ঢাকা ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
দশদিন পর আবারো ঘুমধুম সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ, কি হচ্ছে ওপারে? টেকনাফে এসে অপহরণের শিকার সেন্টমার্টিনের যুবক: ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি স্বাধীনতাবিরোধী ও সরকারসৃষ্ট দল দুটি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়: হাফিজ উদ্দিন বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমানায় মাসব্যাপী জরিপ করবে নরওয়ে জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দিলে ‘খারাপ নজির’ সৃষ্টি হবে: সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশের মানুষ এখন সেনাসদস্যদের দিকে তাকিয়ে আছে: সেনাপ্রধান যুবকের জরিমানাসহ ৭ বছরের কারাদণ্ড বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশি অংশে জরিপে নামছে নরওয়ের গবেষণা জাহাজ আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন করতে ৪ মিলিয়ন ইউরো দেবে ইইউ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, এরপর আমরা বিদায় নেব : আসিফ নজরুল তিস্তা প্রকল্পে চীনা ঋণ নিতে চায় সরকার, চেয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ছাত্ররাজনীতিতে পরিবর্তন চান শিক্ষার্থীরা ১৮ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন ইনানীতে আত্মপ্রকাশ করলো শফির বিল জেলে কল্যাণ সমিতি

ইজারা না নিয়েও টোল আদায়ে টেকনাফের জামায়াত নেতা

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাট। এখান দিয়ে যাতায়াতকারী জনসাধারণ বা জেলে নৌকা থেকে নিয়মিত টোল আদায় করা হয়। এ জন্য জেটিঘাটের ইজারা নিতে হয় জেলা পরিষদ থেকে। চলতি বছরের ইজারা না হলেও একটি চক্র তিন মাস ধরে টোল আদায় করে টাকা লুটপাট চালাচ্ছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কক্সবাজারের এক জামায়াত নেতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটিঘাটটি ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় নির্মাণ করে। ২০০৬ সালে উদ্বোধনের পর থেকে সেটি জেলা পরিষদ প্রতি বছর (বাংলা সন ধরে) ইজারা দিয়ে আসছে। কিন্তু মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে জেটির চলতি বছর ইজারা না দিয়ে খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ।

এই সুযোগে জেলা পরিষদ কার্যালয়ের পিয়ন মোহাম্মদ শাহ আলমকে ইজারাদার সাজিয়ে একটি চক্র টোল আদায় শুরু করে। সম্প্রতি শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে চার-পাঁচজন ব্যক্তিকে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে টোল আদায় করতে দেখা দেয়। সেই রসিদেও ইজারাদার হিসেবে শাহ আলমের নাম আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো বিষয়টিই লোক দেখানো। ওই ঘাটের কোনো ইজারা দেওয়া হয়নি। কিন্তু কক্সবাজার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন ওই ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইউনুচ ওরফে বাইলার মাধ্যমে সেখান থেকে টোল আদায় শুরু করেন। এপ্রিলের (বৈশাখের শুরু) মাঝামাঝি থেকে এই চক্রটি জেটিতে আসা প্রতিজনের কাছ থেকে ১০-২০ টাকা করে আদায় করছে। এ ছাড়া জেটির অদূরে অবস্থিত জেলেপল্লির জালিয়াপাড়া ঘাট ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়া ঘাট থেকেও প্রতি ড্রাম মাছ থেকে তারা ১০০ টাকা করে আদায় করছে বলে জেলেরা জানিয়েছেন।

একাধিক জেলের ভাষ্য, জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন জেলা পরিষদ থেকে ঘাটটি ইজারা নিয়েছেন জানিয়ে তিনটি ঘাট আলাদাভাবে বিক্রি করে দেন। তারাই এসব ঘাট থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। তিন মাসের মাথায় তারা জানতে পেরেছেন, শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট ইজারা দেয়নি জেলা পরিষদ। কাদের প্রশ্রয়ে এভাবে টাকা আদায় চলছে জানতে চান জেলেরা।

এ বিষয়ে ইউনুচ বাইলা বলেন, ‘আমি কোনো ইজারাদার নই। ফলে কাউকে ইজারা দেওয়ার প্রশ্নও আসে না। আমি এক নেতার অধীনে টোল আদায় করছি। এর বাইরে কোনো কিছুতে জড়িত নই।’

শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গফুর আলম বলেন, ‘শুধু আমার ঘাটেই মাছ ধরার ট্রলার আছে প্রায় ১০০টি। অধিকাংশ ট্রলার মালিকের সঙ্গে এক বছরের জন্য ট্রলারপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে টোল আদায়ে মৌখিকভাবে চুক্তি করেছেন মো. ইউনুছ ওরফে বাইলা। অনেকে টাকা দিয়েছেন, অনেকে দেননি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, সম্প্রতি টোল আদায় নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সেটি সমাধানে ইজারাদার দাবিদার আনোয়ারকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি ইউএনওর নজরে আনেন।

আনোয়ার হোসেন শুরুতে জেলা পরিষদ থেকে জেটিঘাট ইজারা নেওয়া দাবি করলেও পরে সেই বক্তব্য থেকে সরে যান। তিনি দাবি করেন, খাস আদায়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তারা জেটিঘাট বা আশপাশের কোনো ঘাট অন্য কাউকে ইজারা দেননি বা বিক্রি করেনি। তাঁর লোকজনই সেখানে খাস আদায় করছে। পরবর্তীকালে সেই টাকা জেলা পরিষদে জমা দেওয়া হবে।

টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবৈধভাবে কেউ যদি চাঁদা বা খাস আদায় করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, শাহপরীর জেটিঘাট ইজারা হয়নি। তাই খাস আদায় চলছে। তাঁর কার্যালয়ের পিয়ন মোহাম্মদ শাহ আলমকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবে অন্য কারও ইজারা দেওয়া সুযোগ নেই।

সূত্র : সমকাল

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

দশদিন পর আবারো ঘুমধুম সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ, কি হচ্ছে ওপারে?

This will close in 6 seconds

ইজারা না নিয়েও টোল আদায়ে টেকনাফের জামায়াত নেতা

আপডেট সময় : ০৫:৪৩:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাট। এখান দিয়ে যাতায়াতকারী জনসাধারণ বা জেলে নৌকা থেকে নিয়মিত টোল আদায় করা হয়। এ জন্য জেটিঘাটের ইজারা নিতে হয় জেলা পরিষদ থেকে। চলতি বছরের ইজারা না হলেও একটি চক্র তিন মাস ধরে টোল আদায় করে টাকা লুটপাট চালাচ্ছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কক্সবাজারের এক জামায়াত নেতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটিঘাটটি ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় নির্মাণ করে। ২০০৬ সালে উদ্বোধনের পর থেকে সেটি জেলা পরিষদ প্রতি বছর (বাংলা সন ধরে) ইজারা দিয়ে আসছে। কিন্তু মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে জেটির চলতি বছর ইজারা না দিয়ে খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ।

এই সুযোগে জেলা পরিষদ কার্যালয়ের পিয়ন মোহাম্মদ শাহ আলমকে ইজারাদার সাজিয়ে একটি চক্র টোল আদায় শুরু করে। সম্প্রতি শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে চার-পাঁচজন ব্যক্তিকে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে টোল আদায় করতে দেখা দেয়। সেই রসিদেও ইজারাদার হিসেবে শাহ আলমের নাম আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো বিষয়টিই লোক দেখানো। ওই ঘাটের কোনো ইজারা দেওয়া হয়নি। কিন্তু কক্সবাজার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন ওই ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইউনুচ ওরফে বাইলার মাধ্যমে সেখান থেকে টোল আদায় শুরু করেন। এপ্রিলের (বৈশাখের শুরু) মাঝামাঝি থেকে এই চক্রটি জেটিতে আসা প্রতিজনের কাছ থেকে ১০-২০ টাকা করে আদায় করছে। এ ছাড়া জেটির অদূরে অবস্থিত জেলেপল্লির জালিয়াপাড়া ঘাট ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়া ঘাট থেকেও প্রতি ড্রাম মাছ থেকে তারা ১০০ টাকা করে আদায় করছে বলে জেলেরা জানিয়েছেন।

একাধিক জেলের ভাষ্য, জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন জেলা পরিষদ থেকে ঘাটটি ইজারা নিয়েছেন জানিয়ে তিনটি ঘাট আলাদাভাবে বিক্রি করে দেন। তারাই এসব ঘাট থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। তিন মাসের মাথায় তারা জানতে পেরেছেন, শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট ইজারা দেয়নি জেলা পরিষদ। কাদের প্রশ্রয়ে এভাবে টাকা আদায় চলছে জানতে চান জেলেরা।

এ বিষয়ে ইউনুচ বাইলা বলেন, ‘আমি কোনো ইজারাদার নই। ফলে কাউকে ইজারা দেওয়ার প্রশ্নও আসে না। আমি এক নেতার অধীনে টোল আদায় করছি। এর বাইরে কোনো কিছুতে জড়িত নই।’

শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গফুর আলম বলেন, ‘শুধু আমার ঘাটেই মাছ ধরার ট্রলার আছে প্রায় ১০০টি। অধিকাংশ ট্রলার মালিকের সঙ্গে এক বছরের জন্য ট্রলারপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে টোল আদায়ে মৌখিকভাবে চুক্তি করেছেন মো. ইউনুছ ওরফে বাইলা। অনেকে টাকা দিয়েছেন, অনেকে দেননি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, সম্প্রতি টোল আদায় নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সেটি সমাধানে ইজারাদার দাবিদার আনোয়ারকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি ইউএনওর নজরে আনেন।

আনোয়ার হোসেন শুরুতে জেলা পরিষদ থেকে জেটিঘাট ইজারা নেওয়া দাবি করলেও পরে সেই বক্তব্য থেকে সরে যান। তিনি দাবি করেন, খাস আদায়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তারা জেটিঘাট বা আশপাশের কোনো ঘাট অন্য কাউকে ইজারা দেননি বা বিক্রি করেনি। তাঁর লোকজনই সেখানে খাস আদায় করছে। পরবর্তীকালে সেই টাকা জেলা পরিষদে জমা দেওয়া হবে।

টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবৈধভাবে কেউ যদি চাঁদা বা খাস আদায় করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, শাহপরীর জেটিঘাট ইজারা হয়নি। তাই খাস আদায় চলছে। তাঁর কার্যালয়ের পিয়ন মোহাম্মদ শাহ আলমকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবে অন্য কারও ইজারা দেওয়া সুযোগ নেই।

সূত্র : সমকাল