সাইফুল আফ্রিদি
অবশেষে বৃষ্টি এলো, ভিজিয়ে গেল সমুদ্র শহর। এপ্রিল জুড়ে তীব্র গরম দিয়ে চরম চোখ রাঙিয়ে গেল সূর্য। অতিষ্ঠ গরমে সারাদেশে হিটস্ট্রোকে মানুষের মৃত্যু হলো। মাঠ ফেটে চৌচির হলো। শ্রমজীবী মানুষের কষ্টকায় দিন কাটলো। খাবার পানির স্তর নিচে নেমে গেল। উপকূলের মানুষের সুপেয় পানির অভাব দেখা দিলো। জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। এপ্রিল মাসজুড়ে সূর্যের চোখ রাঙানো এমন শাসনে তাপপ্রবাহে বাংলাদেশ মরুর দেশকেও হার মানিয়ে গেল। হাসফাঁস হয়ে উঠল জনজীবন। এমন সময়ে এক পশলা বৃষ্টি পেতে মানুষ বৃষ্টির জন্য ইশতিশকা নামাজ পড়ল, অনেকেই বৃষ্টি আসার জন্য চিরাচরিত বিশ্বাস থেকে ব্যাঙের বিয়ে দিলো। তবুও যেন এপ্রিলে বৃষ্টির দেখা মিলছিলো না। এরপরই মে এলো এক পশলা বৃষ্টির সুসংবাদ নিয়ে।
পহেলা মে রাত থেকেই সমুদ শহরে একটু একটু করে বৃষ্টি তার ছোঁয়া দিলো, গতকাল সকাল আর রাত দুইটায় কয়েক সেকেন্ডের বৃষ্টি এলো, শহরের পিচঢালা রাস্তাগুলোকে ভিজিয়ে দিলো। তবে আকাঙ্খিত বৃষ্টিকে ছুঁতে পেলো না কেউই। পরদিন ২ মে সকাল ১০ টায় আবার এলো বৃষ্টি। ভিজিয়ে গেল, স্বস্তি পেল মানুষ। ঘন বর্ষে যেন বর্ষা নামলো। নীল আকাশ কালোমেঘে ঢেকে গেল। চারদিকে নেমেছে অন্ধকার। এ যেন বর্ষার নীল আকাশ কালো মেঘের ঘনঘটা। আবহাওয়া অফিস সমুদ্র শহরে ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে বলে জানিয়েছে।
বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে নেটিজেনরা আনন্দে মেতেছে। ছবি তুলেছে, কেউ ভিডিও করে বৃষ্টির গান গেয়ে পোস্ট করেছে। শহরের সাধারণ রিকশা চালকরাও এক পশলা বৃষ্টিতে খুশি হয়েছে। আবদুল করিম নামক এক রিকশাওয়ালা বলেন, গরমে প্যাডেল ঘুরে না, সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। বৃষ্টি একটু স্বস্তি দিলো। আরও কয়েকদিন বৃষ্টি হলে ভালো লাগবে। ফেসবুকে একজন বৃষ্টির ভিডিও আপলোড করে লিখেছেন, অবশেষে তিনি এলেন, সবাইকে ভিজিয়ে এক মুঠো স্বস্তি দিলেন।
তবে সবার কাছে বৃষ্টি সুখের হয় না, কারো কারো কাছে সুখ ধরা দেয় শোক হয়ে। ঠিক এমনই এক পশলা বৃষ্টি শোক হয়ে ধরা দিয়েছিলো পেকুয়ার দুইটি পরিবারে। সকালেই বজ্রবৃষ্টি কেড়ে নিলো পেকুয়ার দুই লবণ চাষীর জীবন। বৃষ্টি আসার আগ মুহুর্তে পেকুয়ায় লবণ মাঠ গোছাতে গিয়ে আরাফাত ও দিদারুল ইসলাম নামক দুই লবণ চাষি বজ্রপাতের আঘাতে মারা যান।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, বৃষ্টি আগামীকালও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে তাপমাত্রা কমে যাবে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে গতকাল বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন সকাল ৯টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৭৭ শতাংশ। আর বৃষ্টি চলাকালীন দুপুর ১২টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ।