

ভোটের তারিখ নিয়ে বিরোধের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী অবস্থান প্রকাশ করে আসছিল বিএনপি; মাঠের শক্তিও দেখাচ্ছিল বিভিন্নভাবে।

এর মধ্যে কোরবানি ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সময়সীমা কিছুটা এগিয়ে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের সময় ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা।

জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন দল তার এই বক্তব্যকে স্বাগত জানালেও বিএনপি আগের অবস্থানেই অনড় থাকে। তাদের দাবি ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের।

মাঠে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে এমন প্রেক্ষাপটে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ অবস্থার কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন বিশ্লেষকরা।

এর মধ্যে ১১ জুন লন্ডনে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তাদের বৈঠকের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, “সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রোজা শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে।”

সেই ঘোষণার মধ্যে শর্ত জুড়ে থাকায় নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল।জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই ভোট আয়োজনের ঘোষণা এল।

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেছেন, “আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব।

“অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।”

বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তফসিলের অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছেন।প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণায় ‘দোদুল্যমানতা আর গুজবের অবসান’ হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম।

অর্থনীতি যে দিকে

আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে উদ্যোগ দেওয়ার কথা বলে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া আর্থিক খাতের দুর্নীতি নিয়ে একটি শ্বেতপত্রও প্রকাশ হয়েছে সরকারি উদ্যোগে।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেছেন, “যখন এক বছর আগে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ বছরব্যাপী একটানা ধ্বংসযজ্ঞ এবং লুটপাটে বিধ্বস্ত এক অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন কারোরই মনে হচ্ছিল না এই বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে আবার সহজে চালু করা যাবে।

“মাত্র এক বছরের মধ্যে আমরা এতদূর রাস্তা অতিক্রম করতে পারব যা চিন্তাই করা যায়নি। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবার পালা।”

অর্থনীতি ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ এই তথ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসা, রপ্তানি বাজারে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, ৪০০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, নতুন করে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পারা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

তবে দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতির সূচক বলছে, ডলারের উচ্চমূল্যের জন্য রেমিটেন্স প্রবাহ তার অন্যতম। এর ফলে রিজার্ভ, দেশের আমদানি ও রপ্তানির ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে ইতিবাচকতা দেখা গেছে। এর বাইরে রপ্তানিতে সুখবর মিললেও শঙ্কা কাটেনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূরক শুল্কের কারণে। অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ককে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে সরকার।

তবে সরকারের পরিসংখ্যান বলছে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতির জেরে বিদায়ী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে দুই দশকের সবচেয়ে কম।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে সংশোধিত এডিপির মোট বরাদ্দের ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির অর্থ ব্যয়ের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

রাজস্ব আদায়ে দেখা গেছে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ৩০ জুন পর্যন্ত আদায় হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পরের কয়েক মাস সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৯ ও ১০ শতাংশের মধ্যেই ওঠানামা করছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরকার মূল্যস্ফীতি কমার তথ্য দিচ্ছে।

অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে আসার তথ্য দিয়েছিল সরকার, জুলাইয়ে তা সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে।

কিন্তু সাধারণ মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল তার চেয়ে কম, ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। কিন্তু মজুরি বৃদ্ধির হার আগের মাসের চেয়ে খুব সামান্যই বেড়ে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জুন মাসে সাধারণ মজুরি হার ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ ছিল।

মূল্যস্ফীতির চাপ পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। অগাস্টের প্রথম দিন শুক্রবার সব ধরনের সবজির দাম দাম আগের সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়ার তথ্য দিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর মুরগির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে বাজাগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়েছে।বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা, নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা ও ব্রি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে মাছের দামও বাড়তে দেখা যায়। ওই মাসের অধিকাংশ সময় খামারের ডিম প্রকারভেদে প্রতি ডজন ১১০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হলেও অগাস্টে তা ঠেকেছে ১৪০ টাকায়।অর্থাৎ পণ্যের দাম স্থির থাকছে না। কোনো পণ্যের দাম কমে তো বেড়ে যাচ্ছে অন্য এক বা একাধিক পণ্যের।

বাংলাদেশ ব্যাংক চায়, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে। ২০২৫-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে সাড়ে ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা মাথায় রেখে নতুন অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য আগের মতই আঁটসাঁট মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তাতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরো কমিয়ে আনা হয়েছে।

২০২৫ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের এ মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার ১০ শতাংশই থাকছে। মূল্যস্ফীতি যতদিন ৭ শতাংশের নিচে না নামবে, ততদিন নীতি সুদহার কমবে না বলে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন।

নীতি সুদহার বাড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর তহবিল পাওয়ার খরচ আরও বাড়ে। তাতে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুদহার বেড়ে যায়।নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নামার তথ্য এসেছে গত অর্থবছরের শেষ মাস তথা জুন মাসে। সে সময় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গত ২২ বছরের যে তথ্য রয়েছে, এ প্রবৃদ্ধি তার মধ্যে সর্বনিম্ন। এতে দেশে বিনিয়োগ খরার তথ্য স্পষ্ট হয়।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে একবার প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমেছিল; অথচ করোনাকালেও বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশের ওপরে ছিল।

বিদেশি অর্থছাড়ের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে নিম্নমুখী ধারা। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সাহায্য পাওয়ার মৌখিক আশ্বাস মিললেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরজুড়ে ধীরগতি ও ব্যয় সাশ্রয়ী নীতির প্রভাব পড়েছে বিদেশি অর্থায়ন ছাড়ের ক্ষেত্রে।

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মে সময় শেষে দেখা যায়, এ সময়ে বিদেশি অর্থছাড় কমেছে আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ। অপরদিকে সুদ ও আসল পরিশোধ বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

পাশাপাশি ওই অর্থবছরের ১১ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতিতেও ভাটা দেখা গেছে। এ সময়ে প্রতিশ্রুতি মিলেছে ৫৪৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৯২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

মঙ্গলবারের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই বছরের প্রথম তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটা দ্বিগুণের বেশি। আর অক্টোবর থেকে হিসাব করলে ছয় মাসে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত সরকারের আমলের শেষ ছয় মাসের তুলনায় দ্বিগুণ।”

বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে হংকংভিত্তিক শিল্প গোষ্ঠী হানডা বাংলাদেশের প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

সরকারের এসব তথ্যের বিপরীতে অর্থনীতির বিশ্লেষক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলছেন, স্থিতিশীল রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রবাহে ভর করে অন্তর্বর্তী সরকার ভালো অবস্থানে থাকলেও প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের আশানুরূপ ফল দেখা যায়নি।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, “বড় উদ্বেগটা হচ্ছে যে, আমাদের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের আশা খুবই কম, বিশেষ করে বেসরকারি খাতে। এবং আমরা যদি ওই সংক্রান্ত নির্দেশকগুলো দেখি, মূলধনী আমদানি, সঙ্গে ব্যাংক খাত থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ইতিহাসে সর্বনিম্ন।”

অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, প্রবৃদ্ধি যদি না বাড়ে, বিনিয়োগ যদি না হয় তাহলেতো চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে না। যে বিষয়টি গতবছরের আন্দোলনের মূলকেন্দ্রে ছিল।কিন্তু প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকারে ছিল না বলে মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান।

পালাবদলের এই সময়ে সংস্কার কাজ করার সুযোগ থাকলেও সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতির চেয়ে নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতি, রাজনীতির যে বিতর্ক, নানা ধরনের ঝুঁকি এগুলো নিয়েই তারা বেশি ব্যস্ত হয়ে যাবেন।

“সুতরাং অর্থনীতির এই জায়গাগুলো দেখা যাবে তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে আর নেই।”

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আর্থিক খাতের অবস্থান নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটি এবং টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে সুপারিশ নিলেও সেগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ না থাকার কথা বলছেন অধ্যাপক সেলিম রায়হান।

ওই দুই কমিটিতে সদস্য হিসাবে থাকা এই বিশ্লেষক বলেন, “ব্যাংকিং খাত এবং কর ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে সংস্কারের কথা শুনছি, সেটাতে খুব সমন্বিত তা বলা যায় না। অনেক অংশীজন জানেও না যে, সংস্কার কি হচ্ছে না হচ্ছে।”বাজেটে এডিপি বরাদ্দ কমানো হলেও সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সব পর্যায়ের কর্মচারীদের প্রণোদনা বৃদ্ধি করেছে সরকার।

এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি কতটা?

অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই সারা দেশে থানাগুলো আক্রান্ত হয়। হামলার মুখে পড়ে পুলিশের সদস্যরা থানা ছাড়েন। ওই সময়ে ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহতের তথ্য প্রকাশ করেছে পুলিশ সদরদপ্তর।সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তারা পালিয়ে যান।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহ পর কাজে যোগ দিতে শুরু করলেও গণহারে বদলি, জুলাই অভ্যুত্থানে বলপ্রয়োগের অভিযোগে বিচার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হামলা-হত্যার শিকার হওয়ার প্রেক্ষাপটে পুলিশকে কাজে সক্রিয় করতে হিমশিম খেতে হয় সরকারকে।সে সময় পুলিশের নিম্নস্তরের সদস্যদের মধ্য থেকে সংস্কারের দাবি উঠেছিল জোরেসোরেই।

পুলিশের ভেঙে পড়া মনোবল চাঙ্গা করতে ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ, বদল এসেছে পুলিশের লোগোতে। পরিবর্তন আসছে পোশাকেও। তাতেও যে পুলিশের মনোবল না ফেরার কথাই বলছেন পুলিশ সদস্যরা।

এর মধ্যে কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামায় সরকার; কয়েক দফা মেয়াদ বেড়ে তারা এখনও মাঠে আছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে ‘মব’ সহিংসতা আতঙ্ক ছড়ায়। অনেক সময় ‘মবের’ দাবির কাছে নতিস্বীকার করতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও দখলদারি চলতে থাকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে; ডাকাত আতঙ্কে রাতের ঢাকায় পাহারাও বসাতেও দেখা গেছে মানুষকে।

এর মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের হাতে পুলিশ সদস্য হত্যার বিচার নিয়েও বাহিনীতে এখনও অসন্তোষ থাকার কথা বলছেন কর্মকর্তারা।জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসেও পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে পুলিশের মনোবল যে এখনো ফেরেনি তা মানছেন তিনি।

“প্রধান চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে, এরকম একটা ট্রমাটিক এক্সপেরিয়েন্সের পরে এই আমার ফোর্সটাকে গুছাইয়া তাদেরকে সেন্ট পার্সেন্ট ইফেক্টিভ করা, এই জায়গাটায় কিন্তু আমি এখনও সন্তুষ্ট না আপনারা- যাই বলেন। আমি এখনও এই প্রক্রিয়ায় আছি।”

এর মধ্যেই পুলিশ সংস্কার কমিশনের স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের যে সুপারিশ, তাতে একমত পোষণ করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।কিন্তু সরকারের এক বছরে পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে, নানা ঘটনাপ্রবাহে সেই প্রশ্ন উঠছে।

অভ্যুত্থানের এক বছরে রাজনীতিতে বিরোধী মত ও পথ দমনে ‘মব’ সহিংসতা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার নজিরবিহীন কাণ্ডও দেখেছে মানুষ। এ ঘটনায় সরকারকে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

সম্প্রতি রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা করে ‘জোটবদ্ধ উচ্ছৃঙ্খল জনতা’।

থানায় গিয়ে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে আনা বা থানায় ধরে নিতে পুলিশকে বাধ্য করা হয়েছে। নৈতিক ‘পুলিশিং’ করতেও জায়গায় জায়গায় দেখা গেছে। মেয়েদের ফুটবল খেলা, সাংস্কৃতিক আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া মত ঘটনা ঘটেছে এ সময়ে।

জুলাই মাসে ‘মব’ সহিংতা ও গণপিটুনিতে ১৬ জন হত্যা শিকার হওয়ার তথ্য দিয়েছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।

সে মাসের শুরুর দিকে কুমিল্লায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে এক নারী ও তার দুই ছেলে-মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।জুন মাসের যে প্রতিবেদন এমএসএফ দিয়েছে, সেখানে এমন ঘটনায় ১০ জন নিহত হওয়ার তথ্য ছিল।

এছাড়া জুলাই মাসে রাজধানীর মিটফোর্ডে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে মাথা থেঁতলে হত্যা করার ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে।

এমএসএফের জুলাই মাসের প্রতিবেদন বলছে, এ সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪২টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিএনপির অন্তঃদ্বন্দ্বে ২৭টি ঘটনা রয়েছে।এর মধ্যে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অনুসারী ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের একটি ঘটনাও রয়েছে।

সংস্থাটি জুলাই মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় নয়জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে চারজন বিএনপির।আর পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে গোপালগঞ্জের সংঘাতে। জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় এসে গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে হামলা-সংঘর্ষের সময় গুলিতে প্রাণ হারায় তারা।

এই হামলা ও সংঘাতের জন্য কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে দায়ী করা হয়।এ ঘটনায় ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হয়েছে বলে মনে করছে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

বিএনপির চারজনের মধ্যে তিনজনই দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আর একজন জামায়াতের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন।এমএসএফের তথ্য অনযায়ী, জুন ও তার আগের মাস মে’তে রাজনৈতিক সহিংসতায় আটজন করে নিহত হয়েছিলেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র দৈনিক পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য ধরে জানুয়ারিতে থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে সারা দেশে ‘মব’ ও গণপিটুনিতে ৮৯ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। আর রাজনৈতিক সহিংসতায় ৬৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি।একই সময়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৪১টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ১১১টি।

ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন, পাকিস্তানের কাছাকাছি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছরে রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে গেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করার অংশ হিসাবে ঢাকায় স্থাপিত হয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়।

তবে কূটনীতির ক্ষেত্রে বড় সাফল্যও দেখা যায়নি। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ দেখা গেলেও, ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন রয়ে গেছে। থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক হলেও সম্পর্কের উন্নতি হয়নি, বরং দিল্লির দিক থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার কথা বলা হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো চুক্তি হয়নি। সার্ক পুনরুজ্জীবিত করাও অগ্রগতিও বলার মত নয়, আসিয়ানের সদস্য হওয়ার আশাও পূরণ হয়নি সরকারের।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষি করে সম্পূরক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনতে পারাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়’ হিসেবে দেখছে সরকার।

ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের এই সম্পর্ক অবধারিত ছিল কি-না, এমন প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “পাকিস্তানের সাথে অতোটা অবধারিত ছিল না। কিন্তু ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার একটা বড় বিষয় ছিল যে, জনগণ বড় আকারেই সমালোচনা করছিল, ভারত যেহেতু একটা দল বা সরকারি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছিল; জনগণের সাথে রাখেনি।

“ওই কারণে বড় একটা সমালোচনা ছিল, সেটা বাম, ডান, মধ্যপন্থি-সব মিলিয়ে একটা সমালোচনা ভারতের দিকে ছিল। সেটার কারণেই আমার মনে হয় সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, “পাকিস্তানের বিষয়টার অত গুরুত্ব ছিল না। কারণ মনে রাখতে হবে, যে কোনো সম্পর্কের সাথে অর্থনীতির একটা সম্পর্ক থাকে। তো, আমাদের সাথে পাকিস্তানের বড় ধরনের কোনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেই। যার জন্য সেটা আমি মনে করি না যে বড় বিষয় ছিল।”

