ঢাকা ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বড়ঘোপ বাজার কালী মন্দির পাড়ায় অগ্নিকান্ডে ৬ বসতঘর, ২ দোকান পুড়ে ছাই টেকনাফে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন: শাহ জাহান চৌধুরী ও সেলিনা সুলতানা নিশীতার ঐক্যের ডাক নারীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়নের চিন্তা করলে ভুল হবে: সেনাপ্রধান ভালো ফল করেও অনার্স শেষ হলোনা রামুর সেই উষা বড়ুয়ার রামুর আলেচিত টমটম চালক সোহেল হত্যা মামলার প্রধান আসামী গ্রেফতার ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে পুলিশ দেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্ত, শহুরে কর্মজীবীদের তিন-চতুর্থাংশই ভুক্তভোগী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ: প্রধান উপদেষ্টা আগামী ৫ দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল অধিদপ্তর মহেশখালী-কুতুবদিয়া সংসদীয় আসনের জন্য এনসিপি থেকে মনোনয়ন ফরম নিলেন এডভোকেট নাজমুস সাকিব বেঁচে থাকাটাই আনন্দের: বিদ্যা সিনহা মিম যেদিন সম্পদ ও সন্তান কোনো কাজে আসবে না উখিয়ার খালে মিলল নারীর বস্তাবন্দি ম’র’দে’হ, প’লা’তক স্বামী ‘চুমু’ নিয়ে প্রেমিকা শিপুর সাথে অভিমানে সৌরভের আ’ত্ম’হত্যা! – দাবী বন্ধুদের ‘লক্ষী আসন’ খ্যাত কক্সবাজার-৪ এ এনসিপির প্রার্থী হচ্ছেন ক্রীড়া সংগঠক হোসাইন

সন্দেহের এই যুগে সমাজে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার ৫ উপায়

  • টিটিএন ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০২:৫৩:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • 119

একটা সময় ছিল, যখন গ্রামের বাড়িগুলোর দরজা খোলা থাকত। প্রতিবেশীরা একে অপরের বাড়িতে যেত, গল্প করত, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিত। মুখে কথাই ছিল তখন অটুট প্রতিশ্রুতি, যেন একটা অলিখিত চুক্তি। এই ‘স্বাভাবিক বিশ্বাস’ সমাজকে চলতে সাহায্য করত। বিশ্বাস ছিল তখন সমাজ-ইঞ্জিনের জ্বালানি শক্তি।

কিন্তু সময় বদলেছে। শহর বড় হয়েছে, জীবন জটিল হয়েছে। মানুষের শরীর কাছাকাছি এলেও মনের দূরত্ব বেড়েছে। ছলনা আর ভাঙা প্রতিশ্রুতির গল্পে সেই বিশ্বাসের জাল ছিঁড়তে শুরু করেছে। আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে ‘সন্দেহের সংস্কৃতি’—যা কখনো কখনো যুক্তিসঙ্গত হলেও সমাজের গতিকে বারবার আটকে দেয়।

অতীতের জন্য শুধু আফসোস নয়, বরং সাহস নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। আমাদের সেই পুরনো ‘স্বাভাবিক বিশ্বাস’ থেকে এগিয়ে যেতে হবে ‘সচেতন বিশ্বাস’-এর দিকে।
তাহলে কী করব? অতীতের জন্য শুধু আফসোস নয়, বরং সাহস নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। আমাদের সেই পুরনো ‘স্বাভাবিক বিশ্বাস’ থেকে এগিয়ে যেতে হবে ‘সচেতন বিশ্বাস’-এর দিকে। এই নতুন বিশ্বাস হুট করে আসবে না। এটি আমাদের নিজেদের হাতে গড়তে হবে, সচেতনভাবে।

এর জন্য দরকার একটা নতুন সামাজিক চুক্তি—যার নিয়ম থাককে স্পষ্ট, নৈতিকভাবে স্বচ্ছ এবং আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গেও যার বিরোধ তাকবে না। এই চুক্তি শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, আমাদের সমষ্টিগত জীবনকেও নতুন জীবন দেবে।

এই নতুন বিশ্বাস গড়তে আমাদের দরকার একটা স্পষ্ট চুক্তি। এগুলো শুধু নিয়ম নয়, জীবনের নীতি, যা আমাদের দৈনন্দিন কাজে প্রতিফলিত হবে।

