পরিবার পরিজন নিয়ে কক্সবাজারে বেড়তে এসেছিলেন শাহিনুর দম্পতি। ঈদ উদযাপনও করেছে কক্সবাজারে। স্ত্রী দুই সন্তানসহ কলাতলী সৈকতে নেমেছিলেন গোসলে। হঠাৎ কলেজ পড়ুয়া ছোট ছেলে সিফাত স্রোতের টানে ভেসে গেলে তাকে উদ্ধারে ছুটে যান বাবা শাহিনুর রহমান। উত্তাল সমুদ্রের আছড়ে পড়ে ভয়ংকর ঢেউয়ের স্রোত কেড়ে নেয় পিতা পুত্রের জীবন। সন্তান এবং স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী।
ঈদ আনন্দ নিমিষেই বিষাদগ্রস্ত হয়ে যায় রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হিসাব রক্ষক শাহীনুরের পরিবারের।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের গোসলে নজরদারি রাখা সী সেইফ লাইফ গার্ডের দেয়া তথ্য মতে, গেল ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত সমুদ্র গোসলে নেমে মারা গেছে ৬০জন। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৭৩ জনকে।
গেলো রবি ও সোমবার ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে প্রাণ যায় তিন পর্যটক। এমন ঘটনার পর অবশেষে নড়ে চড়ে বসে জেলা প্রশাসন। তবে তারা কিছুটা দুষলেন পর্যটকদেরও।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ শাহেদুল আলম বলেন, প্রশাসনের যেমন সতর্ক থাকা জরুরি তেমনি পর্যটকদেরও সতর্কতা অবলম্বন করে সমুদ্র ভ্রমণ সবচেয়ে জরুরি।
বীচ কর্মীদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পর্যটকরা সমুদ্রে নেমে পড়েন জানিয়ে প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের মাইকিংকে পর্যটকরা পাত্তা দেয় না।তাদেরকে সতর্ক করলেও তারা দূরে যেতে থাকে।পর্যটকদের নিজেদের স্বার্থে হলেও আমাদের কথা শোনা উচিত।”
“পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবার আগে তাদের নিজেদের সতর্ক হতে হবে”- বলেন মি. আলম।
সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন লাইফগার্ড সদস্যরা। লক্ষাধিক পর্যটকদের সামাল দেয়া অনেকটা দুস্কর হলেও কয়েকটি পয়েন্ট ভাগাভাগি করে কাজ করছেন তারা। জানালেন সৈকতে গোসলের নিয়ম এবং নির্দেশনা।
তবে প্রশাসনের মতো লাইফগার্ড কর্মীরাও দুষলেন পর্যটকদের। পরিপূর্ণ সতর্কতার অভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে জানিয়ে সী সেইফ লাইফ গার্ডের ম্যানেজার মো: ওসমান গনি বলেন, পর্যটকরা আমাদের দেওয়া নির্দেশনা মানতে চায় না। মাঝে মাঝে গোসলে নামতে মানা করলে তারা উল্টো রাগ হয়ে যায়।তাই বিপদ আছে জেনেও তাদেরকে সতর্ক করতে চাইলে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এছাড়া সমুদ্রে সৃষ্টি হওয়া গুপ্তখালের ব্যাপারে তিনি বলেন, নিম্নচাপের সময়ে হওয়া ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের পানি এসে সমুদ্রে ভাঙ্গনের সৃষ্টি করেছে। যার ফলে সমুদ্রের কিছু কিছু জায়গায় গর্তের মতো হয়ে গুপ্ত খাল তৈরি হয়েছে। এসব গুপ্ত খালের ব্যাপারে পর্যটকদের অবগত করতে চাইলেও তারা না শুনে এড়িয়ে যান।
এছাড়া লাল হলুদ পতাকা টাঙ্গানো অবস্থায় সমুদ্রে গোসল তেমন একটা ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও লাবনী ও কলাতলী সৈকতের কিছু কিছু জায়গা গোসলের জন্য অনিরাপদ, জানান এই লাইফগার্ড কর্মী।
সমুদ্র সৈকতে আশা কিছু কিছু পর্যটকও মানছেন তাদের দোষ। নোয়াখালী থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, “আমরা প্রথমবারের মতো এই সমুদ্র সৈকতে এসে অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ি। যার ফলে এই সমুদ্রের যে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে সেগুলো আমাদের চোখে পড়ে না।”
আরেক পর্যটক দম্পতি বলেন, “এই বিশাল সমুদ্র দেখে আমরা সব সময় ছুটে যাই সমুদ্রস্নানে। তবে আনন্দ করার পাশাপাশি আমাদের যথাযথ সতর্ক থাকতে হবে।”