তিনি বলেন, এই সরকার বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে নিয়ে গেছে। শুরুতে ভাবা হয়েছিল অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পরিচিতির কারণে বড় আকারে বিনিয়োগ আসবে, সে রকমটা দেখা যায়নি।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

টেকনাফে মানব পাচারে ‘জিরো টলারেন্স’ বলছে বিজিবি

This will close in 6 seconds

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: অর্জন ও অগ্রগতি

আপডেট সময় : ০২:৪৫:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনের পথ ধরে অভূতপূর্ব এক ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার এক বছর পূর্ণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে সামনে রেখে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফেরানোর যাত্রায় শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করেছে।
জুলা গণঅভ্যুত্থান দিবসে রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতাকে পাশে রেখে সেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

সেদিনই মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছেন। আর রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এগিয়ে চলছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নের বিচারের কাজও।

এক বছরের পথ চলায় রাজনৈতিক পরিসরে সবচেয়ে আলোচিত এসব বিষয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারে তরফে ১২টি ‘অর্জনের’ কথা তুলে ধরা হয়েছে ইতোমধ্যে।

কিন্তু রাজনৈতিক পরিমণ্ডল ও জনপরিসরে সরকারের এক বছরের কাজের যে মূল্যায়ন আসছে সেখানে ব্যর্থতার খতিয়ানও কম নয়।

ভঙ্গুর অর্থনীতি কতটা দিশা পেল? দেশে বিনিয়োগ বাড়ল? তরুণদের কর্মসংস্থানে নতুন নতুন সুযোগ কি তৈরি হল? এমন প্রশ্নে বিশ্লেষকরা নেতিবাচক কথাই বলছেন। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমল কি না, মানুষ কতটা নির্ভয়ে জীবনযাপন করতে পারছে, ‘কর্তৃত্ববাদী’ সরকারকে হটানোর পর রাজনৈতিক হিংসা কি দূর হল–এমন সব প্রশ্ন সাধারণে ঘুরছে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশ ও আনসারদের আন্দোলনের পর একের এক ছাত্র-শ্রমিক-পেশাজীবী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাবি মেনে, আবার কিছু ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আন্দোলন সামাল দিতে হয়েছে।

জ্বালানি খাতে দায়মুক্তির আইন বাতিল হলেও এ আইনের আওতায় করা চুক্তি বাতিল হয়নি। গ্যাস অনুসন্ধানে অগ্রগতি না থাকায় আমদানি নির্ভরতা আগের মতই রয়ে গেছে। ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধির কিছু ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। কিছুটা সংশোধন করা হলেও বিতর্কিত ৫৪ ধারা রয়েই গেছে।

কূটনীতির ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন আর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ আলোচনায় ছিল গত এক বছর। এ সময়ে বড় ধরনের বিরোধিতার মুখে না পড়লেও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদের মুখে রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে পিছু হটে সরকার।

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার বিরোধিতাকে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে সমালোচিত হন সরকারপ্রধান ইউনূস।

রাজনীতির বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জুলাই আন্দোলনের একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষভাবে সাজাতে হবে, কাজ করার তাগাদা তৈরি করতে হবে।

“কিন্তু আমরা দেখছি যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যক্তি বদল হয়েছে, ক্ষমতার একটা চর্চা এখনও আছে।”

নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা তুলে ধরে নৃবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, “সেটা কি আগের নির্বাচনগুলোর মত হবে, ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন হবে?

“কারণ, আমরা দেখছি দলগুলোর মধ্যে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নানা ধরনের সমঝোতা চলছে। কিন্তু মানুষের ভোটের যে অধিকার, নিরাপদভাবে সুন্দর পরিবেশে ভোট দেওয়ার অধিকার, সেটা হবে কি-না, বলা কঠিন।”

তা সত্বেও নির্বাচন আয়োজন যে গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে জোবাইদা নাসরীন বলেন, “নির্বাচন দিতেই হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। কারণ এখন যে পরিস্থিতি, সেখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে যদি ক্ষমতা হস্তান্তর না করে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে যাবে।”

আরেক বিশ্লেষক অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা, নাগরিকবান্ধব আইনশৃঙ্খলা, সেটাও নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিল। অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে, সবটা নিশ্চিত হয় নাই।

“তো, এটার জন্য সরকারের পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশি কার্যকর করার ব্যাপারে মনোনিবেশ করা দরকার এবং জুলাই আন্দোলনকে সফল করতে হলে সকল বেআইনি, অগণতান্ত্রিক পুলিশি আচরণ মুক্ত একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে।”

অভ্যুত্থানের পথ ধরে অন্তর্বর্তী সরকার

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, শেষমেশ তা গড়েছে সরকার উৎখাতের ইতিহাস।

সরকারি চাকরিতে বৈষম্য বিলোপের দাবির এই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ শাসনামলে গণতন্ত্রহীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, বেকারত্ব আর মূল্যস্ফীতি নিয়ে ক্ষোভের মিশেলে ঘটে জনবিস্ফোরণ।সরকারের তরফে জবাব ছিল- গুলি, টিয়ারশেল আর লাঠি; এককথায় কেবলই বলপ্রয়োগ। প্রথমে ফেইসবুক, পরে ইন্টারনেট বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় সরকার। তাতে হিতে বিপরীত হয়।আন্দোলনে রক্তপাত শুরু হওয়ার ২০ দিনের মধ্যেই লাশ আর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে ৫ অগাস্ট পতন হয় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের। ৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন সাড়ে ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালিয়ে আসা শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়েন তার অমাত্যরা। নজিরবিহীনভাবে দেশ তিন দিন সরকারবিহীন থাকার পর পর ৮ অগাস্ট সন্ধ্যায় শপথ নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।

বিচার কতদূর?

