পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটক নিয়ন্ত্রণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পর্যটক ও অনুমোদিত নৌযান পরিচালনা তদারকিতে গঠিত হয়েছে একটি যৌথ কমিটি। এ কমিটির আওতায় সেন্ট মার্টিনে যেতে হলে নিবন্ধনসহ কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।
গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত আদেশে এই কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) কমিটির আহ্বায়ক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালককে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
*পর্যটকদের জন্য বাধ্যতামূলক ট্রাভেল পাস: পর্যটকরা সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তৈরি করা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ট্রাভেল পাস নিতে হবে। এই পাস ছাড়া কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিনের অনুমোদিত জাহাজে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেন্ট মার্টিনে পৌঁছানোর পর পর্যটকদের হোটেল সংক্রান্ত তথ্য রেজিস্টারে সংরক্ষণ করা হবে। সেই সঙ্গে এন্ট্রি পয়েন্ট ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে বিলবোর্ড স্থাপন করা হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণে কঠোর পদক্ষেপ:
পরিবেশ রক্ষায় সেন্ট মার্টিনে পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব পণ্য বহন করলে পর্যটকদের জাহাজে ওঠা নিষিদ্ধ করা হবে। পাশাপাশি দ্বীপে রাতের বেলায় আলো জ্বালানো, শব্দদূষণ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি আয়োজনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
পর্যটন নিয়ন্ত্রণে সীমিত সংখ্যা:
পরিপত্র অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা সেন্ট মার্টিনে দিনেই ফিরে আসবেন, রাত যাপন করতে পারবেন না। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পর্যটকদের রাত যাপনের অনুমতি থাকলেও, প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন।
নিরাপত্তা ও নৌপথ:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলির কারণে নাফ নদীতে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি থাকায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল এখনও শুরু হয়নি। টেকনাফের ইউএনও’র অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী বলেন, “নাফ নদীর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিকল্প নৌপথ খুঁজে বের করার কাজও চলছে।”
দ্বিধাবিভক্ত পর্যটন খাত:
সরকারের এই পদক্ষেপে পর্যটন খাতের বিনিয়োগকারীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ খান বলেন, “জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপের বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। কাঠের ট্রলার বা স্পিডবোটেও চলাচল করতে তাদের প্রশাসনের অনুমতি নিতে হচ্ছে।”
নতুন নিয়ম কার্যকরে কতটা সফলতা আসবে, তা নিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা যেমন আশাবাদী, তেমনই দ্বীপবাসী তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে শঙ্কিত।