ঢাকা ১০:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বিজ্ঞাপনী সংস্থা কক্স এ্যাড ও ফাহিম এ্যাড এর মালিক আবছার,হারুন ও জাহেদ এর বিরুদ্ব্যে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ রমজানে পণ্য মূল্যের কোন ব্যত্যয় হবে না- বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা পাসপোর্টে থাকছে না পুলিশ ভেরিফিকেশন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন কেন নয়: হাইকোর্টের রুল যুক্তরাজ্যের মানবাধিকারবিষয়ক রাষ্ট্রদূত ঘুরে দেখলেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করতে গভর্নরকে দুদকের চিঠি দেশে ক্যানসার চিকিৎসা এখনও অপ্রতুল শাবান মাসে নফল রোজা রাখবেন যেভাবে বিপিএলে যেমন খেলছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ স্কোয়াডের ১৫ তারকা ‘চট্টল সুরাঙ্গন’- এর অভিষেক অনুষ্ঠান যেন সংস্কৃতিপ্রেমীদের মিলনমেলা.. গানে-আনন্দে সত্যেন সেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর প্রীতি সম্মিলন সম্পন্ন মিয়ানমার সীমান্তে আবারো মাইন বিস্ফোরণ, যুবকের পা বিচ্ছিন্ন মহেশখালী প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন: সভাপতি-জয়নাল, সা: সম্পাদক-জিকু পরিবেশ অপরাধে জর্জরিত পালংখালী!  সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে প্রশাসনের নাভিশ্বাস কক্সবাজারে শতাধিক মন্ডপে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা..

মহেশখালীতে দিনে বালি পাচারের অভিযোগ: রাতে খননযন্ত্রসহ ট্রাক্টর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় কর্মরত দুজন ঠিকাদারের খননযন্ত্র ও ট্রাক্টর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

এর আগে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বেড়িবাঁধ এলাকা ও বালিয়াড়ি থেকে অবৈধভাবে বালি তোলার অভিযোগ ওঠে।

গতকাল (বুধবার) দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের নাছির মোহাম্মদ ডেইল এলাকার পশ্চিমে সাগরপাড়ে খননযন্ত্র ও ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেয়ার এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত তিনটি খননযন্ত্র ও মাটি বহনের কাজে ব্যবহৃত চারটি ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বালুভর্তি করার জন্য আনা অন্তত চার হাজার জিও ব্যাগ লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি দুর্বৃত্তরা মারধর করে ছয়জন পাহারাদারের কাছ থেকে ছয়টি মুঠোফোনের সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি অফিস ও একটি টাওয়ার নির্মাণের জন্য দুই মাস আগে কাজ পায় তাজ এন্টারপ্রাইজ ও জাহানারা ট্রেডার্স নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাজ এন্টারপ্রাইজের পাহারাদার নুর হোসাইন বলেন, প্রতিদিনের মতো গতকাল রাতে তিনিসহ তাঁর পাঁচ সহকর্মী বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্মাণকাজে পাহারা দিচ্ছিলেন। এর মধ্যে দিবাগত রাত তিনটার দিকে একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত তাঁদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা মারধর করে তাঁদের কাছ থেকে ছয়জনের মুঠোফোন সেট নিয়ে যায়। এ সময় তারা জ্বালানি তেল ঢেলে খননযন্ত্র ও ট্রাক্টরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া দুর্বৃত্তরা যাওয়ার সময় অন্তত চার হাজার খালি জিও ব্যাগ লুট করে নিয়ে যায়।

খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান মহেশখালীর মাতারবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত উপপরিদর্শক রাইটন দেব। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাইটন দেব বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আগুন দিয়ে দুর্বৃত্তরা তিনটি খননযন্ত্র ও তিনটি ট্রাক্টর পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা পাহারাদারদের মারধরও করেছে। এই ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তা বের করার চেষ্টা চলছে।’

এর আগে গতকাল দুপুরে ধলঘাটের শরইতলী এলাকার বেড়িবাঁধ ও বালিয়াড়ি থেকে বালি তুলে পাচারের অভিযোগ ওঠে ইউনিয়নটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আতাহার ইকবাল দাদুল ও ইউপি সদস্য, তাজ এন্টারপ্রাইজের সহকারী ঠিকাদার জমির উদ্দিনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে আতহার ইকবাল দাদুল বলেন, ‘বন্দরের কাজের জন্য ডাইক তৈরি করতে সাগরের বালিয়াড়ি থেকে বালি তোলা হয়েছে। এতে বুধবার বিকালে স্থানীয়রা বাঁধা দিলে বালি তোলা বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বালি তোলার কাজে জড়িত তাজ এন্টারপ্রাইজের সহকারী ঠিকাদার জমির উদ্দিনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি বালি তোলার কথা স্বীকার করেন। বালি তোলার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ কারো অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারো অনুমতি নেই। বন্দরের ডাইক তৈরির জন্য এইসব বালি তোলা হয়েছে, স্থানীয়রা বাঁধা দিলে এই বালি তোলা বন্ধ করা হয়।’

উভয়ের এই বক্তব্যের পরে রাতেই ঘটে খননযন্ত্র ও ট্রাক্টরে আগুন দেয়ার ঘটনা। স্থানীয়দের ধারণা, বালি তুলে পাচারের অভিযোগ ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে খননযন্ত্রে এই আগুন দেয়া হয়েছে।

তবে খননযন্ত্রে আগুন দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাজ এন্টারপ্রাইজের সহকারী ঠিকাদার ও ধলঘাট ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন বলেন, দুই মাস ধরে পাঁচটি খননযন্ত্র ও ছয়টি পাওয়ার ট্রাক্টর দিয়ে মাতারবাড়ি বন্দর কর্তৃপক্ষের অফিসের জন্য ডাইক (বাঁধ) ও টাওয়ার নির্মাণের কাজ চলছে। ডাইকের পাশে বসানো হচ্ছে জিও ব্যাগ ও ব্লক। কিন্তু নির্মাণকাজের শুরু থেকে স্থানীয় ধলঘাট ইউপি চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী লোকজন নানাভাবে কাজে বাঁধা ও হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এই ঘটনার পেছনে তাঁদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কাইছার হামিদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তা বের করার চেষ্টা চলছে।

সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবী স্থানীয়দের।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

বিজ্ঞাপনী সংস্থা কক্স এ্যাড ও ফাহিম এ্যাড এর মালিক আবছার,হারুন ও জাহেদ এর বিরুদ্ব্যে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ

This will close in 6 seconds

মহেশখালীতে দিনে বালি পাচারের অভিযোগ: রাতে খননযন্ত্রসহ ট্রাক্টর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

আপডেট সময় : ১০:০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় কর্মরত দুজন ঠিকাদারের খননযন্ত্র ও ট্রাক্টর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

এর আগে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বেড়িবাঁধ এলাকা ও বালিয়াড়ি থেকে অবৈধভাবে বালি তোলার অভিযোগ ওঠে।

গতকাল (বুধবার) দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের নাছির মোহাম্মদ ডেইল এলাকার পশ্চিমে সাগরপাড়ে খননযন্ত্র ও ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেয়ার এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত তিনটি খননযন্ত্র ও মাটি বহনের কাজে ব্যবহৃত চারটি ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বালুভর্তি করার জন্য আনা অন্তত চার হাজার জিও ব্যাগ লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি দুর্বৃত্তরা মারধর করে ছয়জন পাহারাদারের কাছ থেকে ছয়টি মুঠোফোনের সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি অফিস ও একটি টাওয়ার নির্মাণের জন্য দুই মাস আগে কাজ পায় তাজ এন্টারপ্রাইজ ও জাহানারা ট্রেডার্স নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাজ এন্টারপ্রাইজের পাহারাদার নুর হোসাইন বলেন, প্রতিদিনের মতো গতকাল রাতে তিনিসহ তাঁর পাঁচ সহকর্মী বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্মাণকাজে পাহারা দিচ্ছিলেন। এর মধ্যে দিবাগত রাত তিনটার দিকে একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত তাঁদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা মারধর করে তাঁদের কাছ থেকে ছয়জনের মুঠোফোন সেট নিয়ে যায়। এ সময় তারা জ্বালানি তেল ঢেলে খননযন্ত্র ও ট্রাক্টরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া দুর্বৃত্তরা যাওয়ার সময় অন্তত চার হাজার খালি জিও ব্যাগ লুট করে নিয়ে যায়।

খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান মহেশখালীর মাতারবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত উপপরিদর্শক রাইটন দেব। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাইটন দেব বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আগুন দিয়ে দুর্বৃত্তরা তিনটি খননযন্ত্র ও তিনটি ট্রাক্টর পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা পাহারাদারদের মারধরও করেছে। এই ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তা বের করার চেষ্টা চলছে।’

এর আগে গতকাল দুপুরে ধলঘাটের শরইতলী এলাকার বেড়িবাঁধ ও বালিয়াড়ি থেকে বালি তুলে পাচারের অভিযোগ ওঠে ইউনিয়নটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আতাহার ইকবাল দাদুল ও ইউপি সদস্য, তাজ এন্টারপ্রাইজের সহকারী ঠিকাদার জমির উদ্দিনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে আতহার ইকবাল দাদুল বলেন, ‘বন্দরের কাজের জন্য ডাইক তৈরি করতে সাগরের বালিয়াড়ি থেকে বালি তোলা হয়েছে। এতে বুধবার বিকালে স্থানীয়রা বাঁধা দিলে বালি তোলা বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বালি তোলার কাজে জড়িত তাজ এন্টারপ্রাইজের সহকারী ঠিকাদার জমির উদ্দিনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি বালি তোলার কথা স্বীকার করেন। বালি তোলার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ কারো অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারো অনুমতি নেই। বন্দরের ডাইক তৈরির জন্য এইসব বালি তোলা হয়েছে, স্থানীয়রা বাঁধা দিলে এই বালি তোলা বন্ধ করা হয়।’

উভয়ের এই বক্তব্যের পরে রাতেই ঘটে খননযন্ত্র ও ট্রাক্টরে আগুন দেয়ার ঘটনা। স্থানীয়দের ধারণা, বালি তুলে পাচারের অভিযোগ ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে খননযন্ত্রে এই আগুন দেয়া হয়েছে।

তবে খননযন্ত্রে আগুন দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাজ এন্টারপ্রাইজের সহকারী ঠিকাদার ও ধলঘাট ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন বলেন, দুই মাস ধরে পাঁচটি খননযন্ত্র ও ছয়টি পাওয়ার ট্রাক্টর দিয়ে মাতারবাড়ি বন্দর কর্তৃপক্ষের অফিসের জন্য ডাইক (বাঁধ) ও টাওয়ার নির্মাণের কাজ চলছে। ডাইকের পাশে বসানো হচ্ছে জিও ব্যাগ ও ব্লক। কিন্তু নির্মাণকাজের শুরু থেকে স্থানীয় ধলঘাট ইউপি চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী লোকজন নানাভাবে কাজে বাঁধা ও হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এই ঘটনার পেছনে তাঁদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কাইছার হামিদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তা বের করার চেষ্টা চলছে।

সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবী স্থানীয়দের।