সাগরের ঢেউয়ে চেপে নীল জল দিগন্ত ছোঁবেন নাকি পাহাড়ের সবুজ মেখে হেঁটে যাবেন মেরিন ড্রাইভের পিচঢালা রাস্তা ধরে? আপনাকে মুগ্ধ করার জন্য প্রকৃতির এমন সব আয়োজনই আছে কক্সবাজার ঘিরে। কিন্তু তারপরও কেনো দেশের এই সর্ববৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র বিমূখ বিদেশি পর্যটকরা?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নেপাল থেকে আসা কিছু পর্যটক খুব আক্ষেপ করে বলছিলেন- কক্সবাজারে তারা টাকা খরচ করার কোনো জায়গায় পাননি। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামতেই বিনোদনহীন সময় পার করতে গিয়ে বিরক্ত হয়ে পড়েন তারা।
সারাবছরই দেশী পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও বিদেশী পর্যটকের দেখায় পাওয়া যায়না কক্সবাজারে। এমনকি ঠিক কি পরিমাণ বিদেশী পর্যটক এখানে আসেন, তার কোনো হিসেব নেই প্রশাসনের কাছে। খোঁজ নিয়ে এধরণের কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি সরকারি সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরে।
কক্সবাজারের তারকামানের হোটেল দি কক্স টুডের কর্মকর্তা আবু তালেব জানান, গত একবছরে তাদের হিসেবের খাতায় বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা একেবারেই শূণ্যের কোঠায়।
আবু তালেব বলেন, দিনের বেলায় মানুষ সমুদ্রে থাকেন কিন্তু রাতের বেলা বিনোদনের বড়ই অভাব কক্সবাজারে। যার ফলে এখানে আসতে চায়না বিদেশীরা।
পর্যটন উদ্যোক্তারা দুষলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কোনো পদক্ষেপ না থাকাকে। অথচ পর্যটন খাত থেকেই আয় করা যেতো বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন, কক্সবাজারের সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, বিদেশী পর্যটকদের যদি আকৃষ্ট করা যেতো আমাদের রেভিনিউ বেড়ে যেতো। বিদেশী পর্যটক আনা না গেলে পর্যটন শিল্প কোনোভাবেই আগাবে না।
এমনকি দেশী পর্যটকরাও মনে করছেন শুধুমাত্র দিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অবলোকন ছাড়া আর কোনো বিনোদনের ব্যবস্থায় নেই কক্সবাজারে। তাই এখানে দরকার আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। ঢাকার ব্যবসায়ী হামিদ হোসেন এসেছেন দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে। তিনি অনেকটা কটাক্ষের সুরেই বলেন, কক্সবাজারে কেউ মিনারেল ওয়াটার খেতে আসবেনা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদেশী পর্যটক টানার জন্য দরকার দেশের বাইরে ব্যপক প্রচার প্রচারণা। যা চোখেই পড়েনা। তাই যথেষ্ট সদিচ্ছার অভাবে মুখথুবড়ে পড়ছে এমন অপার সম্ভাবনা। কক্সবাজার সিটি কলেজের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক মঈনুল হাসান পলাশ মনে করেন, বিদেশী পর্যটক আনতে গেলে যে উদ্যোগ এবং আয়োজন দরকার তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
এমনকি বিদেশী পর্যটক টানার ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে কতোটুকু আন্তরিকতা আছে তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন ট্যুরিজম বিভাগের এই শিক্ষক।
এছাড়াও সৈকতজুড়ে নানা অনিয়ম অব্যবস্থ্যাপনা যেনো রুটিনে পরিনত হয়েছে। ময়লা আবর্জনার পাশাপাশি বালিয়াড়ি ব্যবহার করেই গড়ে উঠেছে বিশাল ব্যবসায়ীক সিন্ডিকেট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক কারনে কূটনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পর্যটন গন্তব্য। কিন্তু এতো অপার সম্ভাবনা কেনো কাজে আসছেনা সেই প্রশ্ন নিয়েই নিতে হবে আগামীর পদক্ষেপ।