আব্দুর রশিদ মানিক :
‘রাজকাঁকড়া’ নামেই রয়েছে এক রাজকীয় ভাব। রাজকীয় এই কাঁকড়ার রহস্যও বের করে এনেছে বিজ্ঞানীরা। প্রাণী বিজ্ঞানীদের কাছে বিস্ময়কর রাজকাঁকড়ার নীল রক্ত মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের জন্য অনেক মূল্যবান। ঔষধি গুণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। রাজ কাঁকড়ার এক গ্যালন নীল রক্তের দাম প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ৭২ লাখ টাকা। ৪৫০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে বাস করে আসছে প্রাণিটি। ডাইনোসরের চেয়েও প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল এই লিমুলাস। শুধুমাত্র নীল রক্ত দামী নয়, এটা দিয়ে তৈরি করা হয় ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ স্যুপ। যেটি খুবই উপকারী। উপরে শক্ত খোলস থেকেও কাইটোসিন নামে একটি উপাদান পাওয়া যায় যেটা বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
মূল্যবান ঔষুধিগুণ সমৃদ্ধ সামুদ্রিক প্রাণী রাজকাঁকড়া নিয়ে গবেষণা চালাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে একটি প্রাকৃতিক হ্যাচারি তৈরি করা হয়েছে। শুক্রবার (০৩ ফেব্রুয়ারী) সৈকতের রেজুখালের মোহনায় বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের(বোরি) বিজ্ঞানীরা বাঁশের ঘেরা দিয়ে ৪০ শতক জমিতে হ্যাচারিটি গড়ে তোলেন। এই হ্যাচারিতে প্রাথমিকভাবে ১১৯টি রাজকাঁকড়া অবমুক্ত করা হয়েছে। যেখানে সমুদ্র উপকূল থেকে সংগ্রহ করা ৭১টি পুরুষ ও ৪৮টি স্ত্রী লিঙ্গের রাজকাঁকড়া রয়েছে।
২০২১ সালের আগস্ট থেকে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা রাজকাঁকড়া নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। রাজকাঁকড়া সুনীল অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
রাজকাঁকড়া নিয়ে বোরির চলমান গবেষণা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ। তিনি বলেন, রাজকাঁকড়া সুনীল অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। এ লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম আরও এগিয়ে নিতে বোরি সংলগ্ন সৈকতেই হ্যাচারি করা হয়েছে।
রাজকাঁকড়ার এই গবেষণা কার্যক্রমের কারিগরি তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ভারতের কেএন কলেজ অব বেসিক সায়েন্সের সাবেক অধ্যক্ষ জৈব সমুদ্র বিজ্ঞানী ও রাজকাঁকড়া বিশেষজ্ঞ ড. গোবিন্দ চন্দ বিসওয়াল। তিনি বলেন, হ্যাচারীটি থেকে রাজ কাঁকড়া সম্পর্কে গবেষণা চালানো যাবে। জানা যাবে রাজ কাঁকড়ার আচরণ।
ড. গোবিন্দ চন্দ বিসওয়াল বলেন, বাংলাদেশে দুই জাতের রাজকাঁকড়া রয়েছে। এরমধ্যে মহেশখালীর ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে কার্সিনোকর্পিয়াস রোটোন্ডোকডার বিশাল ভান্ডার রয়েছে। প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে এখানে হাজার হাজার রাজকাঁকড়া ডিম পাড়তে আসে। এরপর সেই ডিম থেকে রেণু ফোটে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিপালিত হয়ে সমুদ্রে চলে যায়। রাজকাঁকড়ার রক্ত থেকে আমেরিকা, চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ অত্যন্ত দামী ওষুধ উৎপাদন করছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড,ইন্দোনেশিয়া,সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে এটি স্যুপ হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও রাজকাঁকড়া অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউট (বোরি)’র জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, রাজকাঁকড়া কাঁদাযুক্ত সৈকতেই বেশি পাওয়া যায়। এই হ্যাচারিটিও সে উপযোগী জায়গায় করা হয়েছে। সেখানে সমুদ্র উপকূল থেকে সংগ্রহ করা ৭১টি পুরুষ ও ৪৮টি স্ত্রী লিঙ্গের রাজকাঁকড়া অবমুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন,‘ ভারতের রাজকাঁকড়া বিশেষজ্ঞ ড.গোবিন্দ চন্দ বিসওয়ালের কারিগরি সহযোগিতায় ২০২১ সাল থেকে রাজকাঁকড়া নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এখন বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে কাজ করছে বিজ্ঞানীরা।