Cloud based Animated Corporate presentation এ আমরা অনেক আগে থেকেই অভ্যস্ত, iPhone and Samsung এর নতুন series আসলে এভাবেই সাংবাদিকদের দেখানো হয়, এইটা বিপণনের কৌশল। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিপণনের কৌশল আমরা দেখলাম, এই সামিটে সরকার বিনিয়োগ করেছে বলে বড় LED display তে বিনিয়োগ পরবর্তী লাভের সম্ভাবনা গুলো দেখানো হয়েছে। যেহেতু বর্তমান বিডা প্রধান corporate guy সুতরাং তিনি সাবলীলভাবে উপস্থাপন করবেন এটাই স্বাভাবিক। আমরা এইরকম উদ্যোগ কে স্বাগত জানাই। তবে এইটা ঐতিহাসিক কিছু নই। বাংলাদেশের অনেক বড় বড় জায়ান্টরা আছেন যারা corporate presentation এ অনেক ভালো করছেন যেমন Eastern Bank PLC. এর ডিএমডি জনাব খোরশেদ আনোয়ার ও আরো নাম না জানা অনেকের presentation আমরা দেখেছি । সরকারি presentation এর সাথে বেসরকারি presentation এর মূল পার্থক্য হচ্ছে এক পক্ষ branding কে গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণা চালায় আর, আর এক পক্ষ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফলে প্রবৃদ্ধি অর্জনে কাজ করার কথা বলে।
FDI (foreign direct investment) এর প্রধাণ আকর্ষণ corporate presentation নয়, দক্ষ জনশক্তি, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, দীর্ঘমেয়াদি পলিসি ও লভ্যাংশ ফেরতের সহজ আইন। অন্যথায় FDI আশা করা যেতে পারে তবে ঐ পথ অনেক বন্ধুর।
ধরুন আপনার কাছে ১ লাখ টাকা রয়েছে, আপনি ভাবছেন এই টাকাটা কি করবেন। প্রথমে ভাবলেন ছোট খাটো বিনিয়োগ করবেন, বাড়ির আপনজনের সাথে আলাপ করলেন কিন্তু আপনি উৎসাহ পাবেন না। সবাই বলবে এই টাকা বিনিয়োগ করলে লাভ তো দূরের কথা মূল বিনিয়োগও ফেরত আসবে না, বলবে দেশের পরিবেশ ভালো না, এখানকার মানুষ ভালো না বিভিন্ন কথা। শেষে বিনিয়োগকারী demotivated হয়ে বলবে তাহলে টাকা টা ব্যাংক এ রাখি। এবার শুরু হবে কোন ব্যাংক এ রাখবো, কোন ব্যাংক কত সুদ দিচ্ছে, কোন ব্যাংক ভালো, কোন ব্যাংক বাড়ির পাশে এবং পরিচিত আত্মীয়-স্বজন কোন ব্যাংক এ রেখেছে তা দেখবেন তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন। এভাবেই ১ লাখ টাকার সঞ্চয় বিনিয়োগে না গিয়ে ব্যাংক এ যাচ্ছে। ফলে ব্যাংক এ তারল্য বৃদ্ধি দ্রুত হচ্ছে, ফলে ব্যাংক সুদ কমিয়ে দিচ্ছে এবং ঋণ বিতরণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে কনজুমার ঋণ বিতরণের ফলে মানুষ অপ্রয়োজনে কেনাকাটা করছেন যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং মূল কারণ ঐ ১ লাখ টাকা বাজারে বিনিয়োগ করতে না পারায়। যদি স্থানীয় বাজারে ওই বিনিয়োগ হতো তাহলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেত ও মুদ্রাস্ফীতি কম তো।
ঠিক এভাবেই একজন বিদেশী বিনিয়োগকারী অন্য দেশে গিয়ে বিনিয়োগ করার আগে এই গুলো ভাববে। হয়তো দেশীয় ১ লাখ বিনিয়োগকারীর মতো নয়, অন্যভাবে। উদাহরণস্বরূপ প্রথমে দেশের রেটিং দেখবে মুডি’স এ, পার্শ্ববর্তী দেশে সমন্ধে জানবে, তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দেখবে, নিরাপত্তা দেখবে হোস্ট দেশের, দক্ষ জনশক্তি সমন্ধে জানবে, বেতন কাঠামো সমন্ধে জানবে, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সমন্ধে জানবে, পলিসি জানবে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমন্ধে জানবে, ব্যাংকিং ব্যবস্থা সমন্ধে জানবে, যারা আগে বিনিয়োগ করেছে তাদের সাথে যোগাযোগ করবে, সরকার ব্যবস্থা সমন্ধে জানবে, স্থানীয় রাজনীতি সমন্ধে জানবে, যেখানে বিনিয়োগ করবে সেই স্থানের লোকাল কনটেস্ট জানবে ও আরো অনেকে কিছু ভেবে হয়তো বিনিয়োগ করবে।
যেখানে স্থানীয় নাগরিক হয়ে আপনি ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে ভয় পেলেন অথবা পারলেন না বিভিন্ন কারণে। সেখানে ভিনদেশী একটি কোম্পানি কতটুকু প্রস্তুত এখানে বিনিয়োগ করতে? বিনিয়োগ সামিট নয় দরকার নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সকল প্রশ্নের জবাব, যা অবশ্যই পজিটিভ হতে হবে অন্যথায় দেশে আদো বিনিয়োগ আনা যাবে না।
শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক
লেখক ও গবেষক