দীর্ঘ ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ১২ জুন ভোরে মোহাম্মদ মঞ্জুর মাঝি ২২ জন জেলেকে নিয়ে গভীর সমুদ্রে যান। প্রায় ১৫ দিনের মাছ ধরার জন্য প্রয়োজনীয় তেল ও খাদ্য সরবরাহে প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচ করেন তারা।
কিন্তু সমুদ্রের উত্তাল অবস্থার কারণে মাত্র তিন দিনের মাথায় তাদের ট্রলার ফিরিয়ে আনতে হয় কক্সবাজার ফিশারিঘাটে।
“ঢেউ এতটাই প্রবল ছিল, আমাদের ট্রলার প্রায় উল্টে যাচ্ছিল। ওই ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল না,” বলেন সদর উপজেলার খুরুশকুলের বাসিন্দা মঞ্জুর।
মঞ্জুর জানান, তারা মোটামুটি ২ লাখ টাকার লইট্টা মাছ ধরতে পেরেছেন, অর্থাৎ ৬ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে এই ট্রিপে।
তিনি জানান, কিছু সামুদ্রিক মাছ পেলেও, ইলিশ প্রায়ই মেলেনি।
কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন বলেন, “নিষেধাজ্ঞা উঠার পর যে ট্রলারগুলো সমুদ্রে গিয়েছিল, প্রায় সবগুলোই খালি হাতে বা সামান্য মাছ নিয়ে ফিরে এসেছে। শুধু কিছু ছোট নৌকা উপকূল ঘেঁষে এখনও মাছ ধরছে।”
তিনি আরও জানান, দেশে প্রায় ২৯,৩৫৮টি ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা সমুদ্রে মাছ ধরার কাজে যুক্ত, যার মধ্যে কক্সবাজারেই রয়েছে প্রায় ৫ হাজার।
“১২ জুন নিষেধাজ্ঞা উঠার পর কক্সবাজার থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ ট্রলার সমুদ্রে যায়, কিন্তু প্রায় সবাইকেই ফিরতে হয়েছে। প্রত্যেক ট্রলার সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকার মাছ ধরেছে,” বলেন দিলওয়ার।
তিনি আরও বলেন, “ইলিশের সরবরাহ খুব কম। প্রতিটি ট্রলার ১০০টিরও কম ইলিশ ধরেছে। আজ বাংলা মাস আশারের শুরু, যা আমরা প্রাকৃতিক নিষেধাজ্ঞার সময় হিসেবে দেখি। তাই হয়তো আমাদের এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। তখনও ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।”
নুনিয়ারছড়ার জেলে আব্দুর রহিম বলেন, “গত দুই মাস ধরে কোনো কাজ নেই। এই আবহাওয়া চলতে থাকলে আমাদের জীবন চালানো কঠিন হয়ে যাবে।”
টেকনাফের মিস্ত্রিপাড়াঘাটের সভাপতি মোহাম্মদ হাসান বলেন, “আমাদের ঘাটের ৪১টি মাছধরা ট্রলারই খালি হাতে ফিরে এসেছে। এপ্রিল থেকে জুন আমাদের প্রধান মাছ ধরার মৌসুম। এই সময় নিষেধাজ্ঞা দিলে আমাদের জীবিকা বিপর্যস্ত হয়।”
কক্সবাজার ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারের সহকারী হিসাব কর্মকর্তা অশীষ কুমার বৈদ্য জানান, ১২ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত প্রায় ৪৮ টন মাছ (এর মধ্যে ৪ টন ইলিশ) উপকূলে নামানো হয়েছে, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৪২ লাখ টাকা এবং এই সময়ে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ৪৬ হাজার টাকা।
তিনি জানান, কাঠের তৈরি নৌকাগুলোর সাধারণত ৪৫-৫০ টন মাছ ধরার সক্ষমতা রয়েছে।
সাম্প্রতিক দুই বছরে বঙ্গোপসাগরে মাছের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে, যা উদ্বেগজনক, কারণ সামুদ্রিক মাছ দেশে বার্ষিক মোট প্রোটিন উৎপাদনের প্রায় ১৩ শতাংশ জোগান দেয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বঙ্গোপসাগর থেকে ধরা হয়েছে ৬,২৮,৬২২ টন মাছ—গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ট্রলার ধরেছে ১,১৪,৮০৪ টন এবং ছোট কাঠের নৌকা ধরেছে ৫,১৩,৮১৮ টন।