ঢাকা ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
২৫ আগস্টের কারণে এখনো আছেন আরিফ? উখিয়ার সম্ভাব্য নতুন ওসি তৌহিদ জুমার নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব শিক্ষক পিটিয়ে ‘বির্তকিত’ উখিয়ার ওসি জুলাইয়ে জেলায় হয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্লাবের মাঝে ফুটবল বিতরণ: কুতুবদিয়ায় ক্রীড়ার নতুন জাগরণ পেকুয়ায় যুবদলের পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল জামিনে মুক্ত হলেন গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল প্রত্যক্ষ ভোটে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন সাঈদুল ইসলাম আহবায়ক অভি, সদস্য সচিব জাহেদুল সুরা নিসায় আল্লাহর জিকিরের গুরুত্ব নিয়ে যা বলা হয়েছে রান্না’কে ক্যারিয়ার হিসেবে নিবেন ভারতে পালিয়ে থাকা কক্সবাজারের সাবেক ‘আওয়ামী’ এমপি! পেকুয়ায় চাঁদাবাজি মামলায় ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে উৎস কর পুনর্বিবেচনার দাবিতে কক্সবাজারস্থ উখিয়া সমিতির আলোচনা ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত ভুটানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে আসর শুরু বাংলাদেশের মধ্যপ্রাচ্যে আটকে না থেকে ইউরোপ-জাপানে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোয় জোর

আরাকানে রোহিঙ্গা-রাখাইন সম্প্রীতি ফেরাতে চেয়েছিলো ‘হয়রাতি সংগঠন’

  • আফজারা রিয়া
  • আপডেট সময় : ০৫:৫১:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
  • 369

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধের বিভীষিকা আর রক্তাক্ত গল্পের মাঝেও সম্প্রীতির মাধ্যমে একটুখানি আশার আলো খুঁজে ফিরেছিলেন আরাকানের কিছু সাহসী যুবক।

রাখাইনের জাতিগত বিভাজন ঠেকাতে একটি গোপন সংগঠন গঠনও হয়েছিলো। ম্রো, চাকমা, হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধসহ সব সম্প্রদায়ের তরুণরা মিলে গঠন করেছিলেন ‘হয়রাতি অরগানাইজেশন’ নামের একটি সংগঠন”।

রোববার অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা যুবক ইব্রাহিম জানান, ২০১৭ সালের গণহত্যার পর যারা রাখাইনে রয়ে গিয়েছিলেন, তারা নতুন করে আরেকটি সংকটে পড়ে যান। রাখাইন বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে তৈরি হয় গভীর আস্থাহীনতা। তবুও দুই বছর ধরে কিছু সাহসী যুবক চেষ্টা চালিয়ে যান সম্পর্ক জোড়াতাড়ার—তারা বিশ্বাস করতেন, সংঘাত নয় বরং সম্প্রীতি দিয়েই রক্ষা পেতে পারে আরাকানের ভবিষ্যৎ।

ইব্রাহিম জানান, রাখাইনের গ্যাসসম্পদ লুট করতেই এই সংঘাতের ইন্ধন জোগানো হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। আর সে কারণেই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

২৫ জনের একটি দল গঠন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন ,”এই সংগঠনের নিয়ম ছিল কঠোর এবং সাম্যের ভিত্তিতে গড়া। প্রতি ছয় মাসে প্রেসিডেন্ট বদল হতো, যাতে সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়”।

ইব্রাহিম বলেন, “আমরা সকলের ধর্মস্থানে গিয়ে শিশুদের পড়াতাম। মুসলিমরা যেত বৌদ্ধদের ক্যাংয়ে, আবার রাখাইন যুবকরাও আসতেন আমাদের মাদ্রাসায়। শিশুরাই ছিল সম্প্রীতির বীজ।”

“আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এ কাজটা কঠিন, তাই ওপেন করা যাবে না, ভেতরে ভেতরে কাজ করছিলাম। প্রীতি ফুটবল ম্যাচ করতাম। বৌদ্ধদের ক্যাং, মুসলিমদের মাদ্রাসা, হিন্দুদের মন্দির, চাকমাদের গীর্জায় গিয়ে শিশুদের পড়াশোনা করাতাম। এতে করে সৌহার্দ্য বাড়ছিল”,বলেন ইব্রাহিম।

‘হয়রাতি’ নামটি ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। সম্প্রীতির বন্ধনে ফুটবল ম্যাচ, ইফতার ও ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। এক সময় রাখাইন বৌদ্ধরা নির্ভয়ে মুসলিম পাড়ায় যেতেন, আর মুসলিমরা বৌদ্ধ পাড়ায়।

কিন্তু সেই শান্তির চেষ্টা থেমে যায় হঠাৎ। নতুন করে যুদ্ধের আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় সম্প্রীতির সব প্রচেষ্টা। ইব্রাহিম বলেন, “যুদ্ধটা আরাকান আর্মি ও জান্তার মধ্যে হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল রোহিঙ্গারাই। ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদে এক পাড়ায় ড্রোন হামলায় পুরো একটি পরিবার মারা যায় ভাত খাওয়ার সময়।”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম সম্প্রীতির বীজ একদিন বড় গাছ হবে। কিন্তু যুদ্ধ সেই চারা গাছকেই পুড়িয়ে দিয়েছে।”

