মহেশখালীকে শিল্প ও বাণিজ্যিক অঞ্চলে রূপান্তরের লক্ষ্যে সরকারের প্রণীত “মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (মিডা)” সংক্রান্ত অধ্যাদেশকে স্থানীয় জনগণ চরমভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই অধ্যাদেশকে মহেশখালীর সচেতন নাগরিকরা স্থানীয় সমাজ, পরিবেশ, জীবন-জীবিকা ও প্রজন্মান্তরের অস্তিত্বের উপর সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছেন।
মহেশখালীর তরুণদের উদ্যোগে আগামী সোমবার, ২৮ জুলাই সকাল ১০টায় এক গণপ্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। সমাবেশটি মহেশখালীবাসীর অস্তিত্ব রক্ষায় একটি পদক্ষেপ হিসেবে অনুষ্ঠিত হবে।
মহেশখালী রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল মান্নান রানা বলেন, “মহেশখালী শুধু একটি দ্বীপ নয়—এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চল। কৃষি, মৎস্য, লবণ ও পানচাষের উপর নির্ভর করে এখানকার প্রায় ৫ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা। সরকারের মিডা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই ঐতিহ্যবাহী ও প্রাকৃতিক জীবনব্যবস্থার উপর এক ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।”
আরেক সংগঠক রুহুল আমিন বলেন,
“মিডা প্রকল্পের বাস্তবায়ন মানে মহেশখালীতে দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের দখলদারিত্বের সুযোগ সৃষ্টি করা। এতে বাস্তুচ্যুত হবে হাজারো পরিবার, হারাবে নিজেদের ভূমি ও পরিচয়। উন্নয়নের নামে উপকৃত হবে কেবল কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও কর্পোরেট গোষ্ঠী—না কৃষক, না জেলে, না সাধারণ মানুষ। এই শোষণের রূপ অতীতেও আমরা ব্রিটিশদের সময় দেখেছি।”
আরেক সংগঠক আবদু রশিদ মানিক, মহেশখালী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নামে মহেশখালীর মানুষকে ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মহেশখালীর বাপ-দাদার কবরস্থান সহ সবগুলো সম্পত্তি মিডা প্রকল্পের নামে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর, এসপিএম, এলএনজি ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের কারণে মহেশখালীর প্রাণ-প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত। এখন মিডার নামে মহেশখালীকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করছে সরকার। আমরা এটা বাতিলের দাবিতে সোমবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।
আরেক সংগঠক আরিফ উল্লাহ বলেন,
“মহেশখালীর অস্তিত্ব, পরিবেশ এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল করা এখন সময়ের দাবি। তাই আসন্ন গণপ্রতিবাদ সমাবেশে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই।”
মহেশখালীবাসীর পক্ষ থেকে এই আন্দোলন কেবল একটি উন্নয়ন প্রকল্প বিরোধিতা নয়—এটি এক জীবন্ত প্রতিবাদ, এক অস্তিত্ব রক্ষার ডাক।