১. স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা: অস্পষ্টতা না থাকলে ভুল বোঝাবুঝি কমে আসবে। আমাদের সংস্কৃতিতে স্বচ্ছতার কথা বলতে অনেকে সংকোচ করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্বচ্ছতা একটা নৈতিক চুক্তির ভিত্তি। যে কাজে স্পষ্টতা নেই, তা ‘গারার’ বা অস্পষ্ট ঝুঁকি তৈরি করে। ইসলামি ফিকহে বলা হয়, এমন চুক্তি বৈধ নয়, কারণ এতে বিশ্বাস ভাঙার আশঙ্কা থাকে। (আল-সারাখসী, আল-মাবসুত, ১৫/৪৫, দার আল-মা’রিফাহ, বৈরুত, ১৯৯৩)

স্বচ্ছতা ছাড়া কোনো সম্পর্ক টেকে না।

তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭১৩৮
২. পরামর্শ করা: পরামর্শ মানে এখানে সবার সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করার অভ্যাস করা। সামাজিক কাজে সমাজের সবাইকে জড়িয়ে নেওয়া শুধু ভালো ব্যবস্থাপনা নয়, এটা কোরআনের শিক্ষাও বটে। কোরআনে বলা হয়েছে, “তাদের সঙ্গে তাদের বিষয়ে পরামর্শ কর।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)

এই পরামর্শের নীতি পরিবার থেকে রাষ্ট্র—সব জায়গায় প্রযোজ্য। এটা বিশ্বাসের জালকে আরও মজবুত করে।

৩. আমানত ও দায়িত্ব: নবীজি বলেছেন, “তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭১৩৮)

যিনি কোনো কাজের দায়িত্বে আছেন, তিনি শুধু বস নন, তিনি একজন আমানতদারও বটে—যার ওপর সমাজের সম্পদ, সময় আর স্বপ্নের দায়িত্ব রয়েছে। এই শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নেতৃত্ব মানে অন্যদের সেবার দায়িত্ব নেওয়া। অধস্তনদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করাও আমানত।

৪. খোঁজখবর নেওয়া ও সম্পর্ক রক্ষা: পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা মানে শুধু মিটিং করা নয়। মানুষের খোঁজ নেওয়া, তাদের সঙ্গে হৃদয়ের সংযোগ রাখা, বিয়েতে অভিনন্দন জানানো, কারও মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা—এগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। কোরআন বলে, “তোমরা নিকটাত্মীয়তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা কর।”
(সুরা নিসা, আয়াত: ১)

এই সংযোগ সমাজকে উষ্ণ রাখবে এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরিতে সহায়ক হবে।

৫. মর্যাদা রক্ষা করা: এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোরআনে বলা হয়েছে, “সুন্দর কথা ও ক্ষমা করা সেই দানের চেয়ে উত্তম, যার পরে কষ্ট দেওয়া হয়।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬৩)

কোনো কাজের ফল যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার ধরনও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। যিনি উপকার পাচ্ছেন, তার যেন কখনও অপমানিত বোধ না হয়, বরং তিনি নিয়েও যেন সম্মানিত বোধ করেন। এটা বিশ্বাসের ভিত মজবুত করবে।

কেউ হয়তো ভাবতে পারে, এই সন্দেহের যুগে বিশ্বাস গড়তে এত পরিশ্রম কেন করতে হবে? কেউ তো ভালো সেজে বিশ্বাসের অপব্যবহারও করতে পারে। হ্যাঁ, ঝুঁকি আছে। কিন্তু সচেতন বিশ্বাস মানে সরল মনে সব মেনে নেওয়া নয়। সেতু বানানোর মানে পাহারা দেওয়া বন্ধ করা নয়।

অন্ধ বিশ্বাস বা অন্ধ সন্দেহ দুইটাই ক্ষতিকর। আমাদের দরকার এমন দৃষ্টিভঙ্গি, যা বোঝে যে সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বিশ্বাসের সেতু গড়তে হবে।
তবে বিশ্বাসের ক্ষতির সঙ্গে সন্দেহের ক্ষতিটাও তুলনা করে দেখতে হবে। সন্দেহ শুধু সম্পর্ক ভাঙে তা নয়, কাজের গতি কমায়, নতুন উদ্যোগ মেরে ফেলে, আর অতিরিক্ত নিয়ম-কানুনের জটিলতায় সৃজনশীলতা হারায়।

সবচেয়ে বড় ক্ষতি? সন্দেহ আমাদের সমাজের গোষ্ঠীগত ঐক্যকে ধ্বংস করে। ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুন বলেছেন, এই ঐক্যই একটা জাতির আত্মা, যা তাকে শক্তিশালী রাখে। এই ঐক্য ছাড়া সমাজ ভেঙে পড়ে। (ইবন খালদুন, আল-মুকাদ্দিমা, ১/৯৮-৯৯, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন, ১৯৬৭)।

অন্ধ বিশ্বাস বা অন্ধ সন্দেহ দুইটাই ক্ষতিকর। আমাদের দরকার এমন দৃষ্টিভঙ্গি, যা বোঝে যে সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বিশ্বাসের সেতু গড়তে হবে। আমরা যে পাঁচটি স্তম্ভের কথা বললাম—স্বচ্ছতা, পরামর্শ, দায়িত্ব, সম্পর্ক, মর্যাদা—এগুলো শুধু বিশ্বাস গড়ার হাতিয়ার নয়, অপব্যবহারের ঝুঁকি কমানোর জন্যও সহায়ক।

সূত্র: প্রথম আলো

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

বড়ঘোপ বাজার কালী মন্দির পাড়ায় অগ্নিকান্ডে ৬ বসতঘর, ২ দোকান পুড়ে ছাই

This will close in 6 seconds

সন্দেহের এই যুগে সমাজে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার ৫ উপায়

আপডেট সময় : ০২:৫৩:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

একটা সময় ছিল, যখন গ্রামের বাড়িগুলোর দরজা খোলা থাকত। প্রতিবেশীরা একে অপরের বাড়িতে যেত, গল্প করত, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিত। মুখে কথাই ছিল তখন অটুট প্রতিশ্রুতি, যেন একটা অলিখিত চুক্তি। এই ‘স্বাভাবিক বিশ্বাস’ সমাজকে চলতে সাহায্য করত। বিশ্বাস ছিল তখন সমাজ-ইঞ্জিনের জ্বালানি শক্তি।

কিন্তু সময় বদলেছে। শহর বড় হয়েছে, জীবন জটিল হয়েছে। মানুষের শরীর কাছাকাছি এলেও মনের দূরত্ব বেড়েছে। ছলনা আর ভাঙা প্রতিশ্রুতির গল্পে সেই বিশ্বাসের জাল ছিঁড়তে শুরু করেছে। আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে ‘সন্দেহের সংস্কৃতি’—যা কখনো কখনো যুক্তিসঙ্গত হলেও সমাজের গতিকে বারবার আটকে দেয়।

অতীতের জন্য শুধু আফসোস নয়, বরং সাহস নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। আমাদের সেই পুরনো ‘স্বাভাবিক বিশ্বাস’ থেকে এগিয়ে যেতে হবে ‘সচেতন বিশ্বাস’-এর দিকে।
তাহলে কী করব? অতীতের জন্য শুধু আফসোস নয়, বরং সাহস নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। আমাদের সেই পুরনো ‘স্বাভাবিক বিশ্বাস’ থেকে এগিয়ে যেতে হবে ‘সচেতন বিশ্বাস’-এর দিকে। এই নতুন বিশ্বাস হুট করে আসবে না। এটি আমাদের নিজেদের হাতে গড়তে হবে, সচেতনভাবে।

এর জন্য দরকার একটা নতুন সামাজিক চুক্তি—যার নিয়ম থাককে স্পষ্ট, নৈতিকভাবে স্বচ্ছ এবং আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গেও যার বিরোধ তাকবে না। এই চুক্তি শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, আমাদের সমষ্টিগত জীবনকেও নতুন জীবন দেবে।

এই নতুন বিশ্বাস গড়তে আমাদের দরকার একটা স্পষ্ট চুক্তি। এগুলো শুধু নিয়ম নয়, জীবনের নীতি, যা আমাদের দৈনন্দিন কাজে প্রতিফলিত হবে।

১. স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা: অস্পষ্টতা না থাকলে ভুল বোঝাবুঝি কমে আসবে। আমাদের সংস্কৃতিতে স্বচ্ছতার কথা বলতে অনেকে সংকোচ করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্বচ্ছতা একটা নৈতিক চুক্তির ভিত্তি। যে কাজে স্পষ্টতা নেই, তা ‘গারার’ বা অস্পষ্ট ঝুঁকি তৈরি করে। ইসলামি ফিকহে বলা হয়, এমন চুক্তি বৈধ নয়, কারণ এতে বিশ্বাস ভাঙার আশঙ্কা থাকে। (আল-সারাখসী, আল-মাবসুত, ১৫/৪৫, দার আল-মা’রিফাহ, বৈরুত, ১৯৯৩)

স্বচ্ছতা ছাড়া কোনো সম্পর্ক টেকে না।

তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭১৩৮
২. পরামর্শ করা: পরামর্শ মানে এখানে সবার সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করার অভ্যাস করা। সামাজিক কাজে সমাজের সবাইকে জড়িয়ে নেওয়া শুধু ভালো ব্যবস্থাপনা নয়, এটা কোরআনের শিক্ষাও বটে। কোরআনে বলা হয়েছে, “তাদের সঙ্গে তাদের বিষয়ে পরামর্শ কর।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)

এই পরামর্শের নীতি পরিবার থেকে রাষ্ট্র—সব জায়গায় প্রযোজ্য। এটা বিশ্বাসের জালকে আরও মজবুত করে।

৩. আমানত ও দায়িত্ব: নবীজি বলেছেন, “তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭১৩৮)

যিনি কোনো কাজের দায়িত্বে আছেন, তিনি শুধু বস নন, তিনি একজন আমানতদারও বটে—যার ওপর সমাজের সম্পদ, সময় আর স্বপ্নের দায়িত্ব রয়েছে। এই শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নেতৃত্ব মানে অন্যদের সেবার দায়িত্ব নেওয়া। অধস্তনদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করাও আমানত।

৪. খোঁজখবর নেওয়া ও সম্পর্ক রক্ষা: পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা মানে শুধু মিটিং করা নয়। মানুষের খোঁজ নেওয়া, তাদের সঙ্গে হৃদয়ের সংযোগ রাখা, বিয়েতে অভিনন্দন জানানো, কারও মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা—এগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। কোরআন বলে, “তোমরা নিকটাত্মীয়তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা কর।”
(সুরা নিসা, আয়াত: ১)

এই সংযোগ সমাজকে উষ্ণ রাখবে এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরিতে সহায়ক হবে।

৫. মর্যাদা রক্ষা করা: এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোরআনে বলা হয়েছে, “সুন্দর কথা ও ক্ষমা করা সেই দানের চেয়ে উত্তম, যার পরে কষ্ট দেওয়া হয়।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬৩)

কোনো কাজের ফল যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার ধরনও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। যিনি উপকার পাচ্ছেন, তার যেন কখনও অপমানিত বোধ না হয়, বরং তিনি নিয়েও যেন সম্মানিত বোধ করেন। এটা বিশ্বাসের ভিত মজবুত করবে।

কেউ হয়তো ভাবতে পারে, এই সন্দেহের যুগে বিশ্বাস গড়তে এত পরিশ্রম কেন করতে হবে? কেউ তো ভালো সেজে বিশ্বাসের অপব্যবহারও করতে পারে। হ্যাঁ, ঝুঁকি আছে। কিন্তু সচেতন বিশ্বাস মানে সরল মনে সব মেনে নেওয়া নয়। সেতু বানানোর মানে পাহারা দেওয়া বন্ধ করা নয়।

অন্ধ বিশ্বাস বা অন্ধ সন্দেহ দুইটাই ক্ষতিকর। আমাদের দরকার এমন দৃষ্টিভঙ্গি, যা বোঝে যে সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বিশ্বাসের সেতু গড়তে হবে।
তবে বিশ্বাসের ক্ষতির সঙ্গে সন্দেহের ক্ষতিটাও তুলনা করে দেখতে হবে। সন্দেহ শুধু সম্পর্ক ভাঙে তা নয়, কাজের গতি কমায়, নতুন উদ্যোগ মেরে ফেলে, আর অতিরিক্ত নিয়ম-কানুনের জটিলতায় সৃজনশীলতা হারায়।

সবচেয়ে বড় ক্ষতি? সন্দেহ আমাদের সমাজের গোষ্ঠীগত ঐক্যকে ধ্বংস করে। ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুন বলেছেন, এই ঐক্যই একটা জাতির আত্মা, যা তাকে শক্তিশালী রাখে। এই ঐক্য ছাড়া সমাজ ভেঙে পড়ে। (ইবন খালদুন, আল-মুকাদ্দিমা, ১/৯৮-৯৯, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রিন্সটন, ১৯৬৭)।

অন্ধ বিশ্বাস বা অন্ধ সন্দেহ দুইটাই ক্ষতিকর। আমাদের দরকার এমন দৃষ্টিভঙ্গি, যা বোঝে যে সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বিশ্বাসের সেতু গড়তে হবে। আমরা যে পাঁচটি স্তম্ভের কথা বললাম—স্বচ্ছতা, পরামর্শ, দায়িত্ব, সম্পর্ক, মর্যাদা—এগুলো শুধু বিশ্বাস গড়ার হাতিয়ার নয়, অপব্যবহারের ঝুঁকি কমানোর জন্যও সহায়ক।

সূত্র: প্রথম আলো