মো. ইব্রাহিম যখন মায়ের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসেন, তখনও ভাবেননি আর কখনও ফিরতে পারবেন না মাতৃভূমিতে। সবকিছু গুছিয়ে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতির মধ্যেই শুরু হয় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির ভয়াবহ সংঘর্ষ। পরিবার-পরিজনের সতর্কবার্তায় ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় তাঁর জন্য।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

২৫ আগস্টের কারণে এখনো আছেন আরিফ? উখিয়ার সম্ভাব্য নতুন ওসি তৌহিদ

This will close in 6 seconds

আরাকানে রোহিঙ্গা-রাখাইন সম্প্রীতি ফেরাতে চেয়েছিলো ‘হয়রাতি সংগঠন’

আপডেট সময় : ০৫:৫১:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধের বিভীষিকা আর রক্তাক্ত গল্পের মাঝেও সম্প্রীতির মাধ্যমে একটুখানি আশার আলো খুঁজে ফিরেছিলেন আরাকানের কিছু সাহসী যুবক।

রাখাইনের জাতিগত বিভাজন ঠেকাতে একটি গোপন সংগঠন গঠনও হয়েছিলো। ম্রো, চাকমা, হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধসহ সব সম্প্রদায়ের তরুণরা মিলে গঠন করেছিলেন ‘হয়রাতি অরগানাইজেশন’ নামের একটি সংগঠন”।

রোববার অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা যুবক ইব্রাহিম জানান, ২০১৭ সালের গণহত্যার পর যারা রাখাইনে রয়ে গিয়েছিলেন, তারা নতুন করে আরেকটি সংকটে পড়ে যান। রাখাইন বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে তৈরি হয় গভীর আস্থাহীনতা। তবুও দুই বছর ধরে কিছু সাহসী যুবক চেষ্টা চালিয়ে যান সম্পর্ক জোড়াতাড়ার—তারা বিশ্বাস করতেন, সংঘাত নয় বরং সম্প্রীতি দিয়েই রক্ষা পেতে পারে আরাকানের ভবিষ্যৎ।

ইব্রাহিম জানান, রাখাইনের গ্যাসসম্পদ লুট করতেই এই সংঘাতের ইন্ধন জোগানো হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। আর সে কারণেই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

২৫ জনের একটি দল গঠন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন ,”এই সংগঠনের নিয়ম ছিল কঠোর এবং সাম্যের ভিত্তিতে গড়া। প্রতি ছয় মাসে প্রেসিডেন্ট বদল হতো, যাতে সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়”।

ইব্রাহিম বলেন, “আমরা সকলের ধর্মস্থানে গিয়ে শিশুদের পড়াতাম। মুসলিমরা যেত বৌদ্ধদের ক্যাংয়ে, আবার রাখাইন যুবকরাও আসতেন আমাদের মাদ্রাসায়। শিশুরাই ছিল সম্প্রীতির বীজ।”

“আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এ কাজটা কঠিন, তাই ওপেন করা যাবে না, ভেতরে ভেতরে কাজ করছিলাম। প্রীতি ফুটবল ম্যাচ করতাম। বৌদ্ধদের ক্যাং, মুসলিমদের মাদ্রাসা, হিন্দুদের মন্দির, চাকমাদের গীর্জায় গিয়ে শিশুদের পড়াশোনা করাতাম। এতে করে সৌহার্দ্য বাড়ছিল”,বলেন ইব্রাহিম।

‘হয়রাতি’ নামটি ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। সম্প্রীতির বন্ধনে ফুটবল ম্যাচ, ইফতার ও ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। এক সময় রাখাইন বৌদ্ধরা নির্ভয়ে মুসলিম পাড়ায় যেতেন, আর মুসলিমরা বৌদ্ধ পাড়ায়।

কিন্তু সেই শান্তির চেষ্টা থেমে যায় হঠাৎ। নতুন করে যুদ্ধের আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় সম্প্রীতির সব প্রচেষ্টা। ইব্রাহিম বলেন, “যুদ্ধটা আরাকান আর্মি ও জান্তার মধ্যে হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল রোহিঙ্গারাই। ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদে এক পাড়ায় ড্রোন হামলায় পুরো একটি পরিবার মারা যায় ভাত খাওয়ার সময়।”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম সম্প্রীতির বীজ একদিন বড় গাছ হবে। কিন্তু যুদ্ধ সেই চারা গাছকেই পুড়িয়ে দিয়েছে।”

মো. ইব্রাহিম যখন মায়ের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসেন, তখনও ভাবেননি আর কখনও ফিরতে পারবেন না মাতৃভূমিতে। সবকিছু গুছিয়ে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতির মধ্যেই শুরু হয় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির ভয়াবহ সংঘর্ষ। পরিবার-পরিজনের সতর্কবার্তায় ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় তাঁর জন্য।