মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য কিছুটা শান্ত থাকায় কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে গোলার বিকট শব্দ আসছে না দুদিন ধরে। ফলে সীমান্তে বসবাসকারীদের মাঝে ‘স্বস্তি’ ফিরেছে। তবে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা মংডু শহর বিদ্রোহী আরাকান আর্মি পুরোপুরি দখলে নেওয়ার পর নিরাপত্তার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ রেখেছে উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিন দেখা গেছে, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের লোকজন সীমান্তে লবণ চাষসহ নাফ নদের তীরে ঠেলা জালে মাছ ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে নাফ নদে আগের মতো দেখা যায়নি জেলেদের নৌকা। এ ছাড়া মঙ্গলবার থেকে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের গোলাবারুদের কোনও বিকট শব্দ শোনেননি সীমান্তের বাসিন্দারা।
নাফের তীরে টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটে ভ্রাম্যমাণ দোকানি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারে গোলাগুলির কারণে নির্ঘুম রাত কেটেছিল। সে দেশের যুদ্ধের কারণে বোমার শব্দে এপারে কেঁপে উঠছিল। এ কারণে আমাদের বাড়িঘরগুলো থর থর করে কাঁপছিল। এতে নারী-শিশুরা খুব ভয়ভীতির মধ্য ছিল। কয়েক মাস ধরে ওপারের যুদ্ধের কারণে আমরা অস্বস্তিতে রয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘দুদিন ধরে পাশের দেশ (রাখাইন) থেকে গোলার বিকট শব্দ আসেনি। যার ফলে রাতে নির্ভয়ে ঘুমাতে পেরেছি। সীমান্তের মানুষের চাওয়া, যাতে পরিস্থিতি এভাবে শান্ত থাকে।’
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘দুদিন ধরে সীমান্তে মিয়ানমারে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। এই মুহূর্তে দ্বীপের ৩০ হাজার মানুষ স্বস্তিতে আছে। কারণ, এর আগে ওপারের গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে ছিলাম আমরা। তাছাড়া দ্বীপে লোকজন এখন শান্তিতে চাষাবাদ কাজে ফিরছে। গোলাগুলি বন্ধ থাকায় রাত নির্ভয়ে কেটেছে। কয়েক মাস ধরেই দ্বীপবাসীর নির্ঘুম রাত কেটেছিল।’
জানতে চাইলে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের বোট মালিক সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, ‘মিয়ানমারের কারণে সাময়িকভাবে আমাদের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সীমান্তে আগের মতো গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন এলাকা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। নিরাপত্তার অভাবে মাছ শিকারে না যাওয়ার জন্য সাময়িকভাবে এই নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সেন্টমার্টিনে পর্যটকের আগমনসহ দ্বীপবাসীর জন্য ইমার্জেন্সি সাপ্লাইয়ে কীভাবে ঝুঁকিহীনভাবে নৌযান চলাচল করতে পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার রয়েছে।’
নাফ নদ সীমান্তের লবণ চাষি জিয়াবুল বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে গোলাগুলির কারণে আমরা মাঠে কাজ করতে পারিনি। এতে আমাদের ব্যাপক লোকসান হয়েছে। তবে দুদিন ধরে গুলির শব্দ পাইনি। এতে আমরা মাঠে নির্ভয়ে কাজ করতে পারছি।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সীমান্তে চরম উত্তেজনায় মাছ ধরার নৌকাগুলোকে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌকা মালিকরা মিয়ানমার সংলগ্ন এলাকায় মাছ শিকারে যাবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ট্রলারগুলো মাছ শিকারে যাবে। আপাতত সীমান্তে গোলার শব্দ বন্ধ থাকলেও কখন আবার শুরু হয় বলা মুশকিল।’
টেকনাফ ২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। অনুপ্রবেশ রোধসহ সীমান্তে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক রয়েছে বিজিবি।’
এদিকে মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধে রবিবার মংডুতে সামরিক জান্তার বর্ডার গার্ড পুলিশ ডিভিশনের (নাখাখা-৫) শেষ পোস্টটিও দখলে নেওয়ার কথা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আরাকান আর্মি। এরপর থেকে নাফের আরাকান জলসীমায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তারা।