নিজস্ব প্রতিবেদক
বান্দরবানের রুমায় কেএনএফ সোনালী ব্যাংক ডাকাতির সময়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর লুট করে নেয়া ১৪ টি অস্ত্র ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের সঙ্গে শান্তি কমিটির সকল আলোচনা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন শান্তি রক্ষা কমিটি। আজ শনিবার দুপুরে বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ ঘোষনা দেন শান্তি রক্ষা কমিটির নেতারা।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃজনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লা।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বম সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার লম বম, ম্রো সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি রাংলাই ম্রো, মারমা এস্যােসিয়েশনের সভাপতি মংসিনু মারমা, ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সভাপতি আ্যাডভোকেট খুশী রায় ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থার বান্দরবান অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক বিরলাল তঞ্চঙ্গ্যা, চাক সমাজ কসিটির সহ-সভাপতি উচাই হ্লা চাক, খেয়াং সম্প্রদায়ের ম্রাসা খেয়াং, চাকমা সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সাংবাদিক বুদ্ধজ্যােতি চাকমা, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি মুখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা’সহ ১২টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লা বলেন, পাহাড়ের শান্তি ফিরিয়ে আনতে জীবনবাজি রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসেছে। আলোচনায় কেএনএফ যেসব দাবি-দাওয়া রেখেছে, সেগুলো নিয়ে সরকার কাজ করছে। সরকার তাদের পূর্ণবাসন করারও প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু শান্তি আলোচনাকালে কেএনএফ এভাবে ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র, ও অর্থ লুটপাটের ঘটনা ঘটাবে সেটিছিল কল্পনার বাহিরে। ফলে ঘটনাটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চলে গেছে। তাদের এই অপরাধমূলক কার্যকলাপের কারণে বর্তমানে পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বম সম্প্রদায়সহ পাহাড়ের অনান্য জাতিগোষ্ঠীরা।
তিনি আরও বলেন, কেএনএফ যেসব স্বায়িত্বশাসিত চেয়েছেন, সেটি কখনোয় সম্ভব নয়। তারা যদি এভাবে অস্ত্র হাতে নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে সেটি বলা মুশকিল। কেএনএফের প্রধান নাথাম বম আলোচনায় না আসলে কখনোই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কেএনএফ’র বিপদগামী সদস্যদের শান্তির পথে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা নতুন নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। তাই সেসব প্রস্তাবনা নিয়ে সামনে কেএনএফ সদস্যদের সাথে আলোচনা পথে এগিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। তবে রুমায় কেএনএফ সোনালী ব্যাংক ডাকাতির সময়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর লুট করে নেয়া ১৪টি অস্ত্র ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের সঙ্গে শান্তি কমিটির সকল আলোচনা বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শান্তি রক্ষা কমিটি।
ম্রো সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি রাংলাই ম্রো বলেন, চলমান সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের কারণে রুমায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা বাজার থেকে ৫ কেজি চাউল, ১কেজি লবণের চেয়ে বেশিকিছু কিনে নিতে পারছেনা। পাহাড়ের ভিতরে নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে। তাই রাষ্ট্রের সম্পদ পুলিশ ও আনসার বাহিনীর লুট করে নেয়া ১৪টি অস্ত্র অবিলম্বে সরকারী বাহিনীর কাছে ফেরত দিতে কেএনএফ’র প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত: গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি মসজিদে হামলা, টাকা-অস্ত্র লুট ও ব্যংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় কেএনএফ’র সঙ্গে জড়িত গ্রেফতারকৃত ৬৬ জনকে আদালতের নির্দেশনায় বান্দরবান কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।