দক্ষিণ এশিয়ার বড় দেশ ভারতের পাশেই দুটি ছোট দেশ; বাংলাদেশ ও নেপাল। এই দুটি দেশেই সম্প্রতি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান যেন নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করছে। প্রশ্ন উঠছে: আসলে কি হচ্ছে? কেন হচ্ছে? কারা এর পেছনে? এবং সবচেয়ে বড় কথা, এই ভয়ঙ্কর ভূরাজনীতির জুয়ায় কারা জড়িত?
গতানুগতিক বিশ্লেষণ বলবে; অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, শাসক শ্রেণীর অব্যবস্থাপনা। কিন্তু আজকের দুনিয়ায় এগুলো আংশিক ব্যাখ্যা মাত্র। তাবৎ দুনিয়ার বিশেষজ্ঞদের চোখে এই ঘটনাগুলো শুধু অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, বরং ইন্দো-প্যাসিফিক জোট, আরকান অঞ্চলের সামরিক কৌশল, চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের একটি জটিল অঙ্ক।
ভারত এখানে এক দ্বৈত অবস্থানে আছে। একদিকে সে কোয়াডের প্রভাবশালী সদস্য ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র। অন্যদিকে ভারতের চারপাশে যেন নদী ভাঙনের মতো দেশ গুলো একে একে অস্থিতিশীল হচ্ছে; নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা। প্রশ্ন উঠছে; এটা কি নিছক কাকতালীয়, নাকি কোনো বৃহৎ শক্তির পরিকল্পিত গেম প্ল্যান?
আমেরিকা আসলে কী চায়? যুদ্ধ নয়, বরং ভারতের ওপর চাপ তৈরি করা, যাতে সে চীনের বিরুদ্ধে পুরোপুরি মার্কিন নীতির অংশীদার হয়। এক দিকে অখণ্ড ভারতের স্বপ্নকে উস্কে দেওয়া, অন্যদিকে ভাঙনের ভয় দেখানো। পাকিস্তান তো অনেক আগেই রাজনৈতিকভাবে শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা, এখন বাকি আছে ভুটান, যা হয়তো পরবর্তী পরীক্ষার ময়দান।
এর পাশাপাশি রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, বঙ্গোপসাগরীয় করিডর নিয়ে আন্তর্জাতিক দর-কষাকষি। এশিয়ার সামুদ্রিক ভূ-রাজনীতি আজ কেবল নোনা জলের ভৌগোলিক প্রশ্ন নয়, বরং হৃদয়ের গভীর কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ দক্ষিণ এশিয়ার প্রশ্ন কেবল “কে ক্ষমতায়” নয়, বরং “এই অঞ্চল কার কৌশলগত ছকে বন্দি?” ভারত কি হবে শক্তিশালী অখণ্ড রাষ্ট্র, নাকি ভাঙনের আতঙ্কে জর্জরিত এক আঞ্চলিক শক্তি? আর বাংলাদেশ-নেপালের গণঅভ্যুত্থান, তা কি কেবল ছাত্রজনতার ক্রোধ, নাকি বৃহৎ শক্তির মহড়া?
এখন দক্ষিণ এশিয়া দাঁড়িয়ে আছে এক সড়কবিভাজনে। কোন পথে যাবে, সেটাই ভবিষ্যতের ইতিহাস লিখবে।
লেখক: শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক, গবেষক ও চিন্তক।