বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক এ তথ্য জানান।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রিপোর্ট থেকে এটি পরিষ্কার যে আমার অফিস খুঁজে পেয়েছে, সাবেক সরকারের সর্ব্বোচ্চ পর্যায় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল এবং প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন যেমন গুম, নির্বিচারে গ্রেফতার, সহিংস পদ্ধতিতে বিক্ষোভ দমনের সঙ্গে জড়িত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এই মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃত্ব জানতো এবং তাদের সমন্বয় ও নির্দেশেই এটি হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা নির্দিষ্টভাবে বিক্ষোভ দমনের জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে যে, বিক্ষোভকারী ও তাদের সমর্থকদের ওপর মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে।’
গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘঠিত মাবাধিকার লংঘনের তদন্ত করার জন্য ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন কাজ শুরু করে। বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনারের অফিস ১৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত শুরু করে এবং পাঁচ মাস পরে জেনেভা থেকে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
বুধবার জেনেভাতে রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনার ভলকার টুর্ক প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার দফতরের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রোরি মানগোভেন। এছাড়া হাইকমিশনার দফতরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানিও উপস্থিত ছিলেন।
এসময় ভলকার টুর্ক আরও বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা। গত বছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা মুহাম্মদ ইউনূস ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে আমাকে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত দল পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন।’
তিনি বলেন, এটি বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে যে, সাবেক সরকারের কর্মকর্তারা, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং সঙ্গে আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মীরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শতশত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতন। নির্যাতিতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। এই সময়ে যৌন সহিংসতার ঘটনাও হয়েছে বলে জানান তিনি।
গুরুতর অপরাধের মাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৪০০ মারা গেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি এবং এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এরমধ্যে ৭৮ শতাংশ গুলিতে মারা গেছে। তাদের মিলিটারি রাইফেল ও শটগান দিয়ে ছররা গুলি করা হয়েছে। আমরা রিপোর্টে অনুরোধ করেছি, ছররা গুলির শটগান ব্যবহার যেন বন্ধ করা হয়।’