নিজস্ব প্রতিবেদক
টেকনাফে ১৪ বছরের শিশুকে অস্ত্র মামলায় জেলে পাঠানো, সন্ত্রাস, অপহরণ, মাদক, মামলা-বাণিজ্য, এবং প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব উখিয়া-টেকনাফ (ডুসাট)’ এর শিক্ষার্থীরা আজ শনিবার বেলা তিনটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত করে।
মানববন্ধনে ডুসাটের সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন, সদস্য ফারজানা আক্তার আরজু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মিজানুর রহমান এবং ডুসাটের সাবেক সভাপতি মোর্তাজা হোসেন শাফি বক্তব্য রাখেন।
জয়নাল আবেদীন বলেন, “টেকনাফ থানা পুলিশ ১৪ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে অস্ত্র মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, শিশুটির বাবাকে না পেয়ে তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রশাসনের প্রতি সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং তদন্তের স্বার্থে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।”
জয়নাল আরও বলেন, “আমরা আর শেখ হাসিনার ওসি প্রদীপের যুগে ফিরে যেতে চাই না। আমরা উখিয়া ও টেকনাফের মানুষের নিরাপত্তা চাই। অতিসত্বর অপহরণ ও মাদক কারবারির সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। শামলাপুর-হোয়াইক্যং রোড সহ পাহাড়িয়া এলাকায় ২৪ ঘন্টা প্রশাসনের নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনি মোতায়েন করতে হবে।”
সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, উখিয়া -টেকনাফ প্রশাসনের মাধ্যমে বন্দুকযুদ্ধ নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও পাহাড়,বন , নদী, খাল ও সরকারি খাস জমি দখলকারীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। টেকনাফে নাফ নদীর জেলের সমস্যার সমাধান করতে হবে। সর্বোপরি টেকনাফ -উখিয়ার শিক্ষার হার কে বৃদ্ধি করে, শিক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানাচ্ছি।
ফারজানা আক্তার বলেন, “আমি ঢাকায় থাকলেও টেকনাফে আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত অপহরণ, সন্ত্রাস এবং নিপীড়নের আতঙ্কে থাকতে হয়। কারণ প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তার জন্য কাজ না করে বরং সিন্ডিকেট মেন্টেন করে এবং টেকনাফকে টাকা বানানোর একটি খনি হিসেবে গ্রহণ করে। নতুন বাংলাদেশে আমরাও টেকনাফের উন্নয়ন আশা করেছিলাম। কিন্তু ১৪ বছরের একজন শিশুকে অস্ত্র মামলায় জেলে পাঠানোর ঘটনায় আমরা আবারও পূর্বের দিনে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছি। আমরা দ্রুত এই ঘটনার বিচার চাই।”
মানববন্ধনে ঢাবি শিক্ষার্থীরা বলেন, টেকনাফে প্রশাসন মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছে। অপরাধ নির্মূলের পরিবর্তে প্রশাসন অপরাধীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। টেকনাফ প্রশাসনের কাছে অবৈধ উপার্জনের একটি খনি হয়ে উঠেছে। ফলে টেকনাফের সাধারণ মানুষের কাছে প্রশাসন আস্থা হারিয়েছে। বরং মানুষ প্রশাসনের প্রতি অনিরাপত্তাবোধ করছেন।
মানববন্ধনে ডুসাটের সদস্য নুসরাত দশটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো:
১. সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিকে অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করতে হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
২. টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তদন্তের স্বার্থে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. উখিয়া ও টেকনাফে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ডে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
৪. সন্ত্রাস, মাদক, অপহরণ এবং চাঁদাবাজি নির্মূলে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং একজন অফিসার এক বছরের বেশি যেন দায়িত্বে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. উখিয়া ও টেকনাফে পূর্বে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. উখিয়া ও টেকনাফের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
৮. প্রশাসনের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে দ্রুততম সময়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯. রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান করতে হবে।
১০. কাউন্সিলর একরামসহ বিচারবহির্ভূত সকল হত্যাকাণ্ডের তদন্তের উদ্যোগ নিতে হবে।
ঘটনার পটভূমি
গত ২৬ নভেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তারের অভিযোগ ওঠে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। আদালত ওই শিশুর জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাউসিফুল করিম রাফি (১৪) উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (২) রেজাউল করিমের ছেলে এবং হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় তার পিতাকেও আসামি করা হয়েছে।