রুমমেটকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) স্বতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালাল নির্বাচনের দুই দিন পর জামিন পেলেন।
ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার জামিনের আদেশ দেন বলে প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই জিন্নাত আলী জানান।
জালালের পক্ষে তার আইনজীবী রফিকুল ইসলাম (হিমেল) জামিন চেয়ে শুনানি করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, “এ আসামি সম্পূর্ণ নির্দোষ। কোনো অপরাধ করেননি। শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্য তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে সুর্নিদিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। কথিত ঘটনার সময় আসামি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।”
এ আইনজীবী বলেন, “১৯ সেপ্টেম্বর বিসিএস পরীক্ষা। তিনি একজন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষায় তিনি অংশগ্রহণ করবেন। যে কোনো শর্তে তার জামিনের প্রার্থনা করছি।”
রাষ্ট্রপক্ষে ইসরাত জাহান জামিনের বিরোধিতা করেন৷ শুনানি শেষে আদালত পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড দেখানোর শর্তে আসামির জামিনের আদেশ দেন।
জালালের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম পরে বলেন, “জালালের জামিননামা দাখিল করেছি। তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। আশা করছি, কাল (শুক্রবার) সকালে তিনি কারামুক্ত হবেন।”
টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম বিভাগের ২০১৮-২০১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জালাল হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। ২৬ অগাস্ট মধ্যরাতে তিনি রুমমেট মো. রবিউল হককে মারধর ও ভাঙা টিউব লাইট দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
সেই রাতে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরদিন মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বলা হয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রবিউল রাত ১২টার দিকে নিজের কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে জালাল ঘরে ঢুকে বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালান এবং চেয়ার টানা হেঁচড়া করে ‘বিকট’ শব্দ করতে শুরু করেন।
তাতে রবিউলের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি জালালকে বলেন, “ভাই সকালে আমি লাইব্রেরিতে যাব, আপনি একটু আস্তে শব্দ করেন।”
জালাল তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে রবিউলের সঙ্গে তর্ক শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে রবিউলকে ‘হত্যা করার উদ্দেশ্যে’ কাঠের চেয়ার দিয়ে মাথা লক্ষ্য করে বাড়ি মারেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, রবিউল তার হাত দিয়ে কাঠের চেয়ারের আঘাত প্রতিহত করলেও চেয়ারের কাঠের আঘাত তার কপালে জখম হয়।
পরে জালাল ওই রুমের ভেতর থাকা পুরনো টিউব লাইট দিয়ে রবিউলকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে’ তার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করেন। রবিউল মাথা সরিয়ে নিলেও তার বুকের বাঁ পাশে আঘাত লাগে এবং টিউব লাইট ভেঙে কাটা জখম হয়। জালাল তখন ভাঙা ও ধারালো টিউব লাইট দিয়ে রবিউলকে আঘাত করলে তিনি বাঁ হাত দিয়ে প্রতিহত করেন। তাতে হাতে কাটা জখম হয় বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।
২৭ অগাস্ট জালালকে ওই মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ১ সেপ্টেম্বর তার পক্ষে জামিনের আবেদন করেও পরে প্রত্যাহার করে নেন তার আইনজীবী।
এরপর আবার জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু ২ সেপ্টেম্বর তার আইনজীবী আদালতে না থাকায় বিচারক জামিন নাকচ করে দেন।
এর মধ্যে মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচন হয়। ভিপি পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাতে আট ভোট পান।
সূত্র:বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম