ঢাকা ০১:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফে ১৪ মামলার পলাতক আসামী মুন্না র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার বিএফইউজে’র নির্বাহী পরিষদের সভায় সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার’র কমিটি অনুমোদন কক্সবাজার সৈকতে ‘লোক সমুদ্র’ ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ বাস্তবায়নে কক্সবাজারে ৫টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন নৌবাহিনীর নারী নেতৃত্বকে জাতির গৌরব বললেন লুৎফুর রহমান কাজল কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সভায় বক্তারা: ‎কুতুবদিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটনের বিকল্প নেই ‎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আস্থা গড়ার বদলে চাপ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ চৌফলদন্ডীর আমজাদ হত্যার আসামী ছৈয়দ নুর গ্রেফতার সমুদ্রবন্দর থেকে নামল সতর্ক সংকেত রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘের দ্বৈত ন্যারেটিভ: কেন এই দ্বন্দ্ব? উখিয়া হাসপাতালের ২ টন ময়লা অপসারণ করলো বিডি ক্লিন টিম মাতারবাড়িতে শ্রমিক দলের সভাপতি মামুনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন মধ্যরাতে ইডেন গার্ডেনের ‘ছাদ থেকে পড়ে’ যুবকের মৃত্যু! বাঁকখালী নদীর তীরে পুনঃদখল উচ্ছেদে প্রশাসনের ফের অভিযান টেকনাফে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ যুবকের লাশ নাফ নদীতে

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: করোনার চেয়ে ভয়ঙ্কর “ডেঙ্গু” রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সারাবছরই 

আগে ডেঙ্গু একটি মৌসুমি রোগ হিসেবে পরিচিত ছিল। মূলত বর্ষাকালে, জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রকোপ দেখা যেত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিত্রটা পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন ডেঙ্গু সারাবছর ধরেই মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

তবে একটু সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিলেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব বলেও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,৯৩৮ জন। এরপর জুনে ৩৩৭ জন, জুলাইয়ে ৯৬৫ জন, আগস্টে ৪,৩৪৭ জন, সেপ্টেম্বরে ৫,১২৩ জন, অক্টোবরে ৪,৩৮৬ জন, নভেম্বরে ৩,৪৩১ জন এবং ডিসেম্বরে ৯৪৮ জন আক্রান্ত হন। এই বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৭ জন।

২০২৫ সালের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এবছর আগের চেয়ে অনেক কমেছে ডেঙ্গু। জানুয়ারিতে ২১৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১০১ জন, মার্চে ৮৬ জন, এপ্রিলে ৩৯৯ জন, মে মাসে ১,১৬২ জন, জুনে ১,৩৩৬ জন, জুলাইয়ে ১,৮৫২ জন এবং আগস্টের ২৫ তারিখ পর্যন্ত ১৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোন মৃত্যু ঘটেনি।

এই পরিসংখ্যান থেকেই পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, ডেঙ্গু এখন সারাবছরের রোগে পরিণত হয়েছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সবুক্তগীর মাহমুদ সোহেল টিটিএন-কে বলেন, আগে বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটা সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হত। কারণ তখন এডিশ মশার প্রজনন মৌসুমে বর্ষাকালে সবখানে তখন পানি জমে থাকার কারণে এডিশ মশার জন্ম হত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সারাবছরই মানুষ কোন না কোনভাবে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। কারণ এখন পরিবেশের কোন পরিবর্তনের কারণে এবং কিছু মানবসৃষ্ট কারণে এডিস মশা সারাবছরই বংশবৃদ্ধি করছে এবং যেকারণে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

“আগে এডিস মশা সারাবছরই বেঁচে থাকতে পারত না। কিন্তু এখন হয়তো আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ডেঙ্গু সারাবছর সার্ভাইব করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আগে যেমনটা জানতাম কেবল সন্ধ্যা এবং সকালে এডিস মশা কামড় দিত। কিন্তু এখন সবসময় এডিস মশা কামড়ায়। যেকারণে সারাবছরই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে”- জানান আরএমও।

এবিষয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং সংক্রামক রোগ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির টিটিএন-কে বলেন, অবশ্যই আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যেটা বর্ষাকালে ডেঙ্গুর সিজন ছিলো সেটা সারাবছর আক্রান্ত হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে শীতকালেও ডেঙ্গু রোগ পাওয়া যায়। আর ডেঙ্গুটা এখন আমাদের দেশে এনডেমিক হয়ে গেছে (সবখানে ছড়িয়ে গেছে)। এনডেমিক হয়ে যাওয়ার কারণে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু পাওয়া যাচ্ছে। আর মশাও পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে যাচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদুল হক টিটিএন-কে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে কিনা এটা নিয়ে আইইডিসিআর রিচার্স করছে। বাংলাদেশে ১০/১৫ বছর আগে ডেঙ্গুর কথা আমরা শুনিনি। কিন্তু এখন ডেঙ্গু সারাবছর পাওয়া যাচ্ছে। এটাতো নিশ্চয়ই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তবে কক্সবাজারে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা নাগরিক।

 

প্রতিরোধমূলক যেসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত:

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সবুক্তগীর মাহমুদ সোহেল বলেন, আক্রান্ত না হওয়ার জন্য অবশ্যই আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিরোধের জন্য যে সমস্ত সচেততা আছে সেগুলো নিজেদের পালন করতে হবে এবং সমাজে সে সচেতনতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, প্রচারপত্রে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে নিজের আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে মশার প্রজনন ক্ষেত্র যেগুলো আছে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া। এখানে ব্যক্তির যেমন ভূমিকা আছে তেমন সরকারি প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদেরও ভূমিকা আছে মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করার ক্ষেত্রে। এছাড়া অবশ্যই সবসময় মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমানো বিশেষ করে শিশুদের দিনের বেলাতেও মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমানো এবং তাও মশা বেশি হলে প্রতিরোধকারী কিছু ক্রিম রয়েছে সেগুলো লাগানো। এসব পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং সংক্রামক রোগ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির বলেন, অনেকগুলো ভাইরাস ঘুরাঘুরি করছে। তারমধ্যে একটি ভাইরাস এবং অপরটি পরজীবি। হলো দুটি ডেঙ্গু এবং মেলেরিয়া। এ দুটি মানুষকে মেরে ফেলতে পারে যথাযথ চিকিৎসা না করলে। এমনকি করোনা ভাইরাসের চেয়েও এ দুটি ভাইরাস ও জীবাণু খারাপ। ডেঙ্গু মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। একারণে মশারী টাঙ্গানো থেকে শুরু করে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

ডেঙ্গু হলে প্রতিকারের উপায়:

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সবুক্তগীর মাহমুদ সোহেল বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অন্যন্য ভাইরাস জ্বরের মতো জ্বর হিসেবেই আসবে। জ্বর হলে সাধারণত আমরা পরীক্ষা করিনা। কিন্তু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে পরীক্ষা না করলে খারাপ দিকে চলে যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে সাধারণ জ্বর হলেও যেন অন্তত সিবিসি (কমপ্লেট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষা করি। যদি ডেঙ্গু পাওয়া যায় তাহলে কিছু জিনিস সতর্ক থাকতে হবে যেমন প্রেশার কমে যাচ্ছে কিনা, সকে চলে যাচ্ছে কিনা এসব বিষয়। আর অনেকসময় রক্তে পানির পরিমাণ কমে যায়, রক্ত ঘন হয়ে যায় এসব বিষয়ের কারণে আরও কয়েকবার সিবিসি করানো হতে পারে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর হলেই অনেকে না বুঝে এন্টিবায়োটিক এবং ব্যাথার কারণে ব্যাথার ঔষধ খায়। এমনিতেই ডেঙ্গু হলে প্লাটিলেট কমে যায়, আর এন্টিবায়োটিক খেলে আরও কমে যাবে। এটি ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হতে পারে।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং সংক্রামক রোগ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির বলেন, ডেঙ্গু হলেই আমরা প্যারাসিটামল খাই। ডেঙ্গু হলে আমাদের যথাযথ পানি এবং স্যালাইন খেতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গুতে কিছু ওয়ার্নিং সাইন আছে, প্রস্রাব কম হয়, পেটব্যথা, বমি, পেট ফুলে যায়, শরীরের কোথাও পানি জমে গেলে সাথে সাথে পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মশারীতে থাকতে হবে। যেন রোগীর থেকে মশায় কামড়িয়ে অন্য কাউকে না কামড়ায়।

সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদুল হক জানান, আমরা সারাবছর স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে থাকি। সেখানে ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্য মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দিই। মশার বংশবিস্তার যেন হয় সেটার জন্য পানি যেখানে জমে থাকে সেগুলো পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, রোহিঙ্গা এলাকা খুবই ঘনবসতি। সেখানে মশার প্রজনন হওয়ার মতো এলিমেনট্স আছে। একারণে সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। সেখানে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কাজ করছে।

 

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

টেকনাফে ১৪ মামলার পলাতক আসামী মুন্না র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার

This will close in 6 seconds

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: করোনার চেয়ে ভয়ঙ্কর “ডেঙ্গু” রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সারাবছরই 

আপডেট সময় : ০৯:৫৯:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আগে ডেঙ্গু একটি মৌসুমি রোগ হিসেবে পরিচিত ছিল। মূলত বর্ষাকালে, জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রকোপ দেখা যেত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিত্রটা পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন ডেঙ্গু সারাবছর ধরেই মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

তবে একটু সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিলেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব বলেও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,৯৩৮ জন। এরপর জুনে ৩৩৭ জন, জুলাইয়ে ৯৬৫ জন, আগস্টে ৪,৩৪৭ জন, সেপ্টেম্বরে ৫,১২৩ জন, অক্টোবরে ৪,৩৮৬ জন, নভেম্বরে ৩,৪৩১ জন এবং ডিসেম্বরে ৯৪৮ জন আক্রান্ত হন। এই বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৭ জন।

২০২৫ সালের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এবছর আগের চেয়ে অনেক কমেছে ডেঙ্গু। জানুয়ারিতে ২১৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১০১ জন, মার্চে ৮৬ জন, এপ্রিলে ৩৯৯ জন, মে মাসে ১,১৬২ জন, জুনে ১,৩৩৬ জন, জুলাইয়ে ১,৮৫২ জন এবং আগস্টের ২৫ তারিখ পর্যন্ত ১৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোন মৃত্যু ঘটেনি।

এই পরিসংখ্যান থেকেই পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, ডেঙ্গু এখন সারাবছরের রোগে পরিণত হয়েছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সবুক্তগীর মাহমুদ সোহেল টিটিএন-কে বলেন, আগে বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটা সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হত। কারণ তখন এডিশ মশার প্রজনন মৌসুমে বর্ষাকালে সবখানে তখন পানি জমে থাকার কারণে এডিশ মশার জন্ম হত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সারাবছরই মানুষ কোন না কোনভাবে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। কারণ এখন পরিবেশের কোন পরিবর্তনের কারণে এবং কিছু মানবসৃষ্ট কারণে এডিস মশা সারাবছরই বংশবৃদ্ধি করছে এবং যেকারণে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

“আগে এডিস মশা সারাবছরই বেঁচে থাকতে পারত না। কিন্তু এখন হয়তো আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ডেঙ্গু সারাবছর সার্ভাইব করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আগে যেমনটা জানতাম কেবল সন্ধ্যা এবং সকালে এডিস মশা কামড় দিত। কিন্তু এখন সবসময় এডিস মশা কামড়ায়। যেকারণে সারাবছরই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে”- জানান আরএমও।

এবিষয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং সংক্রামক রোগ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির টিটিএন-কে বলেন, অবশ্যই আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যেটা বর্ষাকালে ডেঙ্গুর সিজন ছিলো সেটা সারাবছর আক্রান্ত হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে শীতকালেও ডেঙ্গু রোগ পাওয়া যায়। আর ডেঙ্গুটা এখন আমাদের দেশে এনডেমিক হয়ে গেছে (সবখানে ছড়িয়ে গেছে)। এনডেমিক হয়ে যাওয়ার কারণে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু পাওয়া যাচ্ছে। আর মশাও পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে যাচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদুল হক টিটিএন-কে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে কিনা এটা নিয়ে আইইডিসিআর রিচার্স করছে। বাংলাদেশে ১০/১৫ বছর আগে ডেঙ্গুর কথা আমরা শুনিনি। কিন্তু এখন ডেঙ্গু সারাবছর পাওয়া যাচ্ছে। এটাতো নিশ্চয়ই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তবে কক্সবাজারে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা নাগরিক।

 

প্রতিরোধমূলক যেসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত:

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সবুক্তগীর মাহমুদ সোহেল বলেন, আক্রান্ত না হওয়ার জন্য অবশ্যই আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিরোধের জন্য যে সমস্ত সচেততা আছে সেগুলো নিজেদের পালন করতে হবে এবং সমাজে সে সচেতনতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, প্রচারপত্রে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে নিজের আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে মশার প্রজনন ক্ষেত্র যেগুলো আছে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া। এখানে ব্যক্তির যেমন ভূমিকা আছে তেমন সরকারি প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদেরও ভূমিকা আছে মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করার ক্ষেত্রে। এছাড়া অবশ্যই সবসময় মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমানো বিশেষ করে শিশুদের দিনের বেলাতেও মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমানো এবং তাও মশা বেশি হলে প্রতিরোধকারী কিছু ক্রিম রয়েছে সেগুলো লাগানো। এসব পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং সংক্রামক রোগ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির বলেন, অনেকগুলো ভাইরাস ঘুরাঘুরি করছে। তারমধ্যে একটি ভাইরাস এবং অপরটি পরজীবি। হলো দুটি ডেঙ্গু এবং মেলেরিয়া। এ দুটি মানুষকে মেরে ফেলতে পারে যথাযথ চিকিৎসা না করলে। এমনকি করোনা ভাইরাসের চেয়েও এ দুটি ভাইরাস ও জীবাণু খারাপ। ডেঙ্গু মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। একারণে মশারী টাঙ্গানো থেকে শুরু করে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

ডেঙ্গু হলে প্রতিকারের উপায়:

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সবুক্তগীর মাহমুদ সোহেল বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অন্যন্য ভাইরাস জ্বরের মতো জ্বর হিসেবেই আসবে। জ্বর হলে সাধারণত আমরা পরীক্ষা করিনা। কিন্তু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে পরীক্ষা না করলে খারাপ দিকে চলে যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে সাধারণ জ্বর হলেও যেন অন্তত সিবিসি (কমপ্লেট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষা করি। যদি ডেঙ্গু পাওয়া যায় তাহলে কিছু জিনিস সতর্ক থাকতে হবে যেমন প্রেশার কমে যাচ্ছে কিনা, সকে চলে যাচ্ছে কিনা এসব বিষয়। আর অনেকসময় রক্তে পানির পরিমাণ কমে যায়, রক্ত ঘন হয়ে যায় এসব বিষয়ের কারণে আরও কয়েকবার সিবিসি করানো হতে পারে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর হলেই অনেকে না বুঝে এন্টিবায়োটিক এবং ব্যাথার কারণে ব্যাথার ঔষধ খায়। এমনিতেই ডেঙ্গু হলে প্লাটিলেট কমে যায়, আর এন্টিবায়োটিক খেলে আরও কমে যাবে। এটি ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হতে পারে।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং সংক্রামক রোগ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির বলেন, ডেঙ্গু হলেই আমরা প্যারাসিটামল খাই। ডেঙ্গু হলে আমাদের যথাযথ পানি এবং স্যালাইন খেতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গুতে কিছু ওয়ার্নিং সাইন আছে, প্রস্রাব কম হয়, পেটব্যথা, বমি, পেট ফুলে যায়, শরীরের কোথাও পানি জমে গেলে সাথে সাথে পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মশারীতে থাকতে হবে। যেন রোগীর থেকে মশায় কামড়িয়ে অন্য কাউকে না কামড়ায়।

সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদুল হক জানান, আমরা সারাবছর স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে থাকি। সেখানে ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্য মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দিই। মশার বংশবিস্তার যেন হয় সেটার জন্য পানি যেখানে জমে থাকে সেগুলো পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, রোহিঙ্গা এলাকা খুবই ঘনবসতি। সেখানে মশার প্রজনন হওয়ার মতো এলিমেনট্স আছে। একারণে সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। সেখানে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কাজ করছে।