ঢাকা ১০:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
৪ পিস ইয়াবাসহ মৎস্যজীবী দলের নেতার ভাই গ্রেফতার দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের আজীবন সদস্য পদ থেকে মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর পদত্যাগ টিটিএন পরিবারের শোক: সাংবাদিক আনসার হোসেনের সহধর্মিণী আর নেই একনজরে চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দোকান মালিক সমিতির সদস্য জিল্লু ও জাহেদের পদ বাতিল ঈদগাঁওতে দেশীয় অস্ত্রসহ সিএনজি চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ অনলাইনে জামিননামা গ্রহণ শুরু হচ্ছে কাল, এক ক্লিকে পৌঁছে যাবে জেলখানায়: আইন উপদেষ্টা মেক্সিকোয় ভারি বৃষ্টি, বন্যায় ৬৪ মৃত্যু; নিখোঁজ ৬৫ হঠাৎ মার্কিন দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার ঈদগাঁওয়ের ইউএনও বিমল চাকমার বিরুদ্ধে মামলা, ২ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ রামুর সেই উত্তম বড়ুয়ার খোঁজ মিলেছে ১১টি সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষে ‘আন্তর্জাতিক’ হলো কক্সবাজার বিমানবন্দর নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্যকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় স্থানান্তর র‍্যালী,মহড়া,আলোচনা সভা:কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

একনজরে চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) তিন যুগ পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে এ ভোটগ্রহণ। নির্বাচন ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।

ভোট প্রদানে দেওয়া হবে পর্যাপ্ত সময়

চাকসু নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলে মোট ৪০টি ভোট দিতে হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি পদে ভোট দিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে। তবে ভোটাররা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আনুমানিক ধরে রেখেছি ১ জন ভোটারের কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে প্রায় ১০ মিনিট লাগবে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনও সময়ের লিমিটেশন নেই। ভোটাররা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন। তাদের যতটুকু সময় লাগবে ততটুকু নিয়েই আশা করি ভোট দেবেন।’

ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা

এ নির্বাচনের ভোট হবে ব্যালট পেপারে। গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে ভোটারদের বৃত্ত পূরণ করে ভোট দিতে হবে। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সংসদের ফল প্রকাশ করা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ থেকে এবং হল সংসদের ফল ঘোষণা করা হবে নিজ নিজ কেন্দ্র থেকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ভোট হবে ব্যালটে। ভোটগ্রহণ শেষে গণনা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে। অ্যানালগ পদ্ধতিতে গণনা করলে অনেক সময় লাগবে। তাই আমরা এ পদ্ধতিতে যাবো না।’

তিনি বলেন, ‘গোপন কক্ষ ছাড়া সব কেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। ব্যালট পেপার ছাপা হবে কমিশনের উপস্থিতিতে, সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখে। নির্বাচনে ব্যালট পেপারে থাকবে ২৪ অঙ্কের একটি নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড। যা ওএমআর মেশিনে শনাক্ত করা যাবে।’

কোন পদে কতজন প্রার্থী

চাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থী হয়েছেন ৯০৮ জন। যার মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬টি পদে লড়বেন ৪১৫ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২২ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক এজিএস পদে ২১ জন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২ জন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক ১৪ জন, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ জন, দফতর সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-দফতর সম্পাদক পদে ১৪ জন, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহ-ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১০ জন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ১১ জন, গবেষণা ও উদ্ভাবনবিষয়ক সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ২০ জন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ১৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক ১৭ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ১৬ জন, যোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদক ১৭ জন, সহ-যোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদক ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ৯ জন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক ২০ জন। এ ছাড়া নির্বাহী সদস্য পদে ৮৫ জন।

অন্যদিকে, ১৪টি হল সংসদে লড়বেন ৪৭৩ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্রদের ৯টি হল ও ১টি হোস্টেল মিলে ৩৫০ জন এবং ছাত্রীদের ৫টি হলে ১২৩ জন। যার মধ্যে ছেলেদের হলগুলোতে রয়েছে- এএফ রহমান হলে ৩৮, আলাওল হলে ৩২, অতীশ দীপংকর হলে ৩৭, শাহ আমানত হলে ৪৩, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে ৪৫, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ৩৭, শহীদ আব্দুর রব হলে ৩১, শাহজালাল হলে ৩৪, সোহরাওয়ার্দী হলে ৫৩। এ ছাড়া শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে ২০ জন।

এ ছাড়া মেয়েদের হলগুলোতে রয়েছে- বিজয় ২৪ হলে ২৮, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে ৩০, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ১৭, প্রীতিলতা হলে ২৬, শামসুন্নাহার হলে ২২।

কোন কেন্দ্রে কত ভোটার

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীশিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে চাকসু ভবনে ১টি অতিরিক্ত কেন্দ্র স্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব কেন্দ্রের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০টি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষে থাকবে পাঁচটি ব্যালট বাক্স এবং পাঁচ জন করে এজেন্ট। একটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৫০০ ভোটার ভোট দিতে পারবেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে ছেলে ভোটার আছেন ১৬ হাজার ১৮৯ ও নারী ভোটার রয়েছেন ১১ হাজার ৩২৯ জন।

যার মধ্যে, প্রকৌশল অনুষদে ভোট দেবেন ৪ হাজার ৩৬ জন। তারা সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থী। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের নতুন ভবন শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনে ভোট দেবেন ৫ হাজার ২৬৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শাহজালাল হলের ২ হাজার ৬৬৬ জন, এ এফ রহমান হলের ১ হাজার ৩০৭ ও আলাওল হলের ১ হাজার ২৯০ জন ভোটার রয়েছেন।

বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন ৪ হাজার ৫৩৮ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শাহ আমানত হলের ২ হাজার ২৪৭ জন, শহীদ আবদুর রব হলের ১ হাজার ৭৭৫ ও মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ৫১৬ জন।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবনে ভোট দেবেন ৬ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী। যার মধ্যে নবাব ফয়জুন্নেছা হলের ১ হাজার ১৭৯ জন, শামসুন নাহার হলের ২ হাজার ২৯১, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলের ২ হাজার ৪৮৭ ও অতীশ দীপংকর হলের ৬৪৯ জন।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন মোট ৭ হাজার ৭৩ শিক্ষার্থী। যার মধ্যে প্রীতিলতা হলের ২ হাজার ৫৫৫ জন, বিজয়–২৪ হলের ২ হাজার ৬০৪, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের ১ হাজার ৭৬০ ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ১৫৪ জন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বুথে সর্বোচ্চ ৫০০ শিক্ষার্থীর ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জন্য ২৬টি ও হল সংসদের জন্য ১৪টিসহ মোট ৪০টি ভোট দিতে পারবেন। আমরা যাচাই করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ করেছি। তবে দুই থেকে তিন মিনিট সময় বেশি লাগলেও সমস্যা হবে না।’

প্রশাসনের প্রস্তুতি

নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেড় হাজারেরও বেশি নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাবাহিনী দায়িত্বে থাকবে। এর মধ্যে র‍্যাবের ৮টি ব্যাটালিয়ন টিম রয়েছে, যারা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করবে। বিভিন্ন স্থানে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত রিজার্ভ টিম মোতায়েনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

র‍্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) সকাল থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত আমরা অবস্থান করবো। প্রয়োজনে অতিরিক্ত টিম যোগ হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে চেষ্টা করছি নির্বাচনটি যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।’

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ নিরাপত্তা টিম কাজ করবে। সেনাবাহিনী থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।

সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

৪ পিস ইয়াবাসহ মৎস্যজীবী দলের নেতার ভাই গ্রেফতার

This will close in 6 seconds

একনজরে চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন

আপডেট সময় : ০৫:২১:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) তিন যুগ পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে এ ভোটগ্রহণ। নির্বাচন ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।

ভোট প্রদানে দেওয়া হবে পর্যাপ্ত সময়

চাকসু নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলে মোট ৪০টি ভোট দিতে হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি পদে ভোট দিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে। তবে ভোটাররা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আনুমানিক ধরে রেখেছি ১ জন ভোটারের কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে প্রায় ১০ মিনিট লাগবে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনও সময়ের লিমিটেশন নেই। ভোটাররা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন। তাদের যতটুকু সময় লাগবে ততটুকু নিয়েই আশা করি ভোট দেবেন।’

ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা

এ নির্বাচনের ভোট হবে ব্যালট পেপারে। গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে ভোটারদের বৃত্ত পূরণ করে ভোট দিতে হবে। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সংসদের ফল প্রকাশ করা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ থেকে এবং হল সংসদের ফল ঘোষণা করা হবে নিজ নিজ কেন্দ্র থেকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ভোট হবে ব্যালটে। ভোটগ্রহণ শেষে গণনা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে। অ্যানালগ পদ্ধতিতে গণনা করলে অনেক সময় লাগবে। তাই আমরা এ পদ্ধতিতে যাবো না।’

তিনি বলেন, ‘গোপন কক্ষ ছাড়া সব কেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। ব্যালট পেপার ছাপা হবে কমিশনের উপস্থিতিতে, সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখে। নির্বাচনে ব্যালট পেপারে থাকবে ২৪ অঙ্কের একটি নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড। যা ওএমআর মেশিনে শনাক্ত করা যাবে।’

কোন পদে কতজন প্রার্থী

চাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থী হয়েছেন ৯০৮ জন। যার মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬টি পদে লড়বেন ৪১৫ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২২ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক এজিএস পদে ২১ জন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২ জন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক ১৪ জন, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ জন, দফতর সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-দফতর সম্পাদক পদে ১৪ জন, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহ-ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১০ জন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ১১ জন, গবেষণা ও উদ্ভাবনবিষয়ক সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ২০ জন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ১৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক ১৭ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ১৬ জন, যোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদক ১৭ জন, সহ-যোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদক ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ৯ জন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক ২০ জন। এ ছাড়া নির্বাহী সদস্য পদে ৮৫ জন।

অন্যদিকে, ১৪টি হল সংসদে লড়বেন ৪৭৩ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্রদের ৯টি হল ও ১টি হোস্টেল মিলে ৩৫০ জন এবং ছাত্রীদের ৫টি হলে ১২৩ জন। যার মধ্যে ছেলেদের হলগুলোতে রয়েছে- এএফ রহমান হলে ৩৮, আলাওল হলে ৩২, অতীশ দীপংকর হলে ৩৭, শাহ আমানত হলে ৪৩, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে ৪৫, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ৩৭, শহীদ আব্দুর রব হলে ৩১, শাহজালাল হলে ৩৪, সোহরাওয়ার্দী হলে ৫৩। এ ছাড়া শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে ২০ জন।

এ ছাড়া মেয়েদের হলগুলোতে রয়েছে- বিজয় ২৪ হলে ২৮, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে ৩০, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ১৭, প্রীতিলতা হলে ২৬, শামসুন্নাহার হলে ২২।

কোন কেন্দ্রে কত ভোটার

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীশিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে চাকসু ভবনে ১টি অতিরিক্ত কেন্দ্র স্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব কেন্দ্রের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০টি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষে থাকবে পাঁচটি ব্যালট বাক্স এবং পাঁচ জন করে এজেন্ট। একটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৫০০ ভোটার ভোট দিতে পারবেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে ছেলে ভোটার আছেন ১৬ হাজার ১৮৯ ও নারী ভোটার রয়েছেন ১১ হাজার ৩২৯ জন।

যার মধ্যে, প্রকৌশল অনুষদে ভোট দেবেন ৪ হাজার ৩৬ জন। তারা সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থী। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের নতুন ভবন শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনে ভোট দেবেন ৫ হাজার ২৬৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শাহজালাল হলের ২ হাজার ৬৬৬ জন, এ এফ রহমান হলের ১ হাজার ৩০৭ ও আলাওল হলের ১ হাজার ২৯০ জন ভোটার রয়েছেন।

বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন ৪ হাজার ৫৩৮ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শাহ আমানত হলের ২ হাজার ২৪৭ জন, শহীদ আবদুর রব হলের ১ হাজার ৭৭৫ ও মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ৫১৬ জন।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবনে ভোট দেবেন ৬ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী। যার মধ্যে নবাব ফয়জুন্নেছা হলের ১ হাজার ১৭৯ জন, শামসুন নাহার হলের ২ হাজার ২৯১, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলের ২ হাজার ৪৮৭ ও অতীশ দীপংকর হলের ৬৪৯ জন।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন মোট ৭ হাজার ৭৩ শিক্ষার্থী। যার মধ্যে প্রীতিলতা হলের ২ হাজার ৫৫৫ জন, বিজয়–২৪ হলের ২ হাজার ৬০৪, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের ১ হাজার ৭৬০ ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ১৫৪ জন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বুথে সর্বোচ্চ ৫০০ শিক্ষার্থীর ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জন্য ২৬টি ও হল সংসদের জন্য ১৪টিসহ মোট ৪০টি ভোট দিতে পারবেন। আমরা যাচাই করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ করেছি। তবে দুই থেকে তিন মিনিট সময় বেশি লাগলেও সমস্যা হবে না।’

প্রশাসনের প্রস্তুতি

নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেড় হাজারেরও বেশি নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাবাহিনী দায়িত্বে থাকবে। এর মধ্যে র‍্যাবের ৮টি ব্যাটালিয়ন টিম রয়েছে, যারা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করবে। বিভিন্ন স্থানে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত রিজার্ভ টিম মোতায়েনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

র‍্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) সকাল থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত আমরা অবস্থান করবো। প্রয়োজনে অতিরিক্ত টিম যোগ হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে চেষ্টা করছি নির্বাচনটি যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।’

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ নিরাপত্তা টিম কাজ করবে। সেনাবাহিনী থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।

সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন