যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় গুরুত্ববহ আন্তর্জাতিক সম্মেলন হলেও, সেখানে থাকছে না কোনো রোহিঙ্গা প্রতিনিধি। এনিয়ে রোহিঙ্গারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
রোহিঙ্গা নেতা ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, “আমাদের ছাড়া আমাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে। এটা তো নায়ক ছাড়া নাটক হয়ে গেলো!”
সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উপস্থিত না থাকার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশনের কাছে। সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিষয়। আমরা কেবল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করি।”
এদিকে সম্মেলনের তিন দিন আগে নিজেদের বার্তা বিশ্বের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয় শিবিরে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা।
শনিবার সকালে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ১৩ নম্বর ক্যাম্পের ফুটবল খেলার মাঠে ‘আওয়ার ফিউচার,আওয়ার ভয়েস-মেসেজ এহ্যাড অফ দ্যা ইউএন কনফারেন্স অন রোহিঙ্গা’ শিরোনামে এই আয়োজনে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে আসা হাজারো রোহিঙ্গা অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিশ্রুত ন্যায়বিচারের পাশাপাশি নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
বক্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ আট বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গারা কেবল মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, যা কোনোভাবেই টেকসই নয়।
রোহিঙ্গাদের ভোটে নির্বাচিত কমিউনিটি নেতা মাস্টার সৈয়দউল্লাহ বলেন, ‘আমরা আর কেবল প্রতিশ্রুতি শুনতে চাই না। আমাদের প্রকৃত চাওয়া হলো, গভীর নিরাপত্তা নিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে নিজ দেশে ফেরার সুযোগ। আমরা মিয়ানমারে নাগরিক অধিকার চাই, মর্যাদা নিয়ে বাঁচার সুযোগ চাই।’
তরুণ রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী কিন মং বলেন, ‘আমাদের প্রজন্ম শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যদি দ্রুত সমাধান না আসে, এই সংকট আরও ভয়াবহ হবে। তাই সম্মেলন থেকে অবশ্যই কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সমাবেশে রোহিঙ্গা অধিকার কর্মী মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, “আমরা চাই সম্মেলন যেন বাস্তবায়নযোগ্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করে। শুধু কথা নয়, বাস্তব পদক্ষেপের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা আবশ্যক। না হলে এই মানবিক বিপর্যয় আরও দীর্ঘায়িত হবে।”
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে কোনো যৌথ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ সদাপ্রস্তুত।’
এ লক্ষ্যে জাতিসংঘে বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন করার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আশা করি, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন বিশ্বব্যাপী দৃঢ় সংকল্প তৈরি করবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করবে, যেখানে তহবিল সংগ্রহ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।’
এর আগে সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে গত মাসের ২৪ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হাই রিপ্রেজেনটেটিভের দপ্তর যৌথভাবে আয়োজন করে ‘রোহিঙ্গা বিষয়ক অংশীজন সংলাপ’ ।