শপথ গ্রহণের পর জুলাই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের জন্য বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।জুলাই অভ্যুত্থানে ১৬ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সেই অভ্যুত্থানে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত এবং আরও কয়েক হাজার আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে।

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, গত বছরের জুলাই-অগাস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হত্যা-নিপীড়নের ঘটনায় এ বছরের জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৬০১টি। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৬৩৭টি।

এই দেড় সহস্রাধিক মামলার মধ্যে অন্তত ১৫টির অভিযোগপত্র দেওয়ার কথা জুলাই মাসের শেষে জানিয়েছে পুলিশ। ৭০ শতাংশ মামলার তদন্তে ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ হওয়ার কথা বলছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এসব মামলার মধ্যে তিন শতাধিক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলি করে মানুষ হতাহতের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে ১ হাজার ৫৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত পুলিশের ৪১ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিচার ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এখন চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ।

আসামিদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। বাকি দুজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম চলছে।আন্দোলন দমনে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়।

এর পক্ষে আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া সংক্রান্ত শেখ হাসিনার অডিও টেপ এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন।ট্রাইব্যুনালে আরেক মামলায় রাজধানীর চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিচার শুরু হয়েছে ১৪ জুলাই।

তাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুলকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলছে।

এছাড়া আন্দোলনের মধ্যে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৩০ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

সংস্কারের যজ্ঞ ঠেকল জুলাই সনদে

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলো নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়।গণতন্ত্রের পথে ক্ষমতায় এসে আবার যেন কেউ কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করতে না পারে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অবিচার, দুঃশাসন আর বৈষম্যের যেন অবসান হয়, সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির হাত থেকে যেন মানুষের মুক্তি মেলে, বাংলাদেশ যাতে সত্যিকার অর্থে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য সংবিধান আর শাসন পদ্ধতিতে বড় ধরনের সংস্কারের দাবি সামনে আসে।

সেই দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।

প্রধান প্রধান সংস্কার কমিশনগুলো যে সুপারিশ পেশ করেছে, সেগুলোর মধ্যে ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে আশু বাস্তবায়নযোগ্য বহু সংস্কার’ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “এই সংস্কারগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক খাত, বিচার ব্যবস্থা ও জনপ্রশাসনে গতিশীলতা আসবে; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানি হ্রাস পাবে।”

সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

১১ সংস্কার কমিশনের মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন-এ পাঁচটি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে ঐকমত্য কমিশন।

প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হয়, সেখানে ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার কথা সম্প্রতি ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে তালিকা দিয়ে জানানো হয়।

যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা ছিল, সেসব বিষয়ে নিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা। ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ২৩ দিন প্রায় ত্রিশটি দলকে নিয়ে একসঙ্গে বসে দশটি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ মোট ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে কমিশন।

ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে কিছু বিষয় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারবে। বাকি বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদে পাস করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার নেওয়া হবে জুলাই জাতীয় সনদের মাধ্যমে।

সংস্কার প্রস্তাবের আলোচনার মধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া প্রস্তুত করেছে ঐকমত্য কমিশন। যেসব প্রস্তাব বা সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, নির্বাচনের পর দুই বছরের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেখানে।

জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির পটভূমি, ঐকমত্য কমিশনের গঠন ও কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি ঐকমত্য হওয়া প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো যুক্ত করা হবে এই সনদে। খসড়া চূড়ান্ত করে তাতে রাজনৈতিক দলের নেতা বা প্রতিনিধিদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সদস্যদের সই নেওয়া হবে।

মঙ্গলবারের ভাষণে জুলাই সনদের বিষয়ে ইউনূস বলেন, “সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। ঐকমত্য কমিশনের পরিচালনায় দেশের সকল রাজনৈতিক দল মিলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে এসেছে।

“জুলাই সনদ একটি ঐতিহাসিক অর্জন। এটা শুধু আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে নয়, বৃহত্তর পরিমণ্ডলের রাজনৈতিক ইতিহাসেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দলিলতো স্মরণীয় হয়ে থাকবেই, এটা রচনার প্রক্রিয়াও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

সরকারের ১৯ মাস বয়সে ভোট

রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পর সময় যত গড়িয়েছে ততই সামনে আসতে থাকে জাতীয় নির্বাচনের দাবি।সরকারপ্রধানের তরফে ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ে আভাস দেওয়া হয়।

সরকারপ্রধান ইউনূসসহ উপদেষ্টাদের নানা বক্তব্যে আশ্বস্ত না হয়ে নির্বাচনের পথনকশা (রোডম্যাপ) চাওয়ার পাশাপাশি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের দাবি জানিয়েছিল বিএনপি।

ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়ার বিএনপির দাবির বিপরীতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবি আসে জামায়াতে ইসলামী ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির তরফে।

ভোটের তারিখ নিয়ে বিরোধের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী অবস্থান প্রকাশ করে আসছিল বিএনপি; মাঠের শক্তিও দেখাচ্ছিল বিভিন্নভাবে।

এর মধ্যে কোরবানি ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সময়সীমা কিছুটা এগিয়ে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের সময় ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা।

জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন দল তার এই বক্তব্যকে স্বাগত জানালেও বিএনপি আগের অবস্থানেই অনড় থাকে। তাদের দাবি ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের।

মাঠে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে এমন প্রেক্ষাপটে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ অবস্থার কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন বিশ্লেষকরা।

এর মধ্যে ১১ জুন লন্ডনে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তাদের বৈঠকের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, “সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রোজা শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে।”

সেই ঘোষণার মধ্যে শর্ত জুড়ে থাকায় নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল।জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই ভোট আয়োজনের ঘোষণা এল।

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেছেন, “আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব।

“অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।”

বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তফসিলের অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছেন।প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণায় ‘দোদুল্যমানতা আর গুজবের অবসান’ হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম।

অর্থনীতি যে দিকে

আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে উদ্যোগ দেওয়ার কথা বলে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া আর্থিক খাতের দুর্নীতি নিয়ে একটি শ্বেতপত্রও প্রকাশ হয়েছে সরকারি উদ্যোগে।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেছেন, “যখন এক বছর আগে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ বছরব্যাপী একটানা ধ্বংসযজ্ঞ এবং লুটপাটে বিধ্বস্ত এক অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন কারোরই মনে হচ্ছিল না এই বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে আবার সহজে চালু করা যাবে।

“মাত্র এক বছরের মধ্যে আমরা এতদূর রাস্তা অতিক্রম করতে পারব যা চিন্তাই করা যায়নি। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবার পালা।”

অর্থনীতি ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ এই তথ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসা, রপ্তানি বাজারে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, ৪০০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, নতুন করে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পারা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

তবে দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতির সূচক বলছে, ডলারের উচ্চমূল্যের জন্য রেমিটেন্স প্রবাহ তার অন্যতম। এর ফলে রিজার্ভ, দেশের আমদানি ও রপ্তানির ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে ইতিবাচকতা দেখা গেছে। এর বাইরে রপ্তানিতে সুখবর মিললেও শঙ্কা কাটেনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূরক শুল্কের কারণে। অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ককে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে সরকার।

তবে সরকারের পরিসংখ্যান বলছে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতির জেরে বিদায়ী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে দুই দশকের সবচেয়ে কম।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে সংশোধিত এডিপির মোট বরাদ্দের ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির অর্থ ব্যয়ের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

রাজস্ব আদায়ে দেখা গেছে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ৩০ জুন পর্যন্ত আদায় হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পরের কয়েক মাস সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৯ ও ১০ শতাংশের মধ্যেই ওঠানামা করছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরকার মূল্যস্ফীতি কমার তথ্য দিচ্ছে।

অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে আসার তথ্য দিয়েছিল সরকার, জুলাইয়ে তা সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে।

কিন্তু সাধারণ মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল তার চেয়ে কম, ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। কিন্তু মজুরি বৃদ্ধির হার আগের মাসের চেয়ে খুব সামান্যই বেড়ে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জুন মাসে সাধারণ মজুরি হার ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ ছিল।

মূল্যস্ফীতির চাপ পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। অগাস্টের প্রথম দিন শুক্রবার সব ধরনের সবজির দাম দাম আগের সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়ার তথ্য দিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর মুরগির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে বাজাগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়েছে।বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা, নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা ও ব্রি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে মাছের দামও বাড়তে দেখা যায়। ওই মাসের অধিকাংশ সময় খামারের ডিম প্রকারভেদে প্রতি ডজন ১১০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হলেও অগাস্টে তা ঠেকেছে ১৪০ টাকায়।অর্থাৎ পণ্যের দাম স্থির থাকছে না। কোনো পণ্যের দাম কমে তো বেড়ে যাচ্ছে অন্য এক বা একাধিক পণ্যের।

বাংলাদেশ ব্যাংক চায়, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে। ২০২৫-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে সাড়ে ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা মাথায় রেখে নতুন অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য আগের মতই আঁটসাঁট মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তাতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরো কমিয়ে আনা হয়েছে।

২০২৫ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের এ মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার ১০ শতাংশই থাকছে। মূল্যস্ফীতি যতদিন ৭ শতাংশের নিচে না নামবে, ততদিন নীতি সুদহার কমবে না বলে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন।

নীতি সুদহার বাড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর তহবিল পাওয়ার খরচ আরও বাড়ে। তাতে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুদহার বেড়ে যায়।নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নামার তথ্য এসেছে গত অর্থবছরের শেষ মাস তথা জুন মাসে। সে সময় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গত ২২ বছরের যে তথ্য রয়েছে, এ প্রবৃদ্ধি তার মধ্যে সর্বনিম্ন। এতে দেশে বিনিয়োগ খরার তথ্য স্পষ্ট হয়।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে একবার প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমেছিল; অথচ করোনাকালেও বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশের ওপরে ছিল।

বিদেশি অর্থছাড়ের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে নিম্নমুখী ধারা। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সাহায্য পাওয়ার মৌখিক আশ্বাস মিললেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরজুড়ে ধীরগতি ও ব্যয় সাশ্রয়ী নীতির প্রভাব পড়েছে বিদেশি অর্থায়ন ছাড়ের ক্ষেত্রে।

