ঢাকা ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
উখিয়া হাসপাতালের ২ টন ময়লা অপসারণ করলো বিডি ক্লিন টিম মাতারবাড়িতে শ্রমিক দলের সভাপতি মামুনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন মধ্যরাতে ইডেন গার্ডেনের ‘ছাদ থেকে পড়ে’ যুবকের মৃত্যু! বাঁকখালী নদীর তীরে পুনঃদখল উচ্ছেদে প্রশাসনের ফের অভিযান টেকনাফে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ যুবকের লাশ নাফ নদীতে ২০২৬ বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বল ‘ট্রায়োন্ডা’ উন্মোচন ৩৯ জন নারী শিশু আটকে ছিলো পাহাড়ে! রাজা কংসনারায়ণের দূর্গা পূজা ও সমাজের ঐক্য ডিসেম্বরে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে দেশে ফিরছেন সেফুদা! সু’মু’দ ফ্লো’টি’লা’য় পৌঁছে গেলো টিটিএনের সংবাদ, শহীদুল আলমের ফেসবুক পোস্ট.. জালিয়াপালংয়ে জেলা আমীর আনোয়ারী-“জামায়াতে ইসলামী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ” বিসর্জনের সুরে ‘ফিলিস্তিন মুক্তির’ প্রার্থনা টেকনাফে বিএনপি কার্যালয়ে র‍্যাবের অভিযান: ‘স্বৈরাচারী পদক্ষেপ’ বলছে স্থানীয় নেতারা বৈরি আবহাওয়াতেও কক্সবাজারে হোটেল রুম ‘সোল্ড আউট’ কক্সবাজারে চুরি হওয়া ৬৫ মোবাইলসহ কুমিল্লা থেকে ‘চোর’ গ্রেপ্তার

রাজা কংসনারায়ণের দূর্গা পূজা ও সমাজের ঐক্য

রাজশাহীর তাহেরপুরের প্রাচীন জনপদে শরৎকালের সোনালি আলো মাখা এক দুপুর। মাঠে বাজল ঢাক, শিউলির গন্ধে ভরে উঠল চারপাশ। ইতিহাসের পাতায় সেদিন লেখা হলো এক নতুন অধ্যায়; বাংলার প্রথম রাজকীয় দুর্গাপূজা। আর সেই আয়োজনের পেছনে ছিলেন জমিদার রাজা কংসনারায়ণ।

তার আগে দুর্গাপূজা ছিল নিভৃত ঘরের আচার, পরিবারের ভক্তির সীমাবদ্ধতা। কিন্তু রাজা কংসনারায়ণ ভেবেছিলেন ভিন্ন কিছু। তিনি চেয়েছিলেন দেবীর পূজা হবে শুধু ভক্তির নয়, হবে এক মহা-সম্মিলন, যেখানে প্রজা আর জমিদার একই উৎসবে মিশে যাবে। ১৫৮০ সালের দিকে তার প্রাসাদের আঙিনায় প্রথম সেই মহোৎসব বসে। ঢাকের শব্দে প্রজাদের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দ, মেলায় জমে ওঠে বেচাকেনা, আর সমাজ পায় এক নতুন ঐক্যের সেতুবন্ধন।

রাজা মনে করতেন, পূজা মানেই শুধু দেবী আরাধনা নয়; এটি মানুষকে কাছাকাছি আনার শক্তি। শরতের পূর্ণিমায় মা দুর্গার আগমন হলো প্রজাদের কাছে আনন্দ, আশ্রয় আর ভরসার প্রতীক। দেবী যেন কেবল দেবী নন, কন্যা, যিনি বছরে একবার বাপের বাড়ি আসেন। আর বিদায়ের দিন বিসর্জনে ভিজে ওঠে চোখ, শেখায় অনিত্যতার পাঠ, তবুও বুক ভরে থাকে আগামী বছরের স্বপ্নে।

আজও বাংলার দুর্গাপূজা সেই উত্তরাধিকার বয়ে চলেছে। শিউলি, কাশফুল, আর ঢাকের তালে যখন মা আসেন, তখনো মনে পড়ে সেই প্রাচীন তাহেরপুর। যেখানে রাজা কংসনারায়ণ প্রথম স্বপ্ন দেখেছিলেন, এক পূজা, যা সমাজকে গাঁথবে ভালোবাসা আর ঐক্যের অটুট সুতায়।

চার শতাব্দীরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। তবু আজও দুর্গাপূজা মানে শুধু ধর্ম নয়, মানে ভালোবাসার উৎসব, সমাজের বন্ধন আর মানুষের অনন্ত স্বপ্ন।

লেখক: শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক , চিন্তক ও গবেষক।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

উখিয়া হাসপাতালের ২ টন ময়লা অপসারণ করলো বিডি ক্লিন টিম

This will close in 6 seconds

রাজা কংসনারায়ণের দূর্গা পূজা ও সমাজের ঐক্য

আপডেট সময় : ০৪:২০:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

রাজশাহীর তাহেরপুরের প্রাচীন জনপদে শরৎকালের সোনালি আলো মাখা এক দুপুর। মাঠে বাজল ঢাক, শিউলির গন্ধে ভরে উঠল চারপাশ। ইতিহাসের পাতায় সেদিন লেখা হলো এক নতুন অধ্যায়; বাংলার প্রথম রাজকীয় দুর্গাপূজা। আর সেই আয়োজনের পেছনে ছিলেন জমিদার রাজা কংসনারায়ণ।

তার আগে দুর্গাপূজা ছিল নিভৃত ঘরের আচার, পরিবারের ভক্তির সীমাবদ্ধতা। কিন্তু রাজা কংসনারায়ণ ভেবেছিলেন ভিন্ন কিছু। তিনি চেয়েছিলেন দেবীর পূজা হবে শুধু ভক্তির নয়, হবে এক মহা-সম্মিলন, যেখানে প্রজা আর জমিদার একই উৎসবে মিশে যাবে। ১৫৮০ সালের দিকে তার প্রাসাদের আঙিনায় প্রথম সেই মহোৎসব বসে। ঢাকের শব্দে প্রজাদের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দ, মেলায় জমে ওঠে বেচাকেনা, আর সমাজ পায় এক নতুন ঐক্যের সেতুবন্ধন।

রাজা মনে করতেন, পূজা মানেই শুধু দেবী আরাধনা নয়; এটি মানুষকে কাছাকাছি আনার শক্তি। শরতের পূর্ণিমায় মা দুর্গার আগমন হলো প্রজাদের কাছে আনন্দ, আশ্রয় আর ভরসার প্রতীক। দেবী যেন কেবল দেবী নন, কন্যা, যিনি বছরে একবার বাপের বাড়ি আসেন। আর বিদায়ের দিন বিসর্জনে ভিজে ওঠে চোখ, শেখায় অনিত্যতার পাঠ, তবুও বুক ভরে থাকে আগামী বছরের স্বপ্নে।

আজও বাংলার দুর্গাপূজা সেই উত্তরাধিকার বয়ে চলেছে। শিউলি, কাশফুল, আর ঢাকের তালে যখন মা আসেন, তখনো মনে পড়ে সেই প্রাচীন তাহেরপুর। যেখানে রাজা কংসনারায়ণ প্রথম স্বপ্ন দেখেছিলেন, এক পূজা, যা সমাজকে গাঁথবে ভালোবাসা আর ঐক্যের অটুট সুতায়।

চার শতাব্দীরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। তবু আজও দুর্গাপূজা মানে শুধু ধর্ম নয়, মানে ভালোবাসার উৎসব, সমাজের বন্ধন আর মানুষের অনন্ত স্বপ্ন।

লেখক: শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক , চিন্তক ও গবেষক।