ঢাকা ০৯:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফে মানব পাচারে ‘জিরো টলারেন্স’ বলছে বিজিবি পালংখালী জামায়াতের কর্মী সমাবেশে জেলা আমীর আনোয়ারী-ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দাঁড়ি পাল্লার বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন টেকনাফে ১৪ মামলার পলাতক আসামী মুন্না র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার বিএফইউজে’র নির্বাহী পরিষদের সভায় সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার’র কমিটি অনুমোদন কক্সবাজার সৈকতে ‘লোক সমুদ্র’ ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ বাস্তবায়নে কক্সবাজারে ৫টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন নৌবাহিনীর নারী নেতৃত্বকে জাতির গৌরব বললেন লুৎফুর রহমান কাজল কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সভায় বক্তারা: ‎কুতুবদিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটনের বিকল্প নেই ‎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আস্থা গড়ার বদলে চাপ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ চৌফলদন্ডীর আমজাদ হত্যার আসামী ছৈয়দ নুর গ্রেফতার সমুদ্রবন্দর থেকে নামল সতর্ক সংকেত রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘের দ্বৈত ন্যারেটিভ: কেন এই দ্বন্দ্ব? উখিয়া হাসপাতালের ২ টন ময়লা অপসারণ করলো বিডি ক্লিন টিম মাতারবাড়িতে শ্রমিক দলের সভাপতি মামুনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন মধ্যরাতে ইডেন গার্ডেনের ‘ছাদ থেকে পড়ে’ যুবকের মৃত্যু!
কমে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা

বাড়বে অপরাধ

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গারা তাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তারা বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এরমধ্য দিয়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ যেমন সীমিত হয়ে যাবে, তেমন ভাবে ক্যাম্পের ভেতর ও আশপাশের এলাকায় অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। এতে করে স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দ্বন্ধও বাড়তে পারে। যা মারাত্মক প্রভাব পরবে আশ্রয় জীবনে।

সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (WFP) বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেক কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে প্রতি ব্যক্তিকে মাসে ৬ ডলার পরিমাণ রেশন দেওয়া হবে।

বর্তমানে রোহিঙ্গারা মাথাপিছু ১২.৫০ ডলার খাদ্য সহায়তা পান, কিন্তু তহবিলের অভাবে এই পরিমাণ ৬ ডলারে নামিয়ে আনা হবে আগামী মাস থেকে।

বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে বলছেন, এই সিদ্ধান্ত আশ্রয় শিবিরে খাদ্য সংকট ও অপুষ্টি আরো বৃদ্ধি করবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার সামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, “ খাদ্য সহায়তা অর্ধেকে নেমে আসার এই সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় ধরনের প্রভাব পরবে। আশ্রিতরা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে।”

এতে করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কাও করেন সামসুদ্দৌজা।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (ARSPHR)-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, “রেশন কমানোর খবর শুনে আমি বাকরুদ্ধ। ১২.৫০ ডলার থেকে ৬ ডলারে কমানো হলে রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে। এমনকি ১২.৫০ ডলারও পুষ্টিকর জীবনযাপন করার জন্য যথেষ্ট নয়”।

তিনি আরও বলেন, “এর কারনে রোহিঙ্গারা চুরি, ডাকাতি, মাদক ও অন্যান্য অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পরবে”।

রোহিঙ্গা নেতা জোবায়ের বলেন, “আমরা এখানে আর্থিক সহায়তার উপর বেঁচে থাকতে চাই না। আমরা আমাদের দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের খাদ্য নিজেরা যোগান দিতে চাই”।

আশ্রয় শিবিরের তরুণ রোহিঙ্গা নেতা মুজিবুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গাদের আর কোনও আয়ের উৎস নেই। তাদের জীবন সম্পূর্ণভাবে খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল। এমন রমজান মাসে এধরণের খবর আমাদের জন্য হতাশাজনক।

জাতীয় নাগরিক কমিটির রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্পাদক এসএম সুজা বলেন, “যখন তাদের খাদ্য সহায়তা কমানো হবে, তারা জীবিকার সন্ধানে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাবে, যা স্থানীয় কর্মসংস্থানে প্রচুর চাপ ফেলবে।”

“এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। এটি একটি বড় মানবিক সংকট। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসতে হবে, নাহয় এটি বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে” বলেন সুজা।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

টেকনাফে মানব পাচারে ‘জিরো টলারেন্স’ বলছে বিজিবি

This will close in 6 seconds

কমে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা

বাড়বে অপরাধ

আপডেট সময় : ০৫:৩৬:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গারা তাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তারা বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এরমধ্য দিয়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ যেমন সীমিত হয়ে যাবে, তেমন ভাবে ক্যাম্পের ভেতর ও আশপাশের এলাকায় অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। এতে করে স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দ্বন্ধও বাড়তে পারে। যা মারাত্মক প্রভাব পরবে আশ্রয় জীবনে।

সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (WFP) বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেক কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে প্রতি ব্যক্তিকে মাসে ৬ ডলার পরিমাণ রেশন দেওয়া হবে।

বর্তমানে রোহিঙ্গারা মাথাপিছু ১২.৫০ ডলার খাদ্য সহায়তা পান, কিন্তু তহবিলের অভাবে এই পরিমাণ ৬ ডলারে নামিয়ে আনা হবে আগামী মাস থেকে।

বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে বলছেন, এই সিদ্ধান্ত আশ্রয় শিবিরে খাদ্য সংকট ও অপুষ্টি আরো বৃদ্ধি করবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার সামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, “ খাদ্য সহায়তা অর্ধেকে নেমে আসার এই সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় ধরনের প্রভাব পরবে। আশ্রিতরা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে।”

এতে করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কাও করেন সামসুদ্দৌজা।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (ARSPHR)-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, “রেশন কমানোর খবর শুনে আমি বাকরুদ্ধ। ১২.৫০ ডলার থেকে ৬ ডলারে কমানো হলে রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে। এমনকি ১২.৫০ ডলারও পুষ্টিকর জীবনযাপন করার জন্য যথেষ্ট নয়”।

তিনি আরও বলেন, “এর কারনে রোহিঙ্গারা চুরি, ডাকাতি, মাদক ও অন্যান্য অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পরবে”।

রোহিঙ্গা নেতা জোবায়ের বলেন, “আমরা এখানে আর্থিক সহায়তার উপর বেঁচে থাকতে চাই না। আমরা আমাদের দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের খাদ্য নিজেরা যোগান দিতে চাই”।

আশ্রয় শিবিরের তরুণ রোহিঙ্গা নেতা মুজিবুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গাদের আর কোনও আয়ের উৎস নেই। তাদের জীবন সম্পূর্ণভাবে খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল। এমন রমজান মাসে এধরণের খবর আমাদের জন্য হতাশাজনক।

জাতীয় নাগরিক কমিটির রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্পাদক এসএম সুজা বলেন, “যখন তাদের খাদ্য সহায়তা কমানো হবে, তারা জীবিকার সন্ধানে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাবে, যা স্থানীয় কর্মসংস্থানে প্রচুর চাপ ফেলবে।”

“এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। এটি একটি বড় মানবিক সংকট। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসতে হবে, নাহয় এটি বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে” বলেন সুজা।