দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির ব্যাপারে বিএনপি যে দাবি জানিয়েছে, তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
এর আগে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের নেতৃত্বে দলটির চার নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার বাসভবন যমুনায় বৈঠক করেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় ঐক্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য, বিশেষ করে যারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা স্ট্যাবিলিটি বিনষ্ট করতে চায়, তাদের প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই কথাগুলো আমরা বলে এসেছি।
এ ছাড়া গত কয়েক দিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে উদ্বেগের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে বলেও জানান দলটির মহাসচিব।
আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমিরও তার একই ধরনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার বিএনপি জাতীয় ঐক্যর কথা বলেছে ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছে, আপনারা সেই বিষয়ে একমত কিনা––এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের কথা অবশ্যই এসেছে। উদ্বেগ নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করেছি। সেই উদ্বেগ ওই অর্থে নয় যে দেশ মনে হয় গোল্লায় গেছে। বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে শান্তিশৃঙ্খলা কারা বিঘ্নিত করছে সেটি চিহ্নিত করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমের মোকাবিলা করতে হবে।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। আগামীতে দেশে কীভাবে শান্তি-শৃঙ্খলার সাথে থেকে একটা কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে আগাতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশ আমাদের সবার, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য কীভাবে করা যায়, প্রশাসনে কীভাবে গতি আনা যায়, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা লাঘব করার জন্য, মানুষের সাধ্যের মধ্যে কীভাবে নিয়ে আসা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনে রমজান মাস আসছে, এটি সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে এসব বিষয় নিয়ে আমরা পরামর্শ করেছি।
জাতীয় ঐক্য নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এগুলোর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় আমরা একমত হয়েছি, দেশের সব মানুষকে নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এর জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন। দল-বর্ণ নির্বিশেষে মতবিরোধ থাকবে, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সবাই যেন একমত থাকতে পারি সেটি আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাই।
নির্বাচন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আজ কোনও আলোচনা হয়নি। কিন্তু আমরা সেটি আগেই বলেছি, নির্দিষ্ট কিছু সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি আগেই জানিয়েছি।
বিভিন্ন মহল থেকে ইসকন নিষিদ্ধের কথা উঠেছে, এই বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী––এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু ইসকন না, যারা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।