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মে সময় শেষে দেখা যায়, এ সময়ে বিদেশি অর্থছাড় কমেছে আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ। অপরদিকে সুদ ও আসল পরিশোধ বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

পাশাপাশি ওই অর্থবছরের ১১ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতিতেও ভাটা দেখা গেছে। এ সময়ে প্রতিশ্রুতি মিলেছে ৫৪৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৯২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

মঙ্গলবারের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই বছরের প্রথম তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটা দ্বিগুণের বেশি। আর অক্টোবর থেকে হিসাব করলে ছয় মাসে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত সরকারের আমলের শেষ ছয় মাসের তুলনায় দ্বিগুণ।”

বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে হংকংভিত্তিক শিল্প গোষ্ঠী হানডা বাংলাদেশের প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

সরকারের এসব তথ্যের বিপরীতে অর্থনীতির বিশ্লেষক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলছেন, স্থিতিশীল রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রবাহে ভর করে অন্তর্বর্তী সরকার ভালো অবস্থানে থাকলেও প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের আশানুরূপ ফল দেখা যায়নি।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, “বড় উদ্বেগটা হচ্ছে যে, আমাদের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের আশা খুবই কম, বিশেষ করে বেসরকারি খাতে। এবং আমরা যদি ওই সংক্রান্ত নির্দেশকগুলো দেখি, মূলধনী আমদানি, সঙ্গে ব্যাংক খাত থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ইতিহাসে সর্বনিম্ন।”

অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, প্রবৃদ্ধি যদি না বাড়ে, বিনিয়োগ যদি না হয় তাহলেতো চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে না। যে বিষয়টি গতবছরের আন্দোলনের মূলকেন্দ্রে ছিল।কিন্তু প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকারে ছিল না বলে মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান।

পালাবদলের এই সময়ে সংস্কার কাজ করার সুযোগ থাকলেও সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতির চেয়ে নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতি, রাজনীতির যে বিতর্ক, নানা ধরনের ঝুঁকি এগুলো নিয়েই তারা বেশি ব্যস্ত হয়ে যাবেন।

“সুতরাং অর্থনীতির এই জায়গাগুলো দেখা যাবে তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে আর নেই।”

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আর্থিক খাতের অবস্থান নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটি এবং টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে সুপারিশ নিলেও সেগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ না থাকার কথা বলছেন অধ্যাপক সেলিম রায়হান।

ওই দুই কমিটিতে সদস্য হিসাবে থাকা এই বিশ্লেষক বলেন, “ব্যাংকিং খাত এবং কর ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে সংস্কারের কথা শুনছি, সেটাতে খুব সমন্বিত তা বলা যায় না। অনেক অংশীজন জানেও না যে, সংস্কার কি হচ্ছে না হচ্ছে।”বাজেটে এডিপি বরাদ্দ কমানো হলেও সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সব পর্যায়ের কর্মচারীদের প্রণোদনা বৃদ্ধি করেছে সরকার।

এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি কতটা?

অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই সারা দেশে থানাগুলো আক্রান্ত হয়। হামলার মুখে পড়ে পুলিশের সদস্যরা থানা ছাড়েন। ওই সময়ে ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহতের তথ্য প্রকাশ করেছে পুলিশ সদরদপ্তর।সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তারা পালিয়ে যান।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহ পর কাজে যোগ দিতে শুরু করলেও গণহারে বদলি, জুলাই অভ্যুত্থানে বলপ্রয়োগের অভিযোগে বিচার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হামলা-হত্যার শিকার হওয়ার প্রেক্ষাপটে পুলিশকে কাজে সক্রিয় করতে হিমশিম খেতে হয় সরকারকে।সে সময় পুলিশের নিম্নস্তরের সদস্যদের মধ্য থেকে সংস্কারের দাবি উঠেছিল জোরেসোরেই।

পুলিশের ভেঙে পড়া মনোবল চাঙ্গা করতে ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ, বদল এসেছে পুলিশের লোগোতে। পরিবর্তন আসছে পোশাকেও। তাতেও যে পুলিশের মনোবল না ফেরার কথাই বলছেন পুলিশ সদস্যরা।

এর মধ্যে কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামায় সরকার; কয়েক দফা মেয়াদ বেড়ে তারা এখনও মাঠে আছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে ‘মব’ সহিংসতা আতঙ্ক ছড়ায়। অনেক সময় ‘মবের’ দাবির কাছে নতিস্বীকার করতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও দখলদারি চলতে থাকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে; ডাকাত আতঙ্কে রাতের ঢাকায় পাহারাও বসাতেও দেখা গেছে মানুষকে।

এর মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের হাতে পুলিশ সদস্য হত্যার বিচার নিয়েও বাহিনীতে এখনও অসন্তোষ থাকার কথা বলছেন কর্মকর্তারা।জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসেও পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে পুলিশের মনোবল যে এখনো ফেরেনি তা মানছেন তিনি।

“প্রধান চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে, এরকম একটা ট্রমাটিক এক্সপেরিয়েন্সের পরে এই আমার ফোর্সটাকে গুছাইয়া তাদেরকে সেন্ট পার্সেন্ট ইফেক্টিভ করা, এই জায়গাটায় কিন্তু আমি এখনও সন্তুষ্ট না আপনারা- যাই বলেন। আমি এখনও এই প্রক্রিয়ায় আছি।”

এর মধ্যেই পুলিশ সংস্কার কমিশনের স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের যে সুপারিশ, তাতে একমত পোষণ করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।কিন্তু সরকারের এক বছরে পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে, নানা ঘটনাপ্রবাহে সেই প্রশ্ন উঠছে।

অভ্যুত্থানের এক বছরে রাজনীতিতে বিরোধী মত ও পথ দমনে ‘মব’ সহিংসতা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার নজিরবিহীন কাণ্ডও দেখেছে মানুষ। এ ঘটনায় সরকারকে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

সম্প্রতি রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা করে ‘জোটবদ্ধ উচ্ছৃঙ্খল জনতা’।

থানায় গিয়ে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে আনা বা থানায় ধরে নিতে পুলিশকে বাধ্য করা হয়েছে। নৈতিক ‘পুলিশিং’ করতেও জায়গায় জায়গায় দেখা গেছে। মেয়েদের ফুটবল খেলা, সাংস্কৃতিক আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া মত ঘটনা ঘটেছে এ সময়ে।

জুলাই মাসে ‘মব’ সহিংতা ও গণপিটুনিতে ১৬ জন হত্যা শিকার হওয়ার তথ্য দিয়েছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।

সে মাসের শুরুর দিকে কুমিল্লায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে এক নারী ও তার দুই ছেলে-মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।জুন মাসের যে প্রতিবেদন এমএসএফ দিয়েছে, সেখানে এমন ঘটনায় ১০ জন নিহত হওয়ার তথ্য ছিল।

এছাড়া জুলাই মাসে রাজধানীর মিটফোর্ডে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে মাথা থেঁতলে হত্যা করার ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে।

এমএসএফের জুলাই মাসের প্রতিবেদন বলছে, এ সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪২টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিএনপির অন্তঃদ্বন্দ্বে ২৭টি ঘটনা রয়েছে।এর মধ্যে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অনুসারী ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের একটি ঘটনাও রয়েছে।

সংস্থাটি জুলাই মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় নয়জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে চারজন বিএনপির।আর পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে গোপালগঞ্জের সংঘাতে। জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় এসে গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে হামলা-সংঘর্ষের সময় গুলিতে প্রাণ হারায় তারা।

এই হামলা ও সংঘাতের জন্য কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে দায়ী করা হয়।এ ঘটনায় ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হয়েছে বলে মনে করছে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

বিএনপির চারজনের মধ্যে তিনজনই দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আর একজন জামায়াতের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন।এমএসএফের তথ্য অনযায়ী, জুন ও তার আগের মাস মে’তে রাজনৈতিক সহিংসতায় আটজন করে নিহত হয়েছিলেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র দৈনিক পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য ধরে জানুয়ারিতে থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে সারা দেশে ‘মব’ ও গণপিটুনিতে ৮৯ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। আর রাজনৈতিক সহিংসতায় ৬৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি।একই সময়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৪১টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ১১১টি।

ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন, পাকিস্তানের কাছাকাছি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছরে রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে গেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করার অংশ হিসাবে ঢাকায় স্থাপিত হয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়।

তবে কূটনীতির ক্ষেত্রে বড় সাফল্যও দেখা যায়নি। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ দেখা গেলেও, ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন রয়ে গেছে। থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক হলেও সম্পর্কের উন্নতি হয়নি, বরং দিল্লির দিক থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার কথা বলা হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো চুক্তি হয়নি। সার্ক পুনরুজ্জীবিত করাও অগ্রগতিও বলার মত নয়, আসিয়ানের সদস্য হওয়ার আশাও পূরণ হয়নি সরকারের।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষি করে সম্পূরক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনতে পারাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়’ হিসেবে দেখছে সরকার।

ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের এই সম্পর্ক অবধারিত ছিল কি-না, এমন প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “পাকিস্তানের সাথে অতোটা অবধারিত ছিল না। কিন্তু ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার একটা বড় বিষয় ছিল যে, জনগণ বড় আকারেই সমালোচনা করছিল, ভারত যেহেতু একটা দল বা সরকারি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছিল; জনগণের সাথে রাখেনি।

“ওই কারণে বড় একটা সমালোচনা ছিল, সেটা বাম, ডান, মধ্যপন্থি-সব মিলিয়ে একটা সমালোচনা ভারতের দিকে ছিল। সেটার কারণেই আমার মনে হয় সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, “পাকিস্তানের বিষয়টার অত গুরুত্ব ছিল না। কারণ মনে রাখতে হবে, যে কোনো সম্পর্কের সাথে অর্থনীতির একটা সম্পর্ক থাকে। তো, আমাদের সাথে পাকিস্তানের বড় ধরনের কোনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেই। যার জন্য সেটা আমি মনে করি না যে বড় বিষয় ছিল।”

তিনি বলেন, এই সরকার বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে নিয়ে গেছে। শুরুতে ভাবা হয়েছিল অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পরিচিতির কারণে বড় আকারে বিনিয়োগ আসবে, সে রকমটা দেখা যায়নি।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম