ঢাকা ০২:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন চায়: সালাহউদ্দিন আহমেদ উখিয়া-টেকনাফের নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে: শাহজাহান চৌধুরী কক্সবাজার সরকারি কলেজে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত স্কুল ব্যাগে ইয়াবা পাচার:চকরিয়ায় পুলিশের জালে দম্পতি চাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা কখন? কক্সবাজারে ছিনতাইয়ে জড়িত পুলিশের ‘সাবেক সদস্য’ আটক শহরের সমিতিপাড়ায় আগুনে পুড়েছে ২ দোকান :১১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি শেষ হলো চাকসুর ভোট গ্রহণ:চলছে গণনা ছাত্র প্রতিনিধি-সাংবাদিক মিলে টেকনাফে ‘চেয়ারম্যান ও প্রশাসক’ পদ দেয়ার কথা বলে কোটি টাকার বানিজ্য! জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি, এখান থেকে শুরু করুন: চবি উপাচার্য চাকসুর ভোটগ্রহণ শুরু সীমান্তে ফের মাইন বিস্ফোরণ, মিয়ানমার নাগরিক নিহত- বাংলাদেশি আহত চকরিয়া হারবাং ইউনিয়ন ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠিত তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে সাঁতার প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন ৬ বছরে ২৫ হত্যাকান্ড: বদরখালীতে পুলিশ ফাঁড়ি পুনঃস্থাপনের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

আরাকানে রোহিঙ্গা-রাখাইন সম্প্রীতি ফেরাতে চেয়েছিলো ‘হয়রাতি সংগঠন’

  • আফজারা রিয়া
  • আপডেট সময় : ০৫:৫১:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
  • 405

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধের বিভীষিকা আর রক্তাক্ত গল্পের মাঝেও সম্প্রীতির মাধ্যমে একটুখানি আশার আলো খুঁজে ফিরেছিলেন আরাকানের কিছু সাহসী যুবক।

রাখাইনের জাতিগত বিভাজন ঠেকাতে একটি গোপন সংগঠন গঠনও হয়েছিলো। ম্রো, চাকমা, হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধসহ সব সম্প্রদায়ের তরুণরা মিলে গঠন করেছিলেন ‘হয়রাতি অরগানাইজেশন’ নামের একটি সংগঠন”।

রোববার অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা যুবক ইব্রাহিম জানান, ২০১৭ সালের গণহত্যার পর যারা রাখাইনে রয়ে গিয়েছিলেন, তারা নতুন করে আরেকটি সংকটে পড়ে যান। রাখাইন বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে তৈরি হয় গভীর আস্থাহীনতা। তবুও দুই বছর ধরে কিছু সাহসী যুবক চেষ্টা চালিয়ে যান সম্পর্ক জোড়াতাড়ার—তারা বিশ্বাস করতেন, সংঘাত নয় বরং সম্প্রীতি দিয়েই রক্ষা পেতে পারে আরাকানের ভবিষ্যৎ।

ইব্রাহিম জানান, রাখাইনের গ্যাসসম্পদ লুট করতেই এই সংঘাতের ইন্ধন জোগানো হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। আর সে কারণেই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

২৫ জনের একটি দল গঠন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন ,”এই সংগঠনের নিয়ম ছিল কঠোর এবং সাম্যের ভিত্তিতে গড়া। প্রতি ছয় মাসে প্রেসিডেন্ট বদল হতো, যাতে সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়”।

ইব্রাহিম বলেন, “আমরা সকলের ধর্মস্থানে গিয়ে শিশুদের পড়াতাম। মুসলিমরা যেত বৌদ্ধদের ক্যাংয়ে, আবার রাখাইন যুবকরাও আসতেন আমাদের মাদ্রাসায়। শিশুরাই ছিল সম্প্রীতির বীজ।”

“আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এ কাজটা কঠিন, তাই ওপেন করা যাবে না, ভেতরে ভেতরে কাজ করছিলাম। প্রীতি ফুটবল ম্যাচ করতাম। বৌদ্ধদের ক্যাং, মুসলিমদের মাদ্রাসা, হিন্দুদের মন্দির, চাকমাদের গীর্জায় গিয়ে শিশুদের পড়াশোনা করাতাম। এতে করে সৌহার্দ্য বাড়ছিল”,বলেন ইব্রাহিম।

‘হয়রাতি’ নামটি ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। সম্প্রীতির বন্ধনে ফুটবল ম্যাচ, ইফতার ও ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। এক সময় রাখাইন বৌদ্ধরা নির্ভয়ে মুসলিম পাড়ায় যেতেন, আর মুসলিমরা বৌদ্ধ পাড়ায়।

কিন্তু সেই শান্তির চেষ্টা থেমে যায় হঠাৎ। নতুন করে যুদ্ধের আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় সম্প্রীতির সব প্রচেষ্টা। ইব্রাহিম বলেন, “যুদ্ধটা আরাকান আর্মি ও জান্তার মধ্যে হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল রোহিঙ্গারাই। ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদে এক পাড়ায় ড্রোন হামলায় পুরো একটি পরিবার মারা যায় ভাত খাওয়ার সময়।”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম সম্প্রীতির বীজ একদিন বড় গাছ হবে। কিন্তু যুদ্ধ সেই চারা গাছকেই পুড়িয়ে দিয়েছে।”

মো. ইব্রাহিম যখন মায়ের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসেন, তখনও ভাবেননি আর কখনও ফিরতে পারবেন না মাতৃভূমিতে। সবকিছু গুছিয়ে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতির মধ্যেই শুরু হয় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির ভয়াবহ সংঘর্ষ। পরিবার-পরিজনের সতর্কবার্তায় ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় তাঁর জন্য।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন চায়: সালাহউদ্দিন আহমেদ

This will close in 6 seconds

আরাকানে রোহিঙ্গা-রাখাইন সম্প্রীতি ফেরাতে চেয়েছিলো ‘হয়রাতি সংগঠন’

আপডেট সময় : ০৫:৫১:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধের বিভীষিকা আর রক্তাক্ত গল্পের মাঝেও সম্প্রীতির মাধ্যমে একটুখানি আশার আলো খুঁজে ফিরেছিলেন আরাকানের কিছু সাহসী যুবক।

রাখাইনের জাতিগত বিভাজন ঠেকাতে একটি গোপন সংগঠন গঠনও হয়েছিলো। ম্রো, চাকমা, হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধসহ সব সম্প্রদায়ের তরুণরা মিলে গঠন করেছিলেন ‘হয়রাতি অরগানাইজেশন’ নামের একটি সংগঠন”।

রোববার অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা যুবক ইব্রাহিম জানান, ২০১৭ সালের গণহত্যার পর যারা রাখাইনে রয়ে গিয়েছিলেন, তারা নতুন করে আরেকটি সংকটে পড়ে যান। রাখাইন বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে তৈরি হয় গভীর আস্থাহীনতা। তবুও দুই বছর ধরে কিছু সাহসী যুবক চেষ্টা চালিয়ে যান সম্পর্ক জোড়াতাড়ার—তারা বিশ্বাস করতেন, সংঘাত নয় বরং সম্প্রীতি দিয়েই রক্ষা পেতে পারে আরাকানের ভবিষ্যৎ।

ইব্রাহিম জানান, রাখাইনের গ্যাসসম্পদ লুট করতেই এই সংঘাতের ইন্ধন জোগানো হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। আর সে কারণেই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

২৫ জনের একটি দল গঠন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন ,”এই সংগঠনের নিয়ম ছিল কঠোর এবং সাম্যের ভিত্তিতে গড়া। প্রতি ছয় মাসে প্রেসিডেন্ট বদল হতো, যাতে সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়”।

ইব্রাহিম বলেন, “আমরা সকলের ধর্মস্থানে গিয়ে শিশুদের পড়াতাম। মুসলিমরা যেত বৌদ্ধদের ক্যাংয়ে, আবার রাখাইন যুবকরাও আসতেন আমাদের মাদ্রাসায়। শিশুরাই ছিল সম্প্রীতির বীজ।”

“আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এ কাজটা কঠিন, তাই ওপেন করা যাবে না, ভেতরে ভেতরে কাজ করছিলাম। প্রীতি ফুটবল ম্যাচ করতাম। বৌদ্ধদের ক্যাং, মুসলিমদের মাদ্রাসা, হিন্দুদের মন্দির, চাকমাদের গীর্জায় গিয়ে শিশুদের পড়াশোনা করাতাম। এতে করে সৌহার্দ্য বাড়ছিল”,বলেন ইব্রাহিম।

‘হয়রাতি’ নামটি ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। সম্প্রীতির বন্ধনে ফুটবল ম্যাচ, ইফতার ও ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। এক সময় রাখাইন বৌদ্ধরা নির্ভয়ে মুসলিম পাড়ায় যেতেন, আর মুসলিমরা বৌদ্ধ পাড়ায়।

কিন্তু সেই শান্তির চেষ্টা থেমে যায় হঠাৎ। নতুন করে যুদ্ধের আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় সম্প্রীতির সব প্রচেষ্টা। ইব্রাহিম বলেন, “যুদ্ধটা আরাকান আর্মি ও জান্তার মধ্যে হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল রোহিঙ্গারাই। ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদে এক পাড়ায় ড্রোন হামলায় পুরো একটি পরিবার মারা যায় ভাত খাওয়ার সময়।”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম সম্প্রীতির বীজ একদিন বড় গাছ হবে। কিন্তু যুদ্ধ সেই চারা গাছকেই পুড়িয়ে দিয়েছে।”

মো. ইব্রাহিম যখন মায়ের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসেন, তখনও ভাবেননি আর কখনও ফিরতে পারবেন না মাতৃভূমিতে। সবকিছু গুছিয়ে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতির মধ্যেই শুরু হয় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির ভয়াবহ সংঘর্ষ। পরিবার-পরিজনের সতর্কবার্তায় ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় তাঁর